সাবেক সেনা কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কর্নেল হাসিনুর রহমান। তিনি দুই দফায় গুম হন। প্রথমবার ২০১১ সালে, দ্বিতীয়বার ২০১৮ সালের ৮ আগস্ট। শেষ দফায় এক বছর ছয় মাস ১৪ দিন গুম ছিলেন। তিনি সেনাবাহিনী, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) ও বিজিবিতে দায়িত্ব পালন করেছেন। সাহসিকতার জন্য তিনি বীরপ্রতীক, বিপিএম ও বাংলাদেশ রাইফেল- এ তিনটি রাষ্ট্রীয় খেতাব লাভ করেন।
Advertisement
অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত গুম কমিশনে আবেদন করেছেন হাসিনুর রহমান। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালেও অভিযোগ দায়ের করেছেন। এছাড়া গুমের জন্য তিনি মামলা রুজু করারও প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
সম্প্রতি জজ মিয়া ইস্যু, জঙ্গি অভিযান, আয়নাঘর ও কারাগারে থাকা এবং র্যাবে কাজ করার অভিজ্ঞতাসহ বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু নিয়ে জাগো নিউজের সঙ্গে কথা বলেন। দুই পর্বের সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক তৌহিদুজ্জামান তন্ময়। আজ থাকছে প্রথম পর্ব।
জাগো নিউজ: আপনি কেন গুম হলেন?
Advertisement
হাসিনুর রহমান: গুমের ব্যাখ্যা হলো আপনি আমাকে ইচ্ছার বিরুদ্ধে অজানা জায়গায় নিয়ে যাবেন। যেখানে পরিবার, আত্মীয়-স্বজন জানবে না কোথায় আছি, অজানা পরিবেশ। প্রথমবার আমাকে ৪৩ দিন গুম করে রাখা হয়েছিল। ফ্লোরে হ্যান্ডকাপ লাগানো, চোখ বাঁধা ছিল। পরে আমাকে জেলে পাঠানো হয়। জেলে পাঠানোর প্রধান কারণ আমি র্যাবে ছিলাম। ২০০৯ সালে র্যাবে থাকতে দেখেছি ওই নির্বাচন (নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন) ছিল সেটআপ করা। ২০০৮ সালে আমাকে বলা হয়েছিল এখন থেকে আওয়ামী লীগকে সুবিধা দিতে হবে। সেটাতে আমি রাজি হইনি। ‘র’ আমার সঙ্গে কাজ করার জন্য বহুবার চেষ্টা করে। কিন্তু তারা পারেনি। এরপরই ওরা টার্গেট করে, আমাকে ধরলে ওদের সমস্যা সহজ হয়ে যাবে। না হলে কঠিন হবে।
আমি তার লাঠিয়াল। জাফর চেয়ারম্যানের কাছে প্রশ্ন করি- ‘ফজলে করিম অস্ত্র কোথায় পায়? তখন জাফর বলেন, ‘ফজলে করিম আমাকে কম করে এক ডজন একে-৪৭ এবং একটি এলএমজি দিয়েছে…
জাগো নিউজ: আপনি পার্শ্ববর্তী দেশবিরোধী- এমনটি সব সময় বলা হয়েছে। আসলেই কি তাই?
হাসিনুর রহমান: বাস্তবতা হলো আমাদের পাহাড়ে যেসব ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী আছে তাদের বারবার উত্তপ্ত করে ভারত। অস্ত্র, প্রশিক্ষণ, গোলাবারুদ দিয়ে সহায়তা করে। সেনাবাহিনী, আনসার, পুলিশ সাধারণ বাঙালি প্রচুর মারা যায়। এ কারণে আমরা অনেক অফিসার ভারতবিরোধী।
Advertisement
জাগো নিউজ: আপনাকে র্যাব থেকে সরানোর পেছনে কারণ কী?
