ফিচার

রসে টসটসে মঙ্গলবাড়িয়া লিচু

মঙ্গলবাড়িয়া লিচু। নাম শুনলেই জিভে জল এসে যায়। লাল টুকটুকে আর রসে টসটসে এ লিচু এক নামে প্রসিদ্ধ সারা দেশে। কম খরচে লাভ বেশি হওয়ায় দিন দিন বাড়ছে কিশোরগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী মঙ্গলবাড়িয়া লিচুর আবাদ। এ মৌসুমে মঙ্গলবাড়িয়া গ্রামে প্রায় দেড় কোটি টাকার লিচু বিক্রি লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। লাল টুকটুকে সুস্বাদু লিচুর রং আর গন্ধে মাতোয়ারা এখন পাকুন্দিয়া উপজেলার মঙ্গলবাড়িয়া গ্রাম।কিশোরগঞ্জ জেলা সদর থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে পাকুন্দিয়া উপজেলার মঙ্গলবাড়িয়া গ্রাম। গ্রামের নামেই লিচুর নাম। প্রায় তিন হাজার লোক অধ্যূষিত মঙ্গলবাড়িয়া লিচুর গ্রাম হিসেবেই পরিচিত। গ্রামের বেশিরভাগ মানুষের প্রধান পেশা লিচু চাষ। বাড়ির চারপাশে লিচুর বাগান। লিচু গাছ নেই, এমন বাড়ি খুঁজে পাওয়া যাবে না। ওই গ্রামের একজন সফল চাষি মো. শামসুদ্দিন। লিচুর আয় থেকে সংসার চালিয়েও ৫ মেয়েকে উচ্চ শিক্ষিত করে বিয়ে দিয়েছেন। মানুষ করেছেন, ৩ ছেলেকে। এখন তার চোখে-মুখে তৃপ্তির হাসি। বর্তমানে তার মালিকানায় রয়েছে বিশালাকৃতির ৬৫টি লিচু গাছ। প্রতি মৌসুমে ৫ থেকে ৮ লাখ টাকার লিচু বিক্রি করেন। তিনি জানালেন, লিচু গাছগুলো তার রোজগারক্ষম ছেলের চেয়েও বেশি উপকারী। লিচু চাষ করে তার যে আয় হয়, তা বছরে ১০ একর জমিতে উৎপাদিত ধানের চেয়ে বেশি।একই গ্রামের মো. তৌহিদ মিয়ার মালিকানায় এবার দেড় শতাধিক লিচু গাছ। তিনি এ এলাকার প্রথম সফল লিচু চাষি ও ব্যবসায়ি। তৌহিদ মিয়া জানালেন, এবার লিচুর বাম্পার ফলন হয়েছে। তবে মাঝে শিলা বৃষ্টি হওয়ায় কিছুটা ক্ষতি হয়েছে। এবার তিনি অন্তত ১২ লাখ টাকার লিচু বিক্রি করবেন বলে আশাবাদি। শুধুমাত্র শামসুদ্দিন কিংবা তৌহিদ মিয়াই নন, তাদের মতো এমন সফলতার খোঁজ মেলে মঙ্গলবাড়িয়া গ্রামের আনাচে-কানাচে। লিচু চাষ করে ভাগ্য বদলেছেন মঙ্গলবাড়ি গ্রামের অনেকেই।বড় আকৃতি, ছোট বীজ, রসে ভরপুর এবং সুস্বাদু হওয়ায় এ লিচুর কদর সবখানে। এখন লিচুর ভরা মৌসুম। আর তাই মঙ্গলবাড়িয়া গ্রামে চলছে উৎসবের আমেজ। গাছ থেকে লিচু পেড়ে গাছের নিচেই প্যাকেট করে সেখান থেকে পাঠানো হচ্ছে ঢাকা, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। বাগান থেকেই বিক্রি হয়ে যাচ্ছে বেশিরভাগ লিচু।            স্থানীয়রা জানান, প্রায় একশ বছর আগে মঙ্গলবাড়িয়া গ্রামের জনৈক হাশিম মুন্সি চীন থেকে একটি লিচুর চারা এনে তার বাড়ির আঙ্গিণায় রোপণ করেন। এভাবে এ উন্নত লিচুর জাত ছড়িয়ে পড়ে সারা গ্রামে। বর্তমানে মঙ্গলবাড়িয়ায় গ্রামে দেড় লাখেরও বেশি লিচু গাছ রয়েছে। প্রতি মৌসুমে গাছে মুকুল আসার পরই আগাম গাছ কিনে নেয় ব্যবসায়ীরা। পাকুন্দিয়ার শত শত মানুষ লিচু বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন। তারা পাকা লিচু প্রক্রিয়াজাত করে ডাঁটা ও পাতাসহ বেতের ঝুড়িতে প্যাকেট করে ঢাকার ওয়াইজঘাটে ও সিলেটের রেলগেটে পাঠান। প্রতি টুকরীতে এক হাজার থেকে ১২শ লিচু থাকে। প্রতি টুকরি লিচু বিক্রি হয় তিন থেকে সাড়ে ৪ অথবা ৫ হাজার টাকায়।এফএ/পিআর

Advertisement