অর্থনীতি

ভ্যাট-ট্যাক্স বাড়ানোয় বড় আকারে ধাক্কা খাচ্ছে শিল্পখাত

বাংলাদেশ অ্যাগ্রো-প্রসেসরস অ্যাসোসিয়েশনের (বাপা) সভাপতি মো. আবুল হাসেম বলেছেন, নতুন করে প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্যে ভ্যাট ও শুল্ক বাড়ানোয় দেশের শিল্পখাত বড় আকারে ধাক্কা খাচ্ছে। শিল্প না বাঁচলে কর্মসংস্থান হবে না।

Advertisement

বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) রাজধানীর ঢাকা ক্লাবে বাপা আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ আহ্বান জানান তিনি।

ভ্যাট ও শুল্ক বাড়ালে ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি শ্রমজীবী-কৃষক এবং সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে জানিয়ে এ ব্যবসায়ী বলেন, ৫ টাকার বিস্কুট ও একটা কলা দিয়ে এ দেশের শ্রমজীবী মানুষ নাস্তা কিংবা দুপুরের খাবার সারেন। আজ সেই বিস্কুট যদি তারা খেতে না পারেন, তাহলে সে অভুক্ত থাকবেন।

কর বাড়ালেই সরকারের রাজস্ব বাড়বে না জানিয়ে তিনি বলেন, টেলিফোন প্রতিষ্ঠানের যখন ৩০ টাকা প্রতি মিনিট ছিল তখন তারা লোকসান গুনেছে। এখন যখন ৩০ পয়সা প্রতিমিনিট করা হয়েছে। তারা কিছুটা ভালো আছে। কাজেই কর বাড়ালে সরকারের রাজস্ব বাড়বে এটা সঠিক নয়।

Advertisement

সরকারের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনারা হয়তো ভোট করবেন না। এ সরকার মানুষের অনেক আশার সরকার। জনগণের দিকে তাকিয়ে সরকার যেন সিদ্ধান্ত নেয় এ দাবি থাকবে। যে ভ্যাট ও শুল্ক বাড়ানো হয়ে তা প্রত্যাহার করতে হবে। যদি আমাদের দাবি না মানে তাহলে আমরা শিল্প কারখানা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হবো, আমরা রাস্তায় নামবো। এছাড়া কোনো উপায় নেই।

তিনি বলেন, অনেকে বলছেন ভ্যাট তো সাধারণ মানুষ দেবে। কিন্তু বাংলাদেশে এটা সরাসরি শিল্পকে দিতে হয়। এর জন্য আমাদের পণ্যের মূল্য বাড়াতে হবে। পণ্যের দাম বাড়ালে ভোক্তা কমতে থাকে। ক্রয়ক্ষমতার বাইরে পণ্য চলে গেলে ভোক্তা তার আয়ের সঙ্গে মিলিয়ে কেনাকাটা করে।

আরও পড়ুনবর্ধিত ভ্যাট-শুল্ক প্রত্যাহারের আহ্বান আহসান খান চৌধুরীরবর্ধিত ভ্যাট প্রত্যাহার না হলে কারখানা বন্ধ করবেন ব্যবসায়ীরা

বাংলাদেশ অটো বিস্কুটস অ্যান্ড ব্রেড ম্যানুফ্যাকচারের সভাপতি ও অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজের শীর্ষ কর্মকর্তা শফিকুর রহমান ভুঁইয়া বলেন, জুলাই বিল্পবের একটা কমিটমেন্ট দিয়ে সরকার ক্ষমতায় আছে। সেই কমিটমেন্ট হচ্ছে আগের ধারা বাদ দিয়ে নতুন করে বৈষম্যহীন সমাজ বিনির্মাণ। কিন্তু এ সরকার আগের সরকারকে ছাড়িয়ে গেছে। মানুষের পালস বুঝে এ সরকারকে কাজ করতে হবে।

সরকারের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আমাদের যেন অন্য পথ বেছে না নিতে হয়। এ শিল্প থাকলে মানুষের কর্মসংস্থান হবে।

Advertisement

আকিজ ফুড অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেডের ডিরেক্টর অপারেশন সৈয়দ জহুরুল আলম বলেন, পাঁচ টাকা দামের পণ্যের ওপর কোনো অবস্থায় ভ্যাট বসানো হয়নি। প্রক্রিয়াজাত অনেক খাদ্যপণ্য ৫ টাকা বা ১০ টাকা। এ খাবারগুলোর নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষেরা খেয়ে থাকেন।

তিনি বলেন, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ৫ টাকা দামের পণ্যে মুনাফা থাকে না। বাজারে থাকার জন্য এ ধরনের পণ্য বের করতে হয়। এ পণ্যের ওপর যদি ভ্যাট বসে তাহলে হয়তো এটা উৎপাদন বন্ধ করে দিতে হবে।

সরকারের এ সিদ্ধান্ত ব্যবসাবান্ধব নয় জানিয়ে তিনি বলেন, এটা অন্য কোনো পরিকল্পনার অংশ কি না তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে। কারও সঙ্গে কোনো আলোচনা না করে একেবারে সর্বনিম্ন স্তরের পণ্যের ওপর অযৌক্তিকভাবে ভ্যাট ও শুল্ক বাড়ানো হয়েছে। এটা কোনোভাবে জনবান্ধব নয়, কাদের স্বার্থে এ সরকার কাজ করছে তা নিয়ে আমি সন্দিহান।

সংবাদ সম্মেলনে বাপার সাধারণ সম্পাদক ইকতাদুল হক, এসিআই অ্যাগ্রো বিজনেসের প্রেসিডেন্ট ড. এফ এইচ আনসারি, এসএমসি এন্টারপ্রাইজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইফ নাসির, বাংলাদেশ বিস্কুট অ্যান্ড ব্রেড অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শফিকুর রহমান ভুঁইয়া, আকিজ ফুডস অ্যান্ড বেভারেজের পরিচালক সৈয়দ জহুরুল আলম, স্কয়ার ফুড অ্যান্ড বেভারেজের চিফ অপারেটিং অফিসার পারভেজ সাইফুল ইসলাম, কিশোয়ান ও বনফুলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শহিদুল ইসলামসহ কৃষি প্রক্রিয়াজাত খাতের বিভিন্ন কোম্পানির পরিচালক ও শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

এসএম/এমএএইচ/জেআইএম