ধর্ম

‘আল্লাহর কাছে মূল্যবান’ সাহাবি জাহেরের (রা.) ঘটনা

সাহাবি জাহের আল-আসলামী (রা.) ছিলেন একজন বেদুইন বা গ্রামে বসবাসকারী মানুষ। তিনি যখনই মদিনায় আসতেন, তখন গ্রাম থেকে আল্লাহর রাসুলের (সা.) জন্য কোনো উপহার আনতেন। আল্লাহর রাসুলও (সা.) তাকে উপহার দিতেন এবং বলতেন, জাহের আমাদের গ্রাম আর আমরা তার শহর।

Advertisement

একদিন জাহের আল আসলামী (রা.) মদিনার বাজারে জিনিসপত্র বিক্রি করছিলেন। নবিজি (সা.) গিয়ে পেছন থেকে এমনভাবে তাকে জড়িয়ে ধরলেন যে তিনি পেছনে তাকাতে পারছিলেন না। তিনি বললেন, কে? আমাকে ছাড়ুন! কিন্তু যখন তিনি বুঝতে পারলেন নবিজি (সা.) তাকে ধরেছেন, তখন তিনি নবিজির বুকের সাথে আরও লেপ্টে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন।

নবিজি (সা.) রসিকতার ছলে বললেন, এ গোলামকে কে কিনবে? জাহের বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! আপনি আমাকে বিক্রি করে তেমন মূল্য পাবেন না। (তিনি ছিলেন কৃষ্ণাঙ্গ ও দেখতে কদাকার, তাই তিনি বোঝাতে চেয়েছিলেন আমি দাস হিসেবে বিক্রির জন্য তেমন মূল্যবান নই।) নবিজি (সা.) বললেন, কিন্তু আল্লাহর কাছে তুমি কম মূল্যবান নও! (মুসনাদে আহমদ)

জাহের দাস ছিলেন না। মদিনার বাজারে সবাই জানতেন তিনি দাস নন। নবিজি (সা.) রসিকতার ছলে তাকে দাস হিসেবে বিক্রির কথা বলেছিলেন। জাহেরের (রা.) মতো গ্রাম্য ও সাধারণ সাহাবির সাথেও নবিজির (সা.) সহজ সম্পর্ক ছিল। নবিজি (সা.) ছিলেন দুনিয়ায় আল্লাহর প্রেরিত শ্রেষ্ঠ রাসুল, শ্রেষ্ঠ মানুষ। এই ঘটনার সময় তিনি মদিনার রাষ্ট্রপ্রধান এবং তৎকালীন আরবের সবচেয়ে প্রভাবশালী ও ক্ষমতাধর ব্যক্তি ছিলেন। কিন্তু নবিজি (সা.) দাম্ভিক ও ক্ষমতাদর্পী ছিলেন না। তিনি সবার সাথে সহজভাবে মিশতেন, সবার সাথে হাসিমুখে কথা বলতেন।

Advertisement

আবদুল্লাহ ইবনে হারিস ইবনে জাযআ (রা.) বলেন, আমি আল্লাহর রাসুলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) চেয়ে বেশি মুচকি হাসতে আর কাউকে দেখিনি। (সুনানে তিরমিজি)

হজরত জারির ইবনে আব্দুল্লাহ (রা.) বলেন, ইসলাম গ্রহণ করার পর থেকে কখনও আল্লাহর রাসুল (সা.) আমাকে তার কাছে যেতে বাধা দেননি এবং যখনই তিনি আমার দিকে তাকাতেন, তখনই মুচকি হাসতেন। (সহিহ বুখারি)

অন্যান্য সাহাবিদের সাথেও তিনি মাঝে মাঝে তাদের সাথে রসিকতা করতেন। তবে রসিকতা করেও তিনি কখনও মিথ্যা বলতেন না। কারো মনে কষ্টও দিতেন না। তার রসিকতা হতো নির্দোষ।

আনাস (রা.) বলেন, একদিন এক ব্যক্তি নবিজির (সা.) কাছে সওয়ার হওয়ার জন্য একটি উট চাইতে এলো। নবিজি (সা.) বললেন, আমি তোমাকে একটি উষ্ট্রীর বাচ্চা দেবো। লোকটি অবাক হয়ে বললো, উষ্ট্রীর বাচ্চা দিয়ে আমি কী করবো! বাচ্চার পিঠে কি সওয়ার হওয়া যাবে! রাসুল (সা.) বললেন, প্রত্যেকটি উটই কি কোনো উষ্ট্রীর বাচ্চা নয়? (সুনানে আবু দাউদ, সুনানে তিরমিজি)

Advertisement

প্রখ্যাত মুফাসসির ইবনে কাসির তার তাফসির-গ্রন্থে হাসান বসরি (রহ.) থেকে বর্ণনা করেছেন, একবার এক বৃদ্ধা রাসুলের (সা.) সাথে দেখা করে বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমার জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করুন, তিনি যেন আমাকে জান্নাতাবাসী করেন!

রাসুল (সা.) উত্তর দিলেন, হে অমুকের মা! জান্নাতে তো কোনো বৃদ্ধা ঢুকতে পারবে না।

তার কথা শুনে বৃদ্ধা কাঁদতে কাঁদতে ফিরে চললেন। রাসুল (সা.) সাহাবিদের বললেন, তাকে বলো, তিনি বৃদ্ধা অবস্থায় জান্নাতে প্রবেশ করবেন না। জান্নাতে প্রবেশ করার আগে আল্লাহ তাকে তরুণী বানিয়ে দেবেন। আল্লাহ তাআলা বলেছেন,

اِنَّاۤ اَنۡشَاۡنٰهُنَّ اِنۡشَآءً فَجَعَلۡنٰهُنَّ اَبۡکَارًاনিশ্চই আমি তাদেরকে বিশেষভাবে সৃষ্টি করবো, তাদেরকে বানাবো কুমারী। (সুরা ওয়াকিয়া: ৩৫, ৩৬)

ওএফএফ/এএসএম