রাজধানীর পূর্বাচলে বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে চলছে মাসব্যাপী ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা। মেলার এবারের আসরে প্রথমদিকে ক্রেতা-দর্শনার্থীর সমাগম কম থাকলেও দিন গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে। বিশেষ করে ছুটির দিনে জনসমুদ্রে পরিণত হয় মেলা প্রাঙ্গণ।
Advertisement
শুক্রবার (১৭ জানুয়ারি) সাপ্তাহিক ছুটির দিনে বাণিজ্যমেলায় যেন উৎসবমুখর এক পরিবেশ তৈরি হয়েছে। উৎসবের আমেজ স্টল, প্যাভিলিয়ন, খাবারের দোকান থেকে শুরু করে ছোটদের জন্য নির্মিত থিম পার্কসহ সর্বত্র। পরিবার-পরিজন, বন্ধু-বান্ধব নিয়ে ঘোরাঘুরি, কেনাকাটায় আনন্দমুখর সময় পার করছেন ক্রেতা-দর্শনার্থীরা।
মেলায় আগতরা বলেন, মেলার এখন মাঝামাঝি সময় হওয়ায় ভিড় বাড়তে শুরু করেছে। কেনাকাটাও চলছে পুরোদমে। তবে দাম তুলনামূলক বেশি।
বেচাবিক্রিতে খুশি ব্যবসায়ীরাও। তারা জানান, মেলার শুরুর দিকে তেমন মানুষ না আসলেও এখন প্রচুর মানুষ আসছেন। বেচাকেনাও ভালো।
Advertisement
আজ শুক্রবার সরেজমিনে দেখা যায়, পূর্বাচল মূল সড়ক থেকে কাঞ্চন ব্রিজ সংলগ্ন রাস্তার দুইপাশে হাজারও মানুষের সমারোহ। ভিড় ঠেলে মূল ফটক পার হতেই যেন অন্য এক জনসমুদ্র। মেলা প্রাঙ্গণে যেন তিল ধারণের ঠাঁই নেই।
মেলার মূল স্থাপনার পাশাপাশি বাইরে উন্মুক্ত স্থানেও গিজগিজ করছে মানুষ। বড় প্যাভিলিয়নের পাশাপাশি ছোট স্টলগুলোতেও সমান ভিড়।
জারিন ফ্যাশন হাউজের সেলসম্যান আল-আমিন জাগো নিউজকে বলেন, গত কয়েকদিন ধরে প্রচুর ক্রেতা আসছেন, আমাদের বিক্রিও ভালো হচ্ছে। আজ শুক্রবার বিধায় মানুষের আনাগোনা বেশি। আশা করবো শুক্রবারের মতো সপ্তাহের অন্য দিনও ভিড় হবে।
তিনি জানান, ছোট শিশু থেকে শুরু করে সব বয়সী নারীদের কামিজ, ওয়ান পিস, টু পিস, নায়রা, গারারা, সারারা, ম্যাচিং ওড়না ইত্যাদি পাবেন আমাদের স্টলে। সব পণ্যে ১০ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত মূল্যছাড় চলছে।
Advertisement
বরাবরের মতোই গৃহস্থালি পণ্যের স্টলগুলোতে ক্রেতাদের রয়েছে উপচেপড়া ভিড়। প্যাকেটজাতীয় খাবারের দোকানগুলোর প্যাকেজ অফারেও আগ্রহ ক্রেতাদের। স্টলগুলোতে উপচেপড়া ভিড়ে উচ্ছ্বসিত বিক্রেতারাও। দিচ্ছেন নতুন নতুন ছাড়, অফার।
বিক্রেতারা বলেন, সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় সকাল থেকেই ভিড় ছিল আজ। বেচাকেনাও জমজমাট। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ক্রেতা সমাগম আরও বাড়ে। ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে দেওয়া হচ্ছে নানানরকম ছাড় ও অফার।
