দেশজুড়ে

পাবনায় সারের ‘কৃত্রিম সংকট’, বস্তাপ্রতি দাম বেড়েছে ৭০০-৮০০ টাকা

পাবনায় কৃষক পর্যায়ে অতিরিক্ত হারে বেড়েছে সারের দাম। প্রতি বস্তা সারে ৭০০-৮০০ টাকা দাম বেড়েছে। এতে আবাদ ব্যয় বেড়ে বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা। তারা বলছেন, কারসাজি করে সারের দাম বাড়ানো হয়েছে।

Advertisement

বিক্রেতা ও কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মিউরেট অব পটাশ (এমওপি) ও ইউরিয়া সারের দাম কিছুটা স্বাভাবিক থাকলেও গত কয়েক সপ্তাহে পাবনায় অস্বাভাবিক হারে অন্যান্য সারের দাম বেড়েছে। ১৪০০ টাকার প্রতি বস্তা (৫০ কেজি) বাংলা ড্যাপ সারের দাম বেড়ে ২২০০-২৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। একইভাবে ১০৫০ টাকার বিএডিসি ড্যাপ ১৩০০, ১২৫০ টাকার টিএসপি (মরক্কো) ১৬০০ এবং ১৭০০ টাকার বাংলা পতেঙ্গা ২৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা নিয়ে কৃষকদের মধ্যে ব্যাপক হতাশা কাজ করছে।

পাবনায় ব্যাপক হারে পেঁয়াজ ও সবজি চাষ হয়। চলতি বছরের অক্টোবর থেকে পাবনার সুজানগর, সাঁথিয়া ও বেড়াসহ বেশ কয়েকটি উপজেলায় মুড়িকাটা পেঁয়াজের আবাদ হয়েছে। এখন শুরু হয়েছে চারা বা হালি পেঁয়াজের আবাদ। একইসঙ্গে ধুমছে ঈশ্বরদীসহ পাবনার বিভিন্ন উপজেলায় শীতকালীন সবজি চাষ হচ্ছে। সে হিসেবে বছরের অন্যান্য সময়ের তুলনায় পাবনায় এ সময়টাতে সার ও কীটনাশকের চাহিদা বেড়ে যায় কয়েকগুণ।

কৃষকদের অভিযোগ, আবাদ মৌসুমে ব্যাপক চাহিদার বিষয়টিকে সুযোগ হিসেবে নিয়েছেন ডিলারসহ সার ব্যবসায়ীরা। গুদামে পর্যাপ্ত সার রেখে সংকটের মিথ্যা কাহিনী সাজিয়ে সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে ৩০ শতাংশেরও বেশি দামে সার বিক্রি করছেন ডিলাররা। এমনিতেই পেঁয়াজ, রসুন ও সবজির বীজের দাম বেশি, আবার বৃষ্টিতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এরমধ্যে কারসাজি করে সারের দাম অতিরিক্ত বৃদ্ধি কৃষকদের জন্য মরার ওপর খাঁড়ার ঘা হয়ে উঠেছে।

Advertisement

সাঁথিয়ার বোয়ালমারীর কৃষক তাইজুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘পেঁয়াজ ও রসুনসহ সব ধরনের বীজের দাম খুব বাড়তি। এরমধ্যে সারের দাম বস্তায় কয়েকশ টাকা করে বেড়েছে। ফলে এক একর জমি আবাদ করতে খরচ বাড়বে দুই থেকে তিন হাজার টাকা। সবশেষ খরচ উঠবে কি না, সে নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি।’

বেড়ার পাচুরিয়া গ্রামের কৃষক সাইদ আলী বলেন, ‘আমাদের নগরবাড়ি বন্দরেই তো সার নামে (আসে)। প্রতিনিয়ত ব্যাপক সার আসছে। অথচ কিনতে গেলে বলে সরবরাহ কম, দাম বেশি।’

সুজানগর উপজেলার গাজনার বিল এলাকার মানিক, ঈশ্বরদীর লক্ষ্মীকুন্ডার সবুজ মালিথা ও চাটমোহরের বরদানগরের রতন হোসেনসহ কয়েকজন কৃষক বলেন, ‘গত বছরের তুলনায় গত কয়েক সপ্তাহে সারের দাম যে হারে বেড়েছে, তা অস্বাভাবিক। আবার বৃষ্টি ও পোকার আক্রমণে পেঁয়াজ ও সবজি এক-দুই চালান মার খেয়েছে। সবমিলিয়ে ভাগ্যে কী আছে বলা মুশকিল।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন খুচরা সার বিক্রেতা জানান, গত দুই মাস আগে থেকে ইঙ্গিত হিসেবে সারের দাম টুকটাক বাড়ানো হচ্ছিল। মূলত তখন থেকেই গোডাউনে সার মজুত শুরু হয়েছে। এখন সংকট দেখিয়ে আমাদের থেকেও দাম বেশি নিচ্ছেন ডিলাররা। বলছেন সার নেই, অথচ বাড়তি দাম দিলে ঠিকই চাহিদামতো সার মিলছে। এসব ক্রয়-বিক্রয়ে কোনো মেমো দেওয়া হচ্ছে না।

Advertisement

তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করে ডিলাররা বলছেন, সরকারি বরাদ্দের তুলনায় চাহিদা ব্যাপক বেশি। এ কারণে বাইরে থেকে সার আনতে হচ্ছে। ফলে দাম বেশি পড়ছে।

বেড়া উপজেলার সারের ডিলার হাজী নুরুল ইসলামের ম্যানেজার হাসান আলী জানান, চাহিদা মেটাতে দিনাজপুর ও ঠাকুরগাঁওসহ বিভিন্ন জেলা থেকে সার কিনতে হচ্ছে। কয়েক হাত বদল হয়ে কৃষকের হাতে সার যেতে দাম বেশি পড়ে যাচ্ছে। বরাদ্দ বেশি পেলে দাম স্বাভাবিক হবে।

এ বিষয়ে পাবনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. জামাল উদ্দিন বলেন, জেলায় সারের সংকট নেই। সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি মূল্যে বিক্রি করলে জেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টদের সহযোগিতায় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এসআর/এমএস