কৃষি ও প্রকৃতি

বেকারত্ব ঘুচিয়ে আব্দুল মান্নান এখন সফল খামারি

২০১৬ সালে ছোট্ট পরিসরে খামারের শুরু করেন আব্দুল মান্নান। কঠোর পরিশ্রম, সততা, নিষ্ঠার ওপর ভর করে তিনি এখন সফল খামারি। তার দেখাদেখি খামার গড়ে তুলেছেন অনেকেই। বেকারত্ব ঘুচিয়ে তিনি এখন সফল উদ্যোক্তা। নাম দিয়েছেন ‘মান্নান এগ্রো ফার্ম’।

Advertisement

আব্দুল মান্নান চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার সাহেরখালী ইউনিয়নের সাহেরখালী ভোরের বাজার এলাকার মো. আমির হোসেনের ছেলে। ২০০৩ সালে উপজেলার নিজামপুর সরকারি কলেজ থেকে স্নাতক পাস করে পড়াশোনার ইতি ঘটান। এরপর একটি এমএলএম কোম্পানিতে যুক্ত হয়ে বড় ক্ষতির মুখে পড়েন। ওই সময় পরিবারের লোকজনেরও আস্থা হারান।

বেকারত্বের সেই কঠিন সময়ে কৃষিতে পেশা গড়ার ব্যাপারে মন স্থির করেন মান্নান। ১০১৬ সালে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর চট্টগ্রাম থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে বাড়ির পাশে সমন্বিত খামার করেন। পারিবারিক দেড় বিঘা জমির ওপর যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে পাওয়া ৫০ হাজার টাকার সঙ্গে বন্ধু-বান্ধবের কাছ থেকে ধার করা আরও কিছু টাকায় খামারের কাজ শুরু করেন। আম্রপালি, হিমসাগর, হাঁড়িভাঙা, ফজলিসহ ১৫ জাতের আমের চারা রোপণ করেন।

আরও পড়ুন: সুপারির খোল দিয়ে বাসন তৈরি করে সফল আকরাম

Advertisement

এখন ৯০ শতক জায়গাজুড়ে শুধু আমের বাগান। আছে ব্যানানা, মধুরানি, দেউরি, বারি-৪সহ প্রায় ৩০ প্রজাতির আম গাছ। শুধু আম বাগান নয়, মান্নানের খামারে আছে পেঁপে, কলা, ভিয়েতনামি নারিকেল, লাউ, কুমড়া, মরিচ, ঢ্যাঁড়শসহ নানা সবজি। তিনি জমিতে ধানও চাষ করছেন। ১টি ছাগল দিয়ে শুরু করে এখন খামারে আছে বিভিন্ন জাতের ২২টি ছাগল। তার আগে ১৪টি ছাগল বিক্রি করেছেন। আছে হাঁস ও গরুর খামার। মান্নানের খামারের সবজি ও ফল বিষমুক্ত। তাই স্থানীয়দের মাঝে ভালো চাহিদা আছে।

আব্দুল মান্নান বলেন, ‘এ বছর ২ লাখ টাকার আম বিক্রি করেছি। আরও কিছু বিক্রি করতে পারবো। সারাবছর বিভিন্ন শাক-সবজি, ফল-মূল বিক্রি করি। খামারে উৎপাদিত পণ্য বাজারে নেওয়ার প্রয়োজন হয় না। এখানে বিক্রয়কেন্দ্র আছে, সেখান থেকে লোকজন কিনে নিয়ে যায়।’

তিনি বলেন, ‘শুরুটা অত সহজ ছিল না। পরিবারের সদস্যসহ আশপাশের লোকজন তিরস্কার করেছেন। শিক্ষিত ছেলে কৃষিকাজ করবে! সব বাধা অতিক্রম করে এ পর্যায়ে এসেছি। আমার পরামর্শে ও সার্বিক সহযোগিতায় ৮-১০ জন আম বাগান গড়ে তুলেছেন। তাদের মধ্যে অন্যতম মায়ানী এলাকার আবুল হোসেন বাবুল ভাই এবং ডোমখালী এলাকার মোস্তাফিজুর রহমান লিটন ভাই।’

আরও পড়ুন: লবণাক্ত মাটিতে কেনাফ চাষে সফলতার আশা

Advertisement

সাহেরখালীর ভোরেরবাজার এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, আব্দুল মান্নান আম ও গাছের পরিচর্যা করছিলেন। তিনি বলেন, ‘এটা কলমের মাধ্যমে সম্ভব হয়েছে। এক গাছে কয়েক প্রজাতির আম ফলানো জনপ্রিয় প্রদ্ধতি। আম পোকামুক্ত রাখতে কোনো প্রকার কীটনাশক ও মেডিসিন ব্যবহার না করে প্রতি গাছে কৌটার মধ্যে ফাঁদ পেতেছি। এতে কৌটায় রাখা পানিতে পড়ে পুরুষ পোকা মারা যায়। তাতে বংশ বৃদ্ধি সম্ভব হয় না।’

মিরসরাই উপজেলা কৃষি অফিসার প্রতাপ চন্দ্র রায় বলেন, ‘সাহেরখালীর মান্নান এগ্রোর কথা শুনেছি। তার খামারে যাওয়ার ইচ্ছা আছে। সময়ের অভাবে যেতে পারছি না। শিগগির মান্নান এগ্রো পরিদর্শন করতে যাবো।’

এসইউ/জেআইএম