কৃষি ও প্রকৃতি

পান চাষে দিন বদল, কৃষকের মুখে হাসি

উৎপাদন খরচ কম ও বহুবর্ষজীবী হওয়ায় পান চাষে আগ্রহ বাড়ছে শেরপুরের কৃষকদের। এক সময় শুধু সদর উপজেলার কিছু এলাকায় পান চাষ হলেও এখন ছড়িয়েছে পার্শ্ববর্তী নকলা উপজেলার কৃষকদের মাঝেও। পানের বরজে ভাগ্যের চাকা ঘুরে হাসি ফুটেছে অনেক কৃষকের মুখে। কৃষি বিভাগ বলছে, আগ্রহী পান চাষিদের নিয়মিত পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

Advertisement

কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, প্রতি বছরই শেরপুরে বাড়ছে পানের চাষ। গত বছর ৩৪ হেক্টর জমিতে ৪০৮ মেট্রিক টন পান উৎপাদিত হয়েছে। যা এবার আরও বাড়বে বলে প্রত্যাশা সংশ্লিষ্টদের।

শেরপুর সদর উপজেলার সূর্যদীর আমির হোসেন কিশোর বয়স থেকে অভাব ঘোচাতে শুরু করেন পান চাষ। কম পুঁজিতে দীর্ঘমেয়াদী আয়ের পথ খুঁজে পান। ৫ শতাংশ জমিতে ৬ বছর আগে এককালীন আড়াই লাখ টাকা খরচ করে প্রতি বছর আয় হয় দেড় লাখ টাকা। তার বাবা-দাদাও পান চাষ করতেন। পান চাষই তাদের প্রধান জীবিকা। এতেই সংসার চলে।

শেরপুর সদরের সূর্যদী, রৌহা, কামারিয়াসহ নকলা উপজেলার অন্তত ২ হাজার পরিবারের মূল নির্ভরতা পান চাষে। প্রতি সপ্তাহের ২ দিনের হাটে ১ একর জমির পানের বরজ থেকে আয় হয় ১৫ হাজার টাকা।

Advertisement

আরও পড়ুন: কিশোরগঞ্জের হাওরে মাসকলাই চাষে সাফল্য

কৃষক আলী হোসেন বলেন, ‘আমগো গ্রামের সত্তর শতাংশ ঘরেই পানের বরজ আছে। এক কুর (একর) জমি থেকে প্রতি সপ্তাহে দুইবার করে ১৫-১৬ হাজার টাকা বিক্রি করি। বছরে প্রায় দেড়-২ লাখ টাকা আয় হয়।’

কৃষক পনির মিয়া বলেন, ‘একবার বরজ তুলতে পারলে ১০-১৫ বছর থাকে। কোনো বালা-মুসিবত না হলে পানের বরজে তেমন কোনো খরচ হয় না।’

এলাকার উৎপাদিত পান যাচ্ছে বিভিন্ন এলাকায়। পাইকারি দরে পান কিনে দেশের বিভিন্ন বাজারে সরবরাহ করেন পাইকাররা। স্থানীয় ৫টি বাজারে বেচাকেনা হয় কোটি টাকারও বেশি।

Advertisement

নেত্রকোণার আমিনুল পাঠান এসেছেন পান কিনতে। তিনি বলেন, ‘এখানে টাটকা পান পাওয়া যায়। এখান থেকে পান কিনে বিভিন্ন আড়তে বিক্রি করি। কম দামে ভালো মানের পান পাওয়া যায়।’

আরও পড়ুন: পড়াশোনার পাশাপশি স্কোয়াস চাষে সফল মনজুরুল

পাইকারি ব্যবসায়ী ছমির মিয়া বলেন, ‘ভোরে এই বাজার বসে। এলাকায় তিনটি পানের বড় বাজার আছে। একদম সতেজ পান পাওয়া যায়। এ বাজারের পানের চাহিদাও বেশি। এখান থেকে পাইকাররা পান কিনে দেশের বিভিন্ন বাজারে পাঠায়।’

শেরপুর খামারবাড়ির উপপরিচালক ড. সুকল্প দাস বলেন, ‘পান অর্থকরী ফসল। শেরপুরের উৎপাদিত পান বিভিন্ন অঞ্চলে বিক্রি হয়। চাহিদাও বেশ ভালো। আমাদের কর্মীরা পান চাষিদের বিভিন্ন সময় পরামর্শ দিয়ে আসছেন। যে কোনো সমস্যায় চাষিরা যোগাযোগ করলে আমরা সর্বোচ্চ সহযোগিতা করবো।’

ইমরান হাসান রাব্বী/এসইউ/এসএম