পুরান ঢাকা থেকে পরিবার নিয়ে মেলায় এসেছেন মাহবুবা। জাগো নিউজকে তিনি বলেন, ছুটির দিনে ছেলে-মেয়েকে নিয়ে মেলায় এসেছি। কিন্তু একটাই সমস্যা, অনেক দূর থেকে এসেছি- সবকিছু যে ঘুরে দেখবো সে সুযোগ নেই। যাওয়া আসাতেই সময় শেষ হয়ে যায়।
কেবল রাজধানী ঢাকা থেকেই নয়, ঢাকার আশপাশের জেলা থেকেও মানুষ এসেছে বাণিজ্যমেলায়। কেউ একা, কেউ বন্ধুদের সঙ্গে এসেছেন। কেউবা আবার পুরো পরিবার নিয়ে মাইক্রোবাস ভাড়া করে এসেছেন মেলায়।
আরও পড়ুন বাণিজ্যমেলায় টেস্টি ট্রিটের স্টলে ভোজনরসিকদের উপচেপড়া ভিড় বাড়তি করের প্রভাবে অন্য পণ্যের দামও বাড়বেমুন্সিগঞ্জের গজারিয়া থেকে পুরো পরিবার নিয়ে মেলায় এসেছেন ফয়সাল মাহতাব। জাগো নিউজকে তিনি বলেন, আমাদের যৌথ পরিবার, পরিবারের সবাই একসঙ্গে মেলায় এসেছি। বছরে একবার হয়, তাই আসা হয় সবসময়।
ফয়সাল জানান, মেলায় আসার মূল উদ্দেশ্য সব ধরনের পণ্য এক জায়গায় পাওয়া যায়, আবার বিভিন্ন অফার থাকে। ঘর সংসারের বিভিন্ন জিনিস কেনা যায়। আবার পরিবারের সঙ্গে সুন্দর সময় কাটানোও যায়।
দেশি স্টলের পাশাপাশি বিদেশি স্টলগুলোতেও ক্রেতাদের ভিড়। বিভিন্ন ধরনের জামা, জুতা, ব্যাগ, শাল, চাদর ইত্যাদির পসরা নিয়ে বসেছেন বিক্রেতারা। পিকে পাকিস্তান সুজের স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ রাজা এসেছেন পাকিস্তানের করাচি থেকে। এবার নিয়ে ৬ষ্ঠ বার তিনি বাণিজ্যমেলায় অংশগ্রহণ করেছেন। জাগো নিউজকে তিনি বলেন, আমার শপে বিভিন্ন ধরনের স্যান্ডেল, সু, জুতা, কোলাপুরি পাওয়া যায়।
মেলায় আগত জহিরুল ইসলাম অনিক জাগো নিউজকে বলেন, আসলে প্রতিবছরই বাণিজ্যমেলায় আসা হয়। আমি প্রতিবছর কয়েকবার মেলায় আসার চেষ্টা করি। শেষের দিকে বিভিন্ন অফার থাকে। সব মিলিয়ে বেশ ভালোই লাগে।
বাণিজ্যমেলায় টেস্টি ট্রিটের রিজিওনাল ম্যানেজার শরিফ হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, মেলায় আমাদের ২টি আউটলেট, একটি প্রিমিয়াম রেস্টুরেন্ট ১০ এবং আরেকটি ক্যাফে ২। ডিআইটিএফ উপলক্ষে আমাদের নতুন ইনোভেশন ডোনার কাবাব। আমরা খুব ভালো সাড়া পাচ্ছি।
সুরাইম নামের এক শিক্ষার্থী জাগো নিউজকে বলেন, অন্যসব খাবারের দোকান থেকে টেস্টি ট্রিটে সুলভ মূল্যে লাঞ্চ পাওয়া যায়। খাবারের মানও খুব ভালো। আমি ডিম খিচুড়ি নিয়েছি। সবসময়ই আমি টেস্টি ট্রিট থেকে স্ন্যাকস আইটেম খেয়ে থাকি।
রাজধানীবাসীর মেলায় আসার একমাত্র সড়ক পূর্বাচল ৩০০ ফিট সড়ক। মেলা উপলক্ষে কুড়িল এবং ফার্মগেট থেকে নিয়মিত চলাচল করছে বিআরটিসির শাটল বাস। পাশাপাশি প্রথমবারের মতো উবার পিকআপ এবং ড্রপঅফ সার্ভিস যোগ হয়েছে। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত চলছে মেলা। মেলায় প্রবেশমূল্য প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য ৫০ টাকা এবং শিশুদের জন্য ২৫ টাকা।
এসআরএস/কেএসআর/এএসএম