কেউ যদি এ রকম প্রতিশ্রুতি দিয়ে ঋণ নেয় যে, ঋণ পরিশোধের সময় ‘কিছু বাড়িয়ে দেবো’ অথবা ঋণ দেওয়া হয় এ রকম শর্তে যে পরিশোধের সময় মূল অর্থের চেয়ে কিছু বেশি দিতে হবে, তাহলে তা সুদি ঋণ গণ্য হবে। আলী (রা.) থেকে বর্ণিত আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন,
Advertisement
كُلُّ قَرْضٍ جَرَّ مَنْفَعَةً فَهُوَ رِبًا
যে ঋণ থেকে কোনো ধরনের বাড়তি সুবিধা বা লাভ অর্জিত হয়, তা সুদি ঋণ গণ্য হয়। (বুলুগুল মারাম: ৮৬১)
সুদি ঋণ দেওয়া ও নেওয়া হারাম। এমন কি এ রকম ঋণের সাক্ষী থাকা বা চুক্তিপত্র লেখাও হারাম। জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সুদখোর, সুদদাতা, সুদের লেখক এবং সুদের সাক্ষীদের অভিশাপ দিয়েছেন আর বলেছেন, ওরা সকলেই সমান। (সহিহ মুসলিম: ৪১৭৭)
Advertisement
ঋণদাতার পক্ষ থেকে ঋণগ্রহীতার কাছে ঋণ প্রদানের কোনো বিনিময় দাবি করা, আশা করা বা কৌশলে চাপ দিয়ে আদায় করা নাজায়েজ। এটা সুদের অন্তর্ভুক্ত। ঋণগ্রহীতা যদি ঋণ পরিশোধের সময় বাড়ানোর জন্য ঋণদাতাকে কোনো উপহার দিতে চায়, তা গ্রহণ করাও জায়েজ নেই।
তবে যদি তাদের মধ্যে আগে থেকেই হৃদ্যতা ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থাকে, উপহার আদান-প্রদানের প্রচলন থাকে এবং ওই উপহার ঋণের বিনিময়ে বা ঋণ প্রদানে ছাড় পাওয়ার জন্য দেওয়া হচ্ছে না তাও স্পষ্ট থাকে, তাহলে ওই হাদিয়া গ্রহণ করা যেতে পারে।
ইহয়াহইয়া ইবনে আবু ইসহাক আল-হানাঈ (রা.) বলেন, আমি আনাস ইবনে মালেককে (রা.) জিজ্ঞাসা করলাম, আমাদের মধ্যে কেউ যদি তার কোনো ভাইকে দেয়, তারপর ঋণগ্রহীতা তাকে কোনো উপহার দেয় এ ব্যাপারে আপনার মতামত কী? তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন,
إِذَا أَقْرَضَ أَحَدُكُمْ قَرْضًا فَأَهْدَى لَهُ أَوْ حَمَلَهُ عَلَى الدَّابَّةِ فَلاَ يَرْكَبْهَا وَلاَ يَقْبَلْهُ إِلاَّ أَنْ يَكُونَ جَرَى بَيْنَهُ وَبَيْنَهُ قَبْلَ ذَلِكَ
Advertisement
তোমাদের কেউ ঋণ দেয়ার পর ঋণগ্রহীতা তাকে কিছু উপহার দিলে বা তার সওয়ারিতে আরোহণ করাতে চাইলে সে যেন উপহার গ্রহণ না করে এবং তার সওয়ারিতেও আরোহণ না করে। তবে তাদের মধ্যে আগে থেকেই এরকম সৌজন্যমূলক বিনিময়ের প্রচলন থাকলে আপত্তি নেই। (সুনানে ইবনে মাজা: ২৪৩২)
এ ছাড়া ঋণ পরিশোধের পর ঋণগ্রহিতা যদি কোনো প্রতিশ্রুতি, শর্ত বা চাপ ছাড়া খুশি হয়ে কিছু অর্থ হাদিয়া হিসেবে দেয়, তাহলে তাও দেওয়া-নেওয়া জায়েজ। আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, নবিজির (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জিম্মায় একজন ব্যক্তির একটি নির্দিষ্ট বয়সের উট ঋণ ছিল। লোকটি তার কাছে ওই ঋণ পরিশোধের জন্য তাড়া দিতে এলো। নবিজি (সা.) সাহাবিদের বললেন, তাকে একটি উট দিয়ে দিন। তারা ওই বয়সের উট খুঁজলেন, কিন্তু তার পাওনার চেয়ে বেশি বয়সের উট ছাড়া পাওয়া গেল না। নবিজি (সা.) বললেন,
أَعْطُوهُ إِنَّ خِيَارَكُمْ أَحْسَنُكُمْ قَضَاءًওই উটটিই তাকে দিয়ে দিন। আপনাদের মধ্যে সেই উত্তম ব্যক্তি, যে উত্তমরূপে (ঋণ, আমানত, মূল্য ও অন্যান্য হক) পরিশোধ করে। (সহিহ বুখারি: ২৩৯৩)
ওএফএফ/জেআইএম