পাঁচ বছর আগে প্রায় আড়াই কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ হয় ফুট ওভারব্রিজ। এটি রাজবাড়ী-কুষ্টিয়া আঞ্চলিক মহাসড়কের ওপর নির্মাণ করা হয়েছে। এর অবস্থান রাজবাড়ী সদর উপজেলার আলাদীপুরে। শিক্ষার্থী, পথচারী ও স্থানীয়দের রাস্তা পারাপারের সুবিধার্থে ফুট ওভারব্রিজটি নির্মাণ হলেও কোনো কাজে আসছে না।
Advertisement
স্থানীয়দের অভিযোগ, জেলার অনেক গুরুত্বপূর্ণ স্থান থাকার পরও ওভারব্রিজটি ক্ষমতার অপব্যবহার করে অপরিকল্পিতভাবে নির্মাণ করা হয়েছে। এর দুই পাশে রয়েছে স্প্রিডব্রেকার, আর সড়কের মাঝখানে নেই সড়ক ডিভাইডার। ফলে কয়েকবছর অতিবাহিত হলেও ব্রিজটি ব্যবহারে আগ্রহ নেই স্থানীয়দের। ফলে ব্রিজটি বখাটেদের আড্ডাখানা ও মাদকসেবনের স্থানে পরিণত হয়েছে।
রাজবাড়ী জেলার মধ্যদিয়ে ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক ও রাজবাড়ী-কুষ্টিয়া আঞ্চলিক মহাসড়ক চলে গেছে। এসব সড়কের মধ্যে রাজবাড়ী বড়পুল, পান্না চত্বর, রেলগেট, শ্রীপুর, নতুন বাজার মুরগির ফার্ম, দৌলতদিয়া, গোয়ালন্দ বাজার, জামতলা, গোয়ালন্দ মোড়, পাংশা সরদার বাসস্ট্যান্ডসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্থান থাকলেও রাজবাড়ীর একমাত্র ফুট ওভারব্রিজটি নির্মাণ করা হয়েছে আলাদীপুরে। ফলে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে স্থানীয়দের মধ্যে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ২ কোটি ৪৪ লাখ টাকা ব্যয়ে ওভারব্রিজটি রাজবাড়ী সড়ক ও জনপথ বিভাগের অধীনে নির্মাণ করা হয়। নির্মাণকারী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ছিল ঢাকার ডিলাক্স এন্টারপ্রাইজ। ওভারব্রিজের পূর্বদিকে আলাদিপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং বিদ্যালয়ের মার্কেট রয়েছে। আর পশ্চিমে আলাদিপুর বাজার ও আলীপুর ইউনিয়ন পরিষদ ভবন। এই সড়ক দিয়ে ঢাকা, ফরিদপুর, কুষ্টিয়াসহ দেশের বিভিন্নস্থানে যানবাহন চলাচল করে।
Advertisement
এছাড়া ফুট ওভারব্রিজের উভয় পাশে প্রায় ১০০ গজ দূরে রয়েছে স্প্রিডব্রেকার এবং সড়কের মাঝে কোনো ডিভাইডার না থাকায় রাস্তা পারাপার হচ্ছে মানুষ।
স্থানীয় বাসিন্দা নয়ন শেখ বলেন, আমি জানি না কার স্বার্থে বা কোন উদ্দেশ্যে কম গুরুত্বপূর্ণ স্থানে এই ওভারব্রিজটি নির্মাণ করা হলো। রাজবাড়ীতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ স্থান ছিল। ওভারব্রিজটি আসলে কেউ ব্যবহার করে না। কিছু অপরিচিত ছেলেরা এখন এর ওপরে আড্ডা দেয়। আসলে ওভারব্রিজটি এখানে দরকারই ছিল না। ব্রিজের দুই পাশে স্প্রিডব্রেকার রয়েছে। যার কারণে গাড়ি স্লো হয়ে আসে। এছাড়া রাস্তাও দুই লেনের।
আনোয়ার হোসেন নামে স্থানীয় আরেকজন বলেন, ওভারব্রিজটি কোনো কাজেই আসছে না। উলটো এই ব্রিজের কারণে বখাটে ও মাদক সেবনকারীদের সুবিধা হয়েছে। অযথা সরকার জনগণের টাকা নষ্ট করেছে। স্কুল বা এলাকার কেউ ব্রিজের ওপর দিয়ে আসা-যাওয়া করে না। সবাই নিচ দিয়ে রাস্তা পার হয়। সম্পূর্ণ অপরিকল্পিতভাবে ব্রিজ করা হয়েছে।
নাজমা আক্তার নামে এক ব্যবসায়ী বলেন, তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সামনে এই ওভারব্রিজ। এখানে যে উদ্দেশ্যে এই ব্রিজ করা হয়েছে, তার কিছুই হচ্ছে না। এখন এখানে বখাটেদের আড্ডাখানা হয়েছে। অনেকে নেশাও করে।
Advertisement
আব্দুল আলি সরদার নামে আরেক ব্যবসায়ী বলেন, এখানে দুটি স্কুল ও একটি বাজার আছে। দুর্ঘটনা রোধে রাস্তা পারাপারের জন্য ওভারব্রিজটি নির্মাণ করা হয়েছিল। কিন্তু সবাই নিচ দিয়ে পারাপার হওয়ায় ব্রিজটি কাজে আসছে না। এখন এটা বখাটে ও মাদক সেবনকারীদের আড্ডার স্থান হয়েছে। এই রাস্তার মাঝে ডিভাইডার থাকলে মানুষ ওভারব্রিজ দিয়ে পারাপার হতো। আসলে পরিকল্পনা অনুযায়ী ব্রিজটি করা হয় নাই। এছাড়া স্থানীয়দের সচেতনতার অভাব আছে।
এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক রুমা আক্তার বলেন, নিচ দিয়ে রাস্তা পার হতে মাত্র কয়েক সেকেন্ড সময় লাগে, আর ওপর দিয়ে পারাপার হতে বেশি সময় লাগে। তাই সময় বাঁচাতেই নিচ দিয়ে পারাপার হই।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাজবাড়ী সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাজস খান ক্যামেরার সামনে কোনো কথা না বলতে রাজি হননি।
বিরক্তি প্রকাশ করে তিনি বলেন, যখন কাজ হয়েছে, তখন কেন আসেন নাই। এখন ওই কর্মকর্তার কাছে গিয়ে বক্তব্য নিয়ে আসেন। কর্তৃপক্ষ আমার কাছে ব্যাখ্যা চাইলে তখন ব্যাখ্যা দেবো। আর আপনারা দেশ-বিদেশে যেখানে যত খুশি লেখেন।
রুবেলুর রহমান/জেডএইচ/এএসএম