শিক্ষা

পরীক্ষার আগের দিনগুলোতে রুটিন সাজাবেন যেভাবে

বড় সিলেবাস সামলাতে রাত জেগে পড়াশোনার একটা বিপদ আছে। দিনে ঝিমঝিম ভাব তৈরি হয়। এতে একদিকে যেমন পড়াশোনা আপনার স্মৃতিতে স্থায়ী হয় না, অন্যদিকে শরীরের প্রাকৃতিক ঘড়ি বা বডিক্লক বিভ্রান্ত হয়ে পড়ে। তাই পরীক্ষার এ মৌসুমে শিক্ষার্থীদের প্রয়োজন ব্যক্তিগত একটি রুটিন। রাত জেগে পড়া সাধারণত উপকারী না হলেও অনেকেরই দিনের বেলা পড়াশোনায় মনোযোগ আসে না। তাই রাতে পড়ুন বা দিনে, জীবনের রুটিনে স্থিতিশীলতা খুব গুরুত্বপূর্ণ।

Advertisement

জেনে নিন কীভাবে নিজের দিনের পরিকল্পনা করবেন

১. সকাল সকাল দিন শুরু করুন: দিনের বেলা যাদের মনোযোগে সমস্যা হয় না, তারা সকালে ঘুম থেকে ওঠার একটি নির্দিষ্ট সময় নির্বাচন করুন। চেষ্টা করুন সকাল ৬টা থেকে ৭টার মধ্যে বিছানা ছাড়তে। যারা রাতে ছাড়া পড়তে পারেন না, তারা ঘুমানোর সময় অনুযায়ী কমপক্ষে ছয় ঘণ্টা পর অ্যালার্ম দিন। নির্ধারিত সময়ে বিছানা ছাড়ুন।

২. নিজেকে সময় দিন: ঘুম ভাঙার পরপরই স্মার্ট ডিভাইস হাতে নেবেন না। কমপক্ষে আধঘণ্টা সময় নিজের জন্য বরাদ্দ রাখুন। এই সময়টিতে নিজের মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি নজর দিন। মনোযোগ ও আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর জন্য মেডিটেশন করতে পারেন। নিজ নিজ ধর্মীয় রীতি মেনে প্রার্থনায় মনোনিবেশ করতে পারেন। এই ৩০ মিনিট আপনার মস্তিষ্ককে সারাদিন শান্ত রাখতে জাদুকরি ভূমিকা রাখবে। হালকা ব্যয়াম করুন।

৩. সময় মতো সকালের নাশতা: সময় মতো পুষ্টিকর নাশতা করুন। সারা দিনের কাজের অ্যানার্জি নির্ভর করে সকালের নাশতার ওপর। সম্ভব হলে বাসায় বানানো নাশতা করুন।

Advertisement

৪. তালিকা তৈরি করুন: নাশতার পরই বই খোলার সময়। এলোপাতাড়ি তথ্য মুখস্ত না করে দিনের শুরুতে সারাদিনের জন্য কিছু লক্ষ্য নির্ধারণ করুন। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে আপনি কী কী পড়ে শেষ করতে চান তার একটি তালিকা বা চেকলিস্ট তৈরি করুন। দিনব্যাপী এক একটি লক্ষ্য পূরণ করার মাধ্যমে আপনার এক একটি অর্জনের অনুভূতি হবে। এটি আপনার আত্মবিশ্বাস বাড়াতেও সাহায্য করবে।

৫. ঠাণ্ডা মাথায় পড়তে বসুন: পড়া শুরু করুন তুলনামূলক নতুন বিষয় দিয়ে। দিনের শুরুতে মাথা ফ্রেশ থাকে, এই সময় নতুন তথ্য মাথায় রাখা সহজ।

