রাজনীতি

‘জামায়াতকে নিষিদ্ধ করা প্রয়োজন, কিন্তু এটাই যথেষ্ট নয়’

‘জামায়াতকে নিষিদ্ধ করা প্রয়োজন, কিন্তু এটাই যথেষ্ট নয়। সাম্প্রদায়িক রাজনীতি বন্ধ করতে হবে। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ফেরত যেতে হবে।’

Advertisement

জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধের বিষয়ে জাগো নিউজকে একথা বলেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম।

স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) প্রথম সহ-সভাপতির (ভিপি) সঙ্গে জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ, সম্প্রতি কোটা সংস্কার আন্দোলনে প্রাণহানিসহ কথা হয় সমসাময়িক বিষয়ে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সালাহ উদ্দিন জসিম।

কে বেশি ইসলাম পছন্দ করে এটা নিয়ে বিএনপি-আওয়ামী লীগ প্রতিযোগিতা করছে। জামায়াতসহ এসব সাম্প্রদায়িক শক্তি একবার আওয়ামী লীগের কাঁধে বন্দুক রাখে আবার বিএনপির কাঁধে বন্দুক রাখে। এভাবেই তারা তাদের ষড়যন্ত্র কার্যকর করছে। সমস্যা এখানেই

Advertisement

জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ ঘোষণা হয়েছে, আপনার প্রতিক্রিয়া কী?

জামায়াত তো একাত্তর সাল থেকেই নিষিদ্ধ। ১৬ ডিসেম্বর থেকে নিষিদ্ধ সংগঠন। পাকিস্তান সেনাবাহিনী যেমন নিষিদ্ধ, জামায়াতে ইসলামীও নিষিদ্ধ সংগঠন। আত্মসমর্পণ দলিলে এটা লেখা আছে। কথা এটা নয়, কথা হলো- সাম্প্রদায়িকতাকে সরকার মদত দেবে, নাকি দেবে না? সংবিধানে একটা বিধান ছিল- ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল করা যাবে না।

আরও পড়ুন

জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ, গেজেট জারি আলোচনার পর জামায়াত নিয়ে মন্তব্য: ফখরুল অন্য ব্যানারে এলেও জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ হবে: ইনু

জিয়াউর রহমান এটা বদলিয়ে দিয়েছেন। সেই পরিবর্তিত ভার্সনটাই আরেকটু ঘষামাজা করে আওয়ামী লীগ বহাল রেখেছে। কে বেশি ইসলাম পছন্দ করে এটা নিয়ে বিএনপি-আওয়ামী লীগ প্রতিযোগিতা করছে। জামায়াতসহ এসব সাম্প্রদায়িক শক্তি একবার আওয়ামী লীগের কাঁধে বন্দুক রাখে আবার বিএনপির কাঁধে বন্দুক রাখে। এভাবেই তারা তাদের ষড়যন্ত্র কার্যকর করছে। সমস্যা এখানেই।

এ সমস্যার সমাধান কীভাবে হবে?

ওদের (বিএনপি ও আওয়ামী লীগ) ওপর নির্ভর করে এ বিপদ মোকাবিলা করা যাবে না। একটা সাংস্কৃতিক বিপ্লব, মতাদর্শগত বিপ্লবের মধ্য দিয়ে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ফেরত যেতে হবে। সেটা হলো- রাষ্ট্রের চার মূলনীতি: সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা, গণতন্ত্র ও জাতীয়তাবাদ। জামায়াতকে নিষিদ্ধ করা প্রয়োজন, কিন্তু কেবল এটাই যথেষ্ট নয়। অনেক আগেই এটা করার দাবি করা সত্ত্বেও করা হয়নি। এটা নিয়ে ভোটের খেলা, খেলা হয়েছে। মূল কথা হলো- সাম্প্রদায়িক রাজনীতি বন্ধ করতে হবে। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ফেরত যেতে হবে।

Advertisement

জামায়াতকে নিষিদ্ধ করা প্রয়োজন, কিন্তু কেবল এটাই যথেষ্ট নয়। অনেক আগেই এটা করার দাবি করা সত্ত্বেও করা হয়নি। এটা নিয়ে ভোটের খেলা, খেলা হয়েছে। মূল কথা হলো- সাম্প্রদায়িক রাজনীতি বন্ধ করতে হবে

এখন যে পরিস্থিতি, সেটার জন্য আপনার পরামর্শ কী?

শেখ হাসিনা সরকারের পক্ষ থেকে একটা ঘোষণা আসা উচিত যে, আমি বলেছি, সাম্প্রতিক হত্যাকাণ্ড ও এসব সহিংসতার বিচার আমি জনতার কাছে দেবো। তো জনতার কাছে বিচারের ভার দিয়ে আমি ক্ষমতা ছেড়ে দিচ্ছি। জনতা বিচারের রায়ে আমাকে সমর্থন দেয় কি দেয় না, বা অন্য কাউকে দেয় কি না, সেটা যাতে ঠিকমতো নির্ধারণ হয়, তার জন্য রূপরেখা তৈরি করে দেওয়া উচিত। এরশাদ সাহেবের সময় যেমন সবাই মিলে রূপরেখা তৈরি করা হয়েছিল, এখনো আমরা সবাই মিলে একটা রূপরেখা তৈরি করবো। তাহলে শান্তিপূর্ণভাবে আমরা একটা জবাবদিহিমূলক সরকার পাবো এবং গোটা রাষ্ট্র ব্যবস্থায় যে নৈরাজ্য সৃষ্টি হয়েছে এরই মধ্যে, সেটা বন্ধ হবে। যে নৈরাজ্য থেকে বের হওয়ার কোনো উপায় নেই। এই সরকারেরও নেই। বিএনপিরও নেই। যারা ইদানীং ক্ষমতায় গেছে, ওইসব অপশক্তি খুশি করা ছাড়া ক্ষমতায় থাকতে পারবে না। অতএব, আমি মনে করি এটাই সমাধানের পথ। ক্ষমতা ছেড়ে সবার সমন্বয়ে একটা রূপরেখা তৈরি করে দেওয়া।

বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে গেজেট জারি করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও দলটির ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির নিষিদ্ধ করেছে সরকার। এতে বলা হয়, সরকারের কাছে যথেষ্ট তথ্যপ্রমাণ রয়েছে যে, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এবং এর অঙ্গ সংগঠন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির সাম্প্রতিককালে সংঘটিত হত্যাযজ্ঞ, ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে সরাসরি এবং উসকানির মাধ্যমে জড়িত ছিল। সরকার বিশ্বাস করে, জামায়াত-শিবিরসহ এর সব অঙ্গ সংগঠন সন্ত্রাসী কার্যকলাপের সঙ্গে জড়িত। তাই ‘সন্ত্রাসবিরোধী আইন, ২০০৯’ এর ধারা ১৮(১) এ দেওয়া ক্ষমতাবলে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এবং বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরসহ এর সব অঙ্গ সংগঠনকে রাজনৈতিক দল ও সংগঠন হিসেবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করলো।

এসইউজে/এএসএ/এএসএম