রাজধানীতে উল্টো পথে গাড়ি চলাচল বন্ধে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ‘চাকা পাংচার’ মিশন ব্যর্থ হয়েছে। যানজট নিরসন ও উল্টো পথে গাড়ি চলাচল বন্ধে এ উদ্যোগ প্রশংসিত হলেও কিছুদিন না যেতেই যন্ত্র বিকল হয়ে প্রকল্প আকারে চালু এ কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়।ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীতে যানজট নিরসন ও দুর্ঘটনা এড়াতে উল্টো পথে যানবাহন চলাচল বন্ধে ২০১৪ সালের ২৩ মে তৎকালীন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজি) হাসান মাহমুদ খন্দকার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সদর দফতরের সামনের রাস্তায় পরীক্ষামূলকভাবে প্রথম প্রতিরোধক যন্ত্র বসানোর কাজ উদ্বোধন করেন। সে সময় ৩ দিন না যেতেই প্রতিরোধক যন্ত্রের দাঁত যায় ভেঙে, অচল হয়ে যায় যন্ত্রটি। পরে তা সরিয়ে নিতে বাধ্য হয় ট্রাফিক বিভাগ। এরপর সেই বছরের ২২ নভেম্বর আবারো ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সদর দফতরের সামনের সড়কে ওই প্রতিরোধক যন্ত্রটি বসানো হয়। মাস ছয়েক প্রতিরোধক যন্ত্রের উপর দিয়ে স্বাভাবিকভাবে গাড়ি চলাচল করে। তবে সম্প্রতি আবারো যন্ত্রটির সবগুলো দাঁত ভেঙ্গে যায়। অবশ্য কৌশলগতভাবে ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগ প্রতিরোধক যন্ত্রের দাঁত যেন ভেঙ্গে না যায় সেজন্য ৩ ফুট দূরে বসিয়েছিল আলাদা স্পিড ব্রেকার (গতিরোধক)। তবুও কাজে আসেনি।পুলিশ কর্মকর্তারা বলেন, রাজপথে যানজটে এড়াতে অনেকেই বিরক্ত হয়ে যানবাহন নিয়ে উল্টো পথে চলাচল করেন। কোনো কোনো অপরাধী উল্টো পথে গাড়ি হাকান। কিন্তু উল্টো পথে গাড়ি চালানো ট্রাফিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রতিরোধ যন্ত্রটির ধারালো কাঁটা ৪৫ মিলিমিটার পরপর রাস্তার উপর ৩ ইঞ্চি উঁচু। সোজা পথে চলা গাড়ির চাকা চাপ দিলেই তা নিচু হয়ে যেতো। গাড়ি যাওয়ার পরপরই কাঁটাগুলো দাঁড়িয়ে যাবে আবার। উল্টো দিক থেকে আসা গাড়ি কাঁটার ওপর চাপ দিলেই তার সূচালো অগ্রভাগ চাকার ভেতর ঢুকে যাবে এবং টায়ার ফুটো করে দিতো। প্রতিরোধক যন্ত্রটি স্পিড ব্রেকার হিসেবে কাজ করবে। এর ওপর দিয়ে চলাচল করতে হবে ধীরগতিতে। যন্ত্রের প্রতিটি ধারালো কাঁটায় আলাদা-আলাদাভাবে স্প্রিংয়ের চাপ রয়েছে। ফলে এক বা একাধিক কাঁটা চেপে ধরলেও বাকিগুলো নামবে না। প্রতিটি কাঁটাকে নিচু করতে ৮-১০ কেজি প্রেসারের প্রয়োজন হবে। ট্রাফিক (দক্ষিণ) বিভাগের পূর্বের দেয়া তথ্য অনুযায়ী সবকিছু ঠিক থাকলে হয়তো প্রকল্পটি টিকে যেতো। তবে যন্ত্রটি দেশীয় কোম্পানির কাছ থেকে নিয়ে পরীক্ষামূলক চালু করায় টিকেনি বলে দাবি করছে পুলিশ। ডিএমপির মুখপাত্র অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, বিদেশ থেকে ওই প্রযুক্তি আমদানি করতে হলে কোটি টাকা খরচ হতো। তাই দেশীয় প্রযুক্তিতে ২৮ ফুট দৈর্ঘ্যের প্রতিরোধ যন্ত্রটি প্রায় পাঁচ লাখ টাকায় নির্মাণ করা হয়। রাজধানীর ধোলাইখালের সোহেল মেটাল অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি এটি তৈরি করে দিয়েছিল। তিনি বলেন, পরীক্ষামূলকভাবে পাইলট প্রকল্পের আওতায় প্রতিরোধক যন্ত্রটি বসানো হয়েছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে টিকেনি। মনিরুল ইসলাম দাবি করেন, প্রকল্পটি ব্যর্থ না সফল তার চেয়ে বড় বিষয় ছিল আমরা সচেতনতা বাড়িয়েছিলাম, আমরা চেয়েছিলাম উল্টোপথে চলতে গিয়ে মানুষ যেন দুর্ঘটনা ডেকে না আনে, আইন যেন লঙ্ঘন না করে। এজন্য আমরা এক মাস শুধু প্রচারপত্র বিলি করে জনসচেতনতাও তৈরি করেছিলাম। কিন্তু মানুষ আইন মানে না। যন্ত্রটি নষ্ট হয়ে যাওয়ার সাথে সাথে মানুষও উল্টোপথে চলা শুরু করেছে। বিকল্প কি ট্রাফিক বিভাগ পদক্ষেপ নিচ্ছে না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা আপাতত জনসচেতনাকেই অধিক গুরুত্ব দিচ্ছি।জেইউ/এসএইচএস/এআরএস/আরআইপি
Advertisement