পাবনার ঈশ্বরদীতে পরপর তিন দফা অতিবৃষ্টিতে আগাম শিমের (অসময়ের শিম) মারাত্মক ফলন বিপর্যয় হয়। উপজেলার ৯১০ হেক্টর আগাম শিমের জমি অধিকাংশ পানিতে ডুবে যাওয়ায় পোকার আক্রমণে গাছের গোড়া পচন ধরে পাতা শুকিয়ে হলুদ যায়। ঝরে যায় ফলন্ত শিম গাছের ফুল।
Advertisement
এক বিঘা জমিতে প্রতিদিন যেখানে ৪০-৫০ কেজি শিম সংগ্রহ করা যেত জলাবদ্ধতার কারণে ফুল ঝরে পরায় এক কেজি শিমও পাওয়া যাচ্ছিল না। ডুবে থাকা শিমক্ষেত থেকে পানি নিষ্কাশনের পর চাষিরা কীটনাশক ও সার ব্যবহারের পাশাপাশি ক্ষেত পরিচর্যা করায় অধিকাংশ শিম গাছ প্রাণ ফিরে পেয়েছে। দুই সপ্তাহ ধরে জমিতে শিমের ফলন শুরু হয়েছে। চাষিরা এখন নিয়মিত ক্ষেত থেকে শিম সংগ্রহ ও বাজারজাত করছেন। ফলে বর্ষায় ক্ষতিগ্রস্ত শিম চাষিদের মাঝে স্বস্তি ফিরতে শুরু করেছে। শিমের দাম ভালো পাওয়ায় চাষিরা আশার আলো দেখছেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, এ উপজেলা শিম চাষের জন্য প্রসিদ্ধ। ১৪০০ হেক্টর জমিতে শিমের আবাদ হয়েছে। এরমধ্যে আগাম শিমের আবাদ হয়েছে ৯১০ হেক্টর জমিতে। এবার প্রবল বর্ষণের কারণে শিমচাষিসহ যেসব কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তাদের উপজেলা কৃষি অফিস থেকে প্রণোদনা দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
শিম চাষিরা জানান, উপজেলার মুলাডুলি ইউনিয়নে প্রায় ২০ বছর ধরে বাণিজ্যিকভাবে শিম চাষ হয়।
Advertisement
শিম শীতকালীন সবজি হলেও এখানকার চাষিরা বেশি লাভের আশায় ৮ বছর ধরে আগাম জাতের রূপবান ও অটোজাতের শিম চাষ শুরু করেন। শীত মৌসুমের আগেই এ শিম বাজারে ওঠায় মূল্য বেশি পান। জ্যৈষ্ঠের শেষ ও আষাঢ়ের শুরুতে আগাম শিমের আবাদ শুরু হয়। ভাদ্র মাসের শুরুতেই আগাম শিমের ফলন শুরু হয়। এবার শ্রাবণ ও ভাদ্র মাসজুড়ে দফায় দফায় প্রচুর বৃষ্টিপাতের ফলে অধিকাংশ শিমক্ষেত পানিতে ডুবে যায়। এতে শিমের ফলন বিপর্যয় হয়। নির্ধারিত সময়ে ফলন না হওয়ায় চাষিরা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
আরও পড়ুনগাছের পাতা পোড়া রোগ হলে করণীয়সরেজমিনে উপজেলার শিমগ্রাম হিসেবে পরিচিত রামনাথপুর, শেখপাড়া, ফরিদপুর, গোয়ালবাথান ও বাঘহাছলা গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, শিমক্ষেতের পানি নিষ্কাশনের পর পরিচর্যা শুরু করেছে চাষিরা। সার ও কীটনাশক ব্যবহার করে মৃতপ্রায় শিম গাছ অনেকটা সবল হয়ে উঠতে শুরু করেছে। গাছে গাছে ফুটেছে ফুল। থোকায় থোকায় শিম ধরছে। চাষিরা জমি থেকে শিম সংগ্রহ করে তা বিক্রি শুরু করেছেন। শিমের দাম ভালো পাওয়ায় কৃষকরা ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার স্বপ্ন দেখছেন।
