১৯৭১ ও ২৪ এর গণঅভ্যুত্থানে সিরাজগঞ্জ জেলার আন্দোলন সংগ্রামের পটভূমি তুলে ধরে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও নবনিযুক্ত সিরাজগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি সাইদুর রহমান বাচ্চু তার বক্তব্যে বলেছেন, ‘সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুরে যদি ১৫ জন পুলিশ নিহত না হতো, তাহলে বাংলাদেশের পুলিশের মেরুদণ্ড ভাঙত না। আমরা সিরাজগঞ্জে আন্দোলন করে, বাংলাদেশের পুলিশের মেরুদণ্ড ভেঙে দিয়ে ২০২৪ সালের আন্দোলনকে ত্বরান্বিত করেছি।’
Advertisement
তার এই বক্তব্য ঘিরে ফেসবুকে আলোচনা-সমালোচনার পর এটিকে ‘স্লিপ অব টাং’ বলে দুঃখ প্রকাশ করেছেন সাইদুর রহমান বাচ্চু।
বিএনপি নেতা সাইদুর রহমান বাচ্চু ১৫ পুলিশ হত্যার ওই ঘটনার ‘কৃতিত্ব’ দাবি করে গত বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) শাহজাদপুর উপজেলার বাঘাবাড়ি মিল্ক ভিটার আয়োজনে প্রাথমিক সমবায় সমিতির সদস্যদের নিয়ে এক মতবিনিময়কালে এ বক্তব্য দেন। যার ভিডিও তিনি তার নিজের ফেসবুকেও পোস্ট করেছিলেন। তবে ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়লে নানান আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। এরপর সাইদুর রহমান বাচ্চু ভিডিওটি সরিয়ে নেন।
গত ৪ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের এক দফা আন্দোলন চলাকালে এনায়েতপুর থানায় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রাজ্জাকসহ ১৩ পুলিশ সদস্যকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। একইসঙ্গে অস্ত্র লুট ও থানা ভবনে অগ্নিসংযোগও করা হয়। এতে গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও দুই পুলিশ সদস্য মারা যান।
Advertisement
বাচ্চুর ওই ছড়িয়ে পড়া ভিডিও ফেসবুকে পোস্ট করে কেউ কেউ ক্যাপশন লিখেছিলেন ‘কারা পুলিশ হত্যা করেছিল সেটা সিরাজগঞ্জ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান বাচ্চুর মুখেই শুনুন। অথচ এই পুলিশ হত্যা মামলায় সাবেক মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী আব্দুল লতিফ বিশ্বাস এখন কারাগারে।’
ওই বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে শুক্রবার (১০ জানুয়ারি) রাতে সিরাজগঞ্জ শহরের একটি রেস্টুরেন্টে সাইদুর রহমান বাচ্চু নেতাকর্মীদের নিয়ে বলেন, বৃহস্পতিবার বাঘাবাড়ি মিল্ক ভিটার এক অনুষ্ঠানে আমার দেওয়া বক্তব্য বিকৃত করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে। এটার তিনি তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।
তিনি বলেন, আমি যদি আমার ‘স্লিপ অব টাং’এ অতিরিক্ত কিছু বলে থাকি, সেজন্য দুঃখ প্রকাশ করছি। ওই বক্তব্যে আমি বলেছিলাম, সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুরে ১৫ জন পুলিশ নিহত হয়েছেন। সেই নিহতের মধ্য দিয়ে পুলিশের মেরুদণ্ডটা ভেঙে গেছে। মেরুদণ্ড ভেঙে যাওয়ার কারণে সারা দেশের আন্দোলন ত্বরান্বিত হয়েছে। দুঃখের সঙ্গে বলতে চাই, হীন উদ্দেশ্য সফল করার লক্ষ্যে আমার বক্তব্য বিকৃত করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করেছে। এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান তিনি। সেই সঙ্গে বিএনপির বিরুদ্ধে নানা ধরনের অশুভ ও উদ্দেশ্যমূলক ষড়যন্ত্র হচ্ছে দাবি করে নেতা-কর্মীদের সতর্ক থাকার জন্য আহ্বান জানান বিএনপির এই নেতা।
এদিকে ওই পুলিশ হত্যা, অস্ত্র লুট, থানা ভবনে অগ্নিসংযোগ ও চার কোটি টাকা ক্ষতি দাবি করে গত ২৫ আগস্ট এনায়েতপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আব্দুল মালেক বাদী হয়ে আওয়ামী লীগের চার নেতাকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় আরও ছয় হাজার আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে। এই মামলার সন্দেহভাজন আসামি হিসেবে গত ৫ জানুয়ারি গ্রেফতার দেখিয়ে সাবেক মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি আব্দুল লতিফ বিশ্বাসকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত।
Advertisement
এম এ মালেক/এফএ/এমএস