হাসিনুর রহমান: ২০০৮ সালের শেষে চট্টগ্রামের রাউজানের এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরী (তখনও এমপি হননি) তার একটি অপ্রীতিকর আবদার নিয়ে আমার কাছে আসেন। সেটা হলো- ‘ক্রসফায়ার করতে হবে একজন ইউপি চেয়ারম্যানকে।’ তার নাম জাফর। আমি তখন জাফরকে গ্রেফতার করি। কিন্তু ফজলে করিমের দাবি- জাফরকে ক্রসফায়ার দিতে হবে। তখনও ফজলে করিম ক্ষমতায় আসেননি।
আরও পড়ুন
গুমের ঘটনায় ভারতের সম্পৃক্ততা খুঁজে পেয়েছে কমিশন সাবেক সেনাপ্রধানসহ তিন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গুম কমিশনে অভিযোগ হাসিনার আমলে গুম ২০০ লোকের খোঁজ মেলেনি: তদন্ত কমিশন গর্ভবতী-সন্তানসহ নারীরাও গুমের শিকার হয়েছিলেনচেয়ারম্যান জাফর আমাকে তখন বলেছিলেন- আমি জানি ফজলে করিম আমাকে ধরিয়েছেন। কারণ আমার আপন এক আত্মীয়কে গুলি করে হত্যা করতে বলেছে, যা আমি করছি না। এ কারণে ফজলে করিম আমাকে র্যাব দিয়ে ধরিয়েছে। আমি তার লাঠিয়াল। জাফর চেয়ারম্যানের কাছে প্রশ্ন করি- ‘ফজলে করিম অস্ত্র কোথায় পান? তখন জাফর বলেন, ‘ফজলে করিম আমাকে কম করে এক ডজন একে-৪৭ এবং একটি এলএমজি দিয়েছেন।’
তখন আমি চেয়ারম্যানকে কারাগারে দিই এবং অস্ত্রগুলো উদ্ধারের চেষ্টা করি। এটা কোনোভাবে জেনে যান ফজলে করিম। তখন তিনি দেখছেন- আমি অস্ত্রগুলো উদ্ধার করলে তার নির্বাচনে সমস্যা হবে। এরপরেই আমাকে র্যাব থেকে বদলি করে দেওয়া হয়।
জাগো নিউজ: এরপর কী হলো?
হাসিনুর রহমান: আমি র্যাব থেকে বদলি হয়ে ময়মনসিংহ নিজ বাহিনীতে চলে যাই। এরপর বিডিআর হত্যাযজ্ঞ হয়। তখন এই ঘটনা নিয়ে বেশ সরব ছিলাম। এটাতে আওয়ামী লীগ পুরোপুরি প্ল্যানে জড়িত। এরপর র্যাব যেটা করার কথা, তারা ঠিকমতো দায়িত্ব পালন করেনি। তবে র্যাবকে দায়িত্ব পালন করতে দেওয়া হয়নি। এটা ছিল খুব দুঃখজনক। তখন আমাদের ৫৭ জন অফিসার হারিয়েছি। তখন অনেক অফিসার ক্ষিপ্ত হন। এসব অফিসারের মধ্যে কাউকে তাপস হত্যাচেষ্টার মামলায় জড়ানো হয়েছে। নিরীহদের কষ্ট দেওয়া হয়। এগুলো করা হয়েছে হাসিনার ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করার জন্য। অনৈতিক সব চর্চা তার ক্ষমতার সময় করা হয়েছে। ভারতকে খুশি ও সেনাবাহিনীর কোমর ভেঙে দেওয়ার পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ছিলেন ফজলে নূর তাপস, জাহাঙ্গীর কবির নানক, মির্জা আজমসহ অনেকে।
খালেদা জিয়াকে ক্যান্টনমেন্টের বাড়ি থেকে বের করা হলো। তবে সেটা আস্তে-ধীরে যাওয়া উচিত ছিল। কারণ তখন একটা রক্তক্ষরণ (বিডিআর বিদ্রোহ) করেছেন, সেটা শুকায়নি। এর মধ্যে অনেক সেনা অফিসারের চাকরি নেই। তারপর আবার খালেদা জিয়াকে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হলো।
জাগো নিউজ: ২০১১ সালে কী ঘটেছিল আপনার সঙ্গে?
