কৃষি ও প্রকৃতি

যশোরে সাড়া ফেলেছে মিষ্টি আঙুর

যশোরের লেবুতলায় ফলেছে মিষ্টি আঙুর। বিশাল ক্ষেতে এই মিষ্টি আঙুর চাষ করে সাড়া ফেলে দিয়েছেন কৃষক মুনসুর আলী। তার এক বিঘার ক্ষেতে থোকায় থোকায় ঝুলছে আঙুর। তা দেখতে যেমন মানুষ ভিড় করছেন। আঙুর চাষের পরামর্শ ও চারা সংগ্রহ করছেন বিভিন্ন এলাকার কৃষকেরা। এ অঞ্চলের মাটিতে আঙুর চাষ করতে দেখে একসময় যারা মুনসুরকে পাগল সাব্যস্ত করেছিলেন; এখন তারাই হতবাক হয়ে তার গুণগান গাইছেন।

Advertisement

যশোর সদর উপজেলার লেবুতলা গ্রামের কৃষক মুনসুর আলী। তিনি এর আগে দেশের বিভিন্ন নার্সারি থেকে কলম বা চারা কিনে লাগালেও ফল পাননি। কখনো কিছু ফল পেলেও তা ছিল খুবই টক এবং পরিমাণেও কম ছিল। সর্বশেষ ২০ মাস আগে তিনি ৩৩ শতক জমিতে ভারতীয় চয়ন জাতের আঙুরের চারা রোপণ করেন। ইউটিউব দেখে উদ্বুদ্ধ হয়ে ১২০টি চারা এনে জমিতে রোপণ করেন। চারা রোপণের ৭ মাস পর গাছে ফল আসে। এই ইন্ডিয়ান আঙুর মিষ্টি ছিল বলে তিনি জানান।

কৃষক মুনসুর আলী জানান, ভারত থেকে প্রতিবেশীর মাধ্যমে চারা এনে এই চাষ শুরু করেন। প্রথমবার ৭ মাসের মাথায় গাছগুলোয় আঙুর ধরেছিল এবং ৫-৭ মণ ফল পান। তবে প্রথম ফল পাওয়ায় একটিও বিক্রি না করে এলাকার মানুষকে বিলিয়ে দিয়েছিলেন। দ্বিতীয়বারের মতো এবার গাছে প্রচুর ফল হয়েছে। ৩৩ শতাংশ জমিতে ২শ মণের বেশি আঙুর হবে বলে আশা করছেন তিনি। এ গাছে ৩০ বছর পর্যন্ত ফল পাওয়া যাবে।

আরও পড়ুন: লাভ কম হলেও তরমুজ চাষিদের মুখে হাসি

Advertisement

তিনি বলেন, ‘আমি ইউটিউব দেখে চিন্তা করি, আমাদের দেশের মাটি সোনার মতো। এখানে যা চাষ করা হয়, তা-ই হয়। সুতরাং আঙুরও হবে। তবে ইউটিউব দেখে চাষ করে আমার বেশ খরচ হয়েছে। এবছর আরও দেড় বিঘা নতুন করে চাষ শুরু করেছি।’

তিনি জানান, আঙুর গাছ ৮ ফুট দূরত্বে লাগানো হয়েছে। এ গাছ লাগানোর আগে জমি প্রস্তুত করে প্রতিটি গর্তে পাঁচ কেজি বিভিন্ন উপাদান দেওয়া হয়। সেগুলো হচ্ছে ইটের গুঁড়া, মোটা বালু এবং জৈব সার। এগুলো ৩ ফুট গর্ত করে মাটির সঙ্গে মিশ্রণ করে গর্তে দেওয়া হয়। প্রতিটি গাছের গোড়া মাটি দিয়ে উঁচু করা হয়, যাতে গোড়ায় পানি না জমে। আঙুর গাছ যাতে দ্রুত লম্বা হতে পারে