উপজেলার মুলাডুলি ইউনিয়নের বাঘহাছলা গ্রামে শিম চাষি সোহেল রানা জাগো নিউজকে বলেন, ‘আগাম শিমচাষে অন্যান্য বছর খরচ বাদে আমাদের বেশ লাভ হয়। এবার আগাম শিমের ফুল আসার পর থেকে টানা বর্ষণে জলাবদ্ধতার ফলে ক্ষেতের ব্যাপক ক্ষতি হয়। জমি থেকে পানি নিষ্কাশনের পর কীটনাশক স্প্রে ও পরিচর্যার পর আবারো ফলন শুরু হয়েছে। এখন শিমের বাজারদর ভালো। আর কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে ক্ষতি কিছুটা হলেও পুষিয়ে নিতে পারবো।’
একই গ্রামের কৃষক এনামুল হক এলিন বলেন, ‘বর্ষার কারণে ক্ষেত ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় এতদিন শিমের ফলন হয়নি। শিমের বাজারদর কিছুটা কমেছে তবুও পাইকারি ১৩০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। জমিতে জলাবদ্ধতা না হলে এতদিন শিম চাষের খরচ উঠে আরও লাভ হতো।’
Advertisement
রামনাথপুর গ্রামের শিমচাষি রায়হান আলী বলেন, ‘এবার শিম আবাদের পর নানান দুর্যোগ পোহাতে হয়েছে। ভেবেছিলাম পুরো আবাদ নষ্ট হয়ে যাবে। আল্লাহ রহমতে এখন আবার ফলন শুরু হয়েছে। শিম বিক্রি কয়েক দফা ১৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছি। শিমের বাজারদর না কমলে চাষিরা ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে নিতে পারবে।’
উপজেলার মুলাডুলি আমবাগান কাঁচামালের আড়তদার আলম ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী সুজন শেখ বলেন, ‘আগাম জাতের শিম আড়তে স্বল্প পরিমাণে উঠতে শুরু হয়েছে। প্রবল বর্ষণের ফলে এবার কৃষকরা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তা নাহলে এখন আগাম শিমের পূর্ণ মৌসুম। প্রতিদিন এ আড়ত থেকে কমপক্ষে ৩০-৩৫ ট্রাক শিম ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন আড়তে যেত। এখন শিম ও ঢ্যাঁড়শ মিলে ২০-২২ ট্রাক যাচ্ছে। আশাকরি আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে শিমের বেচা-কেনা জমজমাট হবে। আড়তে শিম ১২৫-১৩০ টাকা কেজি দরে বেচাকেনা হচ্ছে।’
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মিতা সরকার জাগো নিউজকে বলেন, ‘দুই সপ্তাহের টানা বৃষ্টিতে উপজেলার বেশ কিছু এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হওয়ায় শিমসহ আগাম জাতের সবজির ক্ষতি হয়েছে। জলাবদ্ধতা নিরসনের পর নতুন উদ্যমে আবার চাষাবাদ শুরু করেছে। আমাদের মাঠ পর্যায়ে যারা কৃষি কর্মকর্তারা রয়েছেন তারা নানানভাবে পরামর্শ দিয়ে কৃষকদের সহযোগিতা করছেন। উপজেলা কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে যারা জলাবদ্ধতার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তাদের রবি প্রণোদনার আওতায় আনা হয়েছে। তাদের প্রণোদনা প্রদানের মাধ্যমে ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছি।’
আরও পড়ুনআলু চাষে সার এবং সেচ ব্যবস্থাপনাধান ক্ষেতে ব্লাস্ট রোগের আক্রমণ, দুশ্চিন্তায় কৃষকশেখ মহসীন/কেএসকে/জেআইএম