হাসিনুর রহমান: তখনকার ক্ষমতাসীনরা মনে করেছিল আমি ‘ক্যু’ করছি। ২০১১ সালের ৯ জুলাই আমি অফিস করছি, তখন আমাকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। তারা দেখতো আমি ময়মনসিংহ বসে কথা বলি নাইক্ষ্যংছড়ি। সেখান থেকে কথা হয় বিভিন্ন দেশে। তার মানে দলবল নিয়ে বিশাল পরিকল্পনা করছে। আসলে আমার কাজের মেয়েটা ছিল পাহাড়ি। ওর তখন বিয়ের কথা চলছিল। সেই মূলত আমাদের মোবাইল দিয়ে হবু স্বামী বা পরিবারের সঙ্গে কথা বলতো। ভুল তথ্যের ভিত্তিতে আমাকে জেল দেয়। আমাকে ফাঁসাতে দুজন লোককে জোরপূর্বক সাক্ষী বানানো হয়। একজনকে দুই মাস ২৩ দিন, আরেকজনকে সাত মাস ১৫ দিন জিম্মি রেখে সাক্ষ্য দেওয়ানো হয়। তাদের মধ্যে একজন গুম কমিশনে অভিযোগ দিয়েছেন।
যেখানে আমাকে নেওয়া হয়েছিল সেখানে প্রায় ২০ জনের বেশি লোক ছিল। প্রতি রুমে একজন করে লোক বন্দি ছিল। প্রতিটা রুম ২৪ ঘণ্টা অন্ধকার, সব সময় লাইট জ্বলে। অত্যধিক মশা, তবে তিন বেলা খাবার ঠিক ছিল…
জাগো নিউজ: কারাগার থেকে বেরিয়ে আসার পর কীভাবে চলতেন?
হাসিনুর রহমান: প্রথমবার কারাগার থেকে বেরিয়ে ফেসবুকে খুব অ্যাক্টিভ হলাম। আমরা যারা অ্যাক্টিভ ছিলাম মোটামুটি তাদের প্রায় সবাইকে গুম করা হয়। কূটনৈতিক মারুফ জামান, চৌধুরী ইকবাল হোসেন, আমি এবং আনিস নামে আরও একজনকে গুম করা হয়েছিল। আমার মেয়েকে এসএসসি পরীক্ষা দেওয়ার জন্য ক্যান্টনমেন্ট স্কুলে আবেদন করি। কিন্তু আমাকে ভর্তি করতে দেওয়া হয়নি। মিরপুর-১৩ নম্বরে চাকমাদের একটি স্কুল থেকে মেয়ে এসএসসি দেয়। আমার ব্যাংকে টাকা ছিল, লোন ছিল, শেয়ার ব্যবসা ছিল। সেই শেয়ার বিক্রি করলে লস না লাভই হতো কিন্তু সেই শেয়ারও বিক্রি করতে দেওয়া হয়নি।
জাগো নিউজ: ২০১৮ সালে কীভাবে মনে হলো গুম হতে যাচ্ছেন?
হাসিনুর রহমান: ২০১৮ সালের ৮ আগস্ট রাতে বন্ধুর বাসা থেকে আমার মিরপুর ডিওএইচএস এলাকার বাসার নিচে এসে দেখি অনেক লোকজন। রাতে এত লোক এখানে থাকার কথা না। আমার কাছে পিস্তল ছিল। এসময় সবাইকে আত্মসমর্পণ করায়। অনেকে পালিয়েও যান। হঠাৎ পেছন থেকে একজন আমাকে লাথি মারে। আমি কয়েক সেকেন্ডের জন্য অজ্ঞান হয়ে যাই। ওই সময় হাত থেকে পিস্তলটা পড়ে যায়। তারা আমাকে গাড়িতে তুলে নিয়ে যায় আর ঘটনাস্থলে পিস্তলটা পড়ে থাকে।
আমাকে তুলে নিয়ে ব্যাপক মারধর করা হয়। এরপর একটি অন্ধকার সেলে ঢোকানো হয়। গাড়ির দূরত্ব দেখে অনুমান করি এটা কচুক্ষেত অথবা পোস্ট অফিসের আশপাশে হবে। সেখানে এক বছর ছয় মাস ১৪ দিন ছিলাম। যেখানে আমাকে নেওয়া হয়েছিল সেখানে প্রায় ২০ জনের বেশি লোক ছিল। প্রতি রুমে একজন করে লোক বন্দি ছিল। প্রতিটা রুম ২৪ ঘণ্টা অন্ধকার, সব সময় লাইট জ্বলে। অত্যধিক মশা, তবে তিন বেলা খাবার ঠিক ছিল। ডাক্তারও ছিল সেখানে। কিন্তু কোনো রাতে চিৎকার-চেঁচামেচি, কান্নাকাটি, ভয় আতঙ্কে ঘুম হতো না। বীভৎস এক পরিস্থিতি। সেলের লোহার দরজাগুলো যখন খুলতো তখন প্রতিটা মানুষ ভয়ে কাঁপতো। এই বুঝি আমাকে নিয়ে গেলো...। আমি গুম থাকা অবস্থায় হাঙ্গার স্ট্রাইক (অনশন) করি। তাদের কাছে জানতে চাই- কেন আমাকে আনা হলো। কিন্তু সঠিক কোনো কারণ বলতে পারেনি।
জাগো নিউজ: গুম অবস্থায় এমন কোনো স্মৃতি আছে যা বলবেন?
