সাহিত্য

গোপাল রায়ের একগুচ্ছ কবিতা

৩৬০ ডিগ্রি

Advertisement

পোয়াতি ধানের মাঞ্জায় শিশির মেখে দেয় ভোর নিশিকন্যা;শেফালি বাতাসে টোন খায় মাকড়সার জাল,পলিমাটির সোঁদা গন্ধে মাথা চিতোয় বিন্নাঘাসতাতে শামুকভাঙা খোলসে বাসা বাঁধে গুবড়ে পোকার দলআর স্বর্ণা ধানের বুক ফেটে বের হওয়া সাদা খৈ বদলে যায় সোনালি গুড়ের সাটায়!মাছরাঙার অপেক্ষা প্রহরে ডুব দেয় পানকৌড়ি;শিশির ও ঝরাপাতার বদৌলতে সময় ৩৬০ ডিগ্রি বরাবর ঘুরে এসে-সাদা কাশফুলের মতো সাদা করে দেয় মায়ের মাথার চুল!

**** কাক

প্রেমের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া শেষে তুমি হবিষ্যি ভাত ছিটিয়ে যে কাকের আহ্বান করেছিলে সেসব কাকের মধ্যে আমিও একটি কাক ছিলাম! পুনরায় ভালোবেসে ডেকেছিলাম কা কা...!

Advertisement

তোমার পায়ের আঙুলে ঠোঁকর মারতেই তুমি পুনরায় হুস করে তাড়িয়ে দিয়েছিলে, তাই হৃদয় আসন এখনো ফাঁকা!

****

ভাষা

টাটা দিতে ভয় করেদিচ্ছি না তাই,টাটা দিলে চলে যাওপরে থাকি একাই!

Advertisement

ভালোবাসা পরে থাকেপরে যায় স্তূপে চাপা,বোঝেনি সে সেই ভাষাধ্বনি থাকে না তাতে-থাকে হৃদয় ও ঠোঁট কাঁপা!

****

আগমনী বার্তা

ফাটল ধরে পাঁচিলে, ঘুনে খায় বাঁশের মাড়ল কাবাড়ি পোইগোবরের গৈঠা জ্বালে বল্লার টোপের মত ফুটে ওঠে মুড়ি ও খৈ।

কবে যাবে বউমেলা পরে পুতির মালা ও কুচি করে কাতানএই ভেবে কাক তাড়ায় আর বেছে ফেলে খৈয়ের পাতান।

মুড়ির মোয়া হয়, খৈগুলো সেটে যায় লাল ও হলুদ গুড়ে;মায়ের জন্য কাঁদে শিশুটি আর মাটির ঢেলা খায় কুড়ে কুড়ে।

শিশুর হামাগুড়ি কান্না থেমে যায় মায়ের দুধের বোঁটায়যেন বিধ্বস্ততা ভেসে যায় তিলক আর খড়িমাটির ফোঁটায়।

আলের ঘাসের পাতায় পাতায় শিশির চিতিয়ে দেয় বুক,কাদামাটির কৌমে উজ্জ্বল হয় কলমি লতার মুখ।

তুমুল বৃষ্টি, ভয়ংকর ঝড় কিংবা রোদের নেই কোনো ঠাঁই;কাশফুল ও সাদা মেঘে মেঘে মায়ের আগমনী বার্তা পাঠাই।

****

সত্যের পতাকায় ওড়াও আমাকে

আমি ছুটতে চেয়েছি দূর-দূরন্তে সুন্দরের ’পরআমাকে ভাসিয়ে নাও বেহুলা তোমার অজয় ভেলায়সর্প দিয়েছে বিষ হয়ে আছি মৃত লখিন্দর কালঘুম থেকে উত্তরায় নাও ভালোবাসার খেলায়।

আমার জন্মের পর কেটে নেওয়া হয়েছে বৃদ্ধাঙ্গুলতাকাতে পারিনি চোখ ঝলসে দিয়েছে অলক্ষ্য জ্যোতিআমাকে মেরে ফেলা হয়েছে শুকিয়ে কাল ফুলআত্মা থেকে হাড্ডি পরিশ্রান্ত তবু হয়নি নাকি কোনো ক্ষতি!

চোখের মঞ্চে মঞ্চায়িত হতো যে সবুজের অহমিকা তেপান্তর থেকে রণাঙ্গন ছুটতাম যে দিগ্বিদিকহৃদয়ের দোদ্যুলে জ্বলতো যে অমিয় শিখাজাহাজ ফেরার পথে আমি এখন ডুবন্ত নাবিক।

হে সত্য, হে প্রকৃতি, হে আলোকোজ্জ্বল অমিয় বাণীসত্যের পতাকায় ওড়াও আমাকে ঘুচিয়ে সব গ্লানি।

এসইউ/এমএস