মৃত ব্যক্তি জীবিতদের জন্য দোয়া করতে পারে না। বরং তারা জীবিতদের দোয়া ও নেক আমলের অপেক্ষা করে। মৃত্যুর সাথে সাথে মানুষের আমলের সুযোগ বন্ধ হয়ে যায়। শুধু দুনিয়ায় করে যাওয়া তাদের যেসব আমলের প্রভাব মৃত্যুর পর বাকি থাকে, সেগুলোর সওয়াব তারা পায় এবং আত্মীয়-স্বজনদের দোয়া তাদের উপকারে আসে । আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন,
Advertisement
إِذَا مَاتَ ابْنُ آدَمَ انْقَطَعَ عَمَلُهُ إِلاَّ مِنْ ثَلاثٍ : صَدَقَةٍ جَارِيَةٍ، أَوْ عِلْمٍ يُنْتَفَعُ بِهِ أَوْ وَلَدٍ صَالِحٍ يَدْعُو لَهُ
আদম সন্তান যখন মারা যায়, তখন তার তিন প্রকার আমল ছাড়া অন্য সব রকম আমলের ধারা বন্ধ হয়ে যায়; সাদকায়ে জারিয়া (মসজিদ নির্মাণ করা, কূপ খনন ক’রে দেওয়া ইত্যাদি দান যেগুলোর ফায়দা বাকি থাকে) অথবা এমন ইলম যা দ্বারা উপকৃত হওয়া যায় অথবা সুসন্তান যে তার জন্য নেক দোয়া করতে থাকে। (সহিহ মুসলিম: ৪৩১০)
জীবিতরা মৃতদের জন্য দোয়া করতে পারে এবং নেক আমল করে তাদের রুহের জন্য সওয়াব পাঠাতে পারে। জীবিতরা কবর জিয়ারত করলে কবরে শুয়ে থাকা মৃত ব্যক্তি জীবিতদের উপস্থিতি বুঝতে পারে, তাদের সালাম শোনে ও উত্তর দেয়। আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন,
Advertisement
ما من مسلم يمر بقبر أخيه كان يعرفه في الدنيا فَيُسَلم عليه إلا رد الله عليه روحه حتى يرد عليه السلامযখন কোনো মুসলিম ব্যক্তি দুনিয়াতে পরিচিত তার কোনো মৃত ভাইয়ের কবরের পাশে দাঁড়ায় এবং তাকে সালাম দেয়, তখন তার সালামের উত্তর দেওয়ার জন্য আল্লাহ তার রুহ ফেরত দেন। (আল-ইসতিযকার: ১/১৮৫)
কবর জিয়ারত করা, কবরস্থানে গিয়ে মৃত মুসলমানদের জন্য দোয়া করা ও মৃত্যুর কথা স্মরণ করা সুন্নাত ও সওয়াবের কাজ। রাসুল (সা.) মাঝে মাঝেই সাহাবিদের কবরস্থান জান্নাতুল বাকিতে যেতেন এবং বেশ কিছুক্ষণ সেখানে অবস্থান করতেন, কবরবাসীদের জন্য দোয়া করতেন।
কবরস্থানে গিয়ে অতিরিক্ত আবেগ প্রকাশ ও শরিয়ত-নিষিদ্ধ কাজকর্ম ঠেকাতে একবার রাসুল (সা.) কবর জিয়ারত করতে নিষেধ করেছিলেন। পরবর্তীতে সেই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নিয়ে তিনি বলেন,
كُنْتُ نَهَيْتُكُمْ عَنْ زِيَارَةِ الْقُبُورِ فَزُورُوهَا فَإِنَّهَا تُزَهِّدُ فِي الدُّنْيَا وتذكر الْآخِرَةআমি তোমাদেরকে কবর জিয়ারত করতে নিষেধ করেছিলাম। এখন থেকে তোমরা কবর জিয়ারত কর। কারণ কবর জিয়ারত দুনিয়ার আকর্ষণ কমিয়ে দেয় ও পরকালের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। (সুনানে ইবনে মাজা: ১৫৭১)
Advertisement
কবর জিয়ারতের নিয়ম হল মাইয়েতের চেহারার দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে সালাম দেওয়া। তারপর মৃতের সওয়াবের উদ্দেশ্যে কোরআন তিলাওয়াত করা বা দরুদ শরিফ ও বিভিন্ন দোয়া পড়া। হাদিসে যে সব সুরা বা আয়াতের বিশেষ ফজিলত বর্ণিত রয়েছে যেমন সুরা ফাতেহা, আয়াতুল কুরসী, সুরা ইখলাস তিলাওয়াত করে মৃতের জন্য সওয়াব পাঠানো যায়।
ওএফএফ/এএসএম