হাসিনুর রহমান: আমাদের যেখানে বন্দি রাখা হয়েছিল সেখানে দুজন করে পাহারায় থাকতো। আমি নিজে বাঁচার জন্য, কাউকে আক্রমণ করার জন্য সব ধরনের ইক্যুইপমেন্ট (সরঞ্জাম) ছিল। কিন্তু দুজনকে একসঙ্গে পাচ্ছিলাম না। প্রায় দিন বিদ্যুৎ চলে গেলে এক মিনিটের মতো লাগতো জেনারেটর চালু করতে। আমি ফ্লোরের ময়লা তুলে সেলের সিসি ক্যামেরায় লাগিয়ে দিতাম।
একসময় ক্যামেরা বাতিল হওয়ার মতো অবস্থা। তখন খাটের একটি পার্ট খুলে পেরেকসহ বের করে রাখি। যাতে পাহারায় থাকা একজনকে মারতে পারি। আবার বাথরুমে সিজার (কাঁচি) ব্যবহার করার জন্য দেয়। ভাবতাম একজনকে মেরে দিই। এ কারণে স্যান্ডেলের মধ্যে ঢুকিয়ে রাখতাম। কিন্তু কখনও দুজনকে একসঙ্গে পাইনি। তাদের মারার চিন্তা আসতো। কারণ এমনি জানতাম এখানে বন্দি থেকে মরতে হবে। তাই চেষ্টা করতাম বের হতে পারি কি না। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর হয়নি।
জাগো নিউজ: বন্দি অবস্থায় পরিচিত কারও সঙ্গে দেখা হয়েছিল?
হাসিনুর রহমান: হঠাৎ একদিন বাথরুম থেকে বেরোনোর সময় আযমী স্যারকে (সাবেক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবদুল্লাহিল আমান আযমী) দেখে ফেলি। স্যার আমাকে চিনতে না পারলেও আমি ওনাকে চিনে ফেলি। তখন শীতকাল। আযমী স্যার থাকতেন পুরাতন কমপ্লেক্সে, আর আমি থাকতাম নতুন কমপ্লেক্সে। এখানকার সব বাথরুমে হাই-কমোড। তবে এখানে থাকা খুব কষ্ট, কারণ হাইট (উচ্চতা) খুব কম এবং গরম। আযমী স্যারকে বাথরুমের জন্য নতুন কমপ্লেক্সে আনা হতো। কারণ সেখানকার বাথরুমে সব লো-কমোড। আমাকে বাথরুম থেকে বের করার সময় আযমী স্যারকে ঢোকানো হচ্ছিল। তখন থেকেই মাথায় ঘুরতে থাকে স্যার কোথায় থাকেন।
ওই যে ক্যামেরা নষ্ট করেছিলাম সেই ক্যামেরা ঠিক করানোর জন্য একদিন লোক আনা হয়। আমাকেও রুম থেকে সরানো হয়। তবে ওখানকার যে দশটা রুম সব রুমে মানুষ আছে। তখন সাময়িকভাবে আমাকে পুরাতন রুমের একটি কক্ষে নেওয়া হয়। বোঝা যাচ্ছিল ওই রুমেও লোক ছিল। বন্দি অবস্থায় বাথরুমে যাওয়ার সময় আমি তিনজনকে চিনেছি। তাদের মধ্যে রয়েছেন- সাবেক রাষ্ট্রদূত মারুফ জামান, মুক্তিযোদ্ধা ইকবাল চৌধুরী আর আযমী স্যার।
জাগো নিউজ: বের হওয়ার পর কী করলেন?
হাসিনুর রহমান: বের হওয়ার পর বাসায় থাকি। এভাবেই সময় কেটে যায়। আমি মেজর (অব.) দেলোয়ারের সঙ্গে যোগাযোগ করলাম। মেজর দেলোয়ার আমার ইউনিট অফিসার। তাকে বললাম ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আযমী স্যারকে দেখেছি, তাকে বের করা দরকার, তুমি আমাকে দুজন লোক দাও। এরমধ্যে ডিজিএফআই জেনে গেলো আমি আযমী স্যারকে বের করার জন্য কাজ করছি। এরপর আমার বিরুদ্ধে ১০-১২টি আইসিটি আইনে মামলা হয়। এর আগে জঙ্গি মামলা দিয়ে রাখা হয়েছিল আমার বিরুদ্ধে।
তখন খাটের একটি পার্ট খুলে পেরেকসহ বের করে রাখি, যাতে পাহারায় থাকা একজনকে মারতে পারি। আবার বাথরুমে সিজার (কাঁচি) ব্যবহার করার জন্য দেয়। ভাবতাম একজনকে মেরে দিই। এ কারণে স্যান্ডেলের মধ্যে ঢুকিয়ে রাখতাম…
জাগো নিউজ: ৫ আগস্টের আগে ও পরে আপনার ভূমিকা কী ছিল?
হাসিনুর রহমান: আবু সাঈদ মারা যাওয়ার পরে আমি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ঘোরাফেরা করতাম। ৫ আগস্ট পর্যন্ত আমরা মাঠে ছিলাম। ওইদিন বিকেল ৫টার দিকে ফেসবুকে লাইভ করি। আযমী স্যারকে ছাড়ার শর্ত দিয়ে সময় দিলাম তিন ঘণ্টা। তখন মনে করলাম আমার কথায় হবে না, ব্রিগেডিয়ার হাসান নাসির স্যারের কাছে যাই। তাকে দিয়ে ৬টায় লাইভ করাই দুই ঘণ্টা সময় দিয়ে। তারপর রাত ৮টার সময় আমরা কচুক্ষেতে বসে পড়ি। আমি জানতাম আইনজীবী ব্যারিস্টার আরমান আছে, তবে ইউপিডিএফের সংগঠক মাইকেল চাকমা আছে কি না জানতাম না। এরপর রাত ১২টা-১টা বেজে যায়, সমঝোতার পর কথাবার্তা হয়। এটা আবু সাঈদের সফলতা আর কারও না। ছাত্রসমাজ শিখিয়েছে কীভাবে আন্দোলন করতে হয়।
জাগো নিউজ: র্যাবে দায়িত্ব পালনের সময় জঙ্গি অভিযানের অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?
হাসিনুর রহমান: আমি যখন র্যাবে যাই তখন জেএমবি নিয়ে হায়-হতাশায় পড়ে যাই। দাঁড়াতেই পারিনি জেএমবির যন্ত্রণায়। সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর আমাকে বলেছিলেন, ‘হাসিন ভাই আমাদের বাঁচান।’ তখন চট্টগ্রামে আমার পোস্টিং। এরপর মাথা গরম করে ফোন দিলাম কর্নেল গুলজারকে। তাকে চট্টগ্রাম গেটের কাছে ডাকলাম। এরপর দেখি চট্টগ্রাম গেটের কাছে পানির ট্যাংকির গলির একটি বাড়িতে রাত ১২টার দিকে নিষিদ্ধ ঘোষিত জেএমবির আঞ্চলিক কমান্ডার জাবেদ ইকবাল ওরফে মোহাম্মদ ঢুকছে। থাবড়ায়ে ধরে ল্যাং মেরে নিচে ফেলে দিলাম। সেখানে পেলাম জেলা কমান্ডার।
জেএমবির মূল সোর্স দিয়েছিলেন জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী সাহেব। সেসময় জেএমবির সদস্যদের ধরতে জনগণও সাহায্য করেছিল।
জাগো নিউজ: আপনি আয়নাঘরে ছিলেন। কোনো আইনগত পদক্ষেপ নেবেন কি না?
হাসিনুর রহমান: আমি মানহানির মামলা করবো। তখন আমি খুঁজবো আমার বিরুদ্ধে কারা কারা মামলা করেছিল।
টিটি/এএসএ/এমএস