৬. বিরতি: বিরতি নিন। নতুন কিছু পড়ার পর সঙ্গে সঙ্গে আরেকটি তথ্য মস্তিষ্কে চাপ তৈরি করে। তাই অল্প কিছুক্ষণ বিরতি নিন। হালতা কিছু খেতে পারেন। হাঁটাহাটি করে অ্যাকটিভ থাকুন।

আরও পড়ুন:পরীক্ষার মৌসুমে আত্মবিশ্বাসী থাকবেন যেভাবেপরীক্ষার আগের রাতের চেকলিস্টমেডিকেল ভর্তিপরীক্ষার ফলাফলে হতাশ, যা করবেন

৭. প্রতিদিন মডেল টেস্ট: বিরতির পর কিছু মডেল টেস্ট দিন। আপনার দুর্বলতা খুঁজে বের করুন। প্রতিদিন ২ ঘণ্টা সময় দিন নিজের দুর্বলতাগুলোকে জয় করতে।

Advertisement

৮. চেকলিস্ট: দুপুরের বিরতিতে যাওয়ার আগে আপনার চেকলিস্টটি দেখুন। নির্ধারিত লক্ষ্যের দিকে এগোচ্ছে কি না খেয়াল রাখুন।

৯. দুপুরের বিরতি: গোসল, খাওয়া ও বিশ্রামের জন্য নির্দিষ্ট সময় নিন। অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য বিশ্রামে যাবেন না। এবং অবশ্যই অনিয়ন্ত্রিত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন।

১০. রিভিশন: দুপুরের বিরতির পর রিভিশনের দিকে মন দিন। আগের দিনের পড়া বিষয়গুলোও একবার ঝালিয়ে নিতে পারেন বিকেলে। দুই থেকে তিন ঘণ্টা সময় টানা পড়ুন। সারা দিনে এই সময়টায় একটু ‍ঝিমুনি আসা স্বাভাবিক। তাই জটিল বিষয় এই সময় না পড়াই ভালো।

১১. বিকেলের বিরতি: বিকেলের চা অথবা জলখাবারের বিরতি বেশি বড় করবেন না। এই সময় পরিবারের সাথে কিছুক্ষণ সময় কাটান, যা আপনাকে রিল্যাক্স হতে সাহায্য করবে।

১২. সন্ধ্যার পড়া: সন্ধ্যায় পড়তে বসার আগে আরেকবার চেকলিস্ট খেয়াল করুন। কোনো বিষয় সেদিন বাদ পড়বে কি না হিসেব করে নিন। চেষ্টা করুন রাত ৯টার মধ্যে রাতের খাবার খেতে ও ১২টার মধ্যে বিছানায় চলে যেতে।

১১. সময় মতো ঘুমান: ঘুমানোর আগে চোখ বন্ধ করে একবার ভেবে নিন আজ সারাদিন কী কী পড়লেন এবং আপনি এতে সন্তুষ্ট কি না। যদি সন্তুষ্ট না হোন, তাহলে পরদিনের ‍রুটিনে সে বিষয়টায় পরিবর্তন আনুন।

বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতিতে সময়ের সঠিক ব্যবহার খুব গুরুত্বপূর্ণ। একটি পরিকল্পিত রুটিন আপনার সাফল্যকে কয়েক ধাপ এগিয়ে দেবে। রুটিনটি অবশ্যই ব্যক্তিগত প্রয়োজন অনুযায়ী পরিবর্তিত হতে পারে, তবে নিয়মিত পড়া এবং বিশ্রামের সমন্বয় আপনাকে সঠিক পথে পরিচালিত করবে। সফলতার পথে আপনার যাত্রা শুভ হোক!

আরও পড়ুন:বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির বিষয় নির্ধারণ করবেন কীভাবেউন্নয়ন অধ্যয়নে ছাত্রাবস্থায় মেলে খণ্ডকালীন ভালো চাকরি‘ডেটা সায়েন্স’ কি সত্যিই সবচেয়ে চাহিদাসম্পন্ন বিষয়

এএমপি/আরএমডি/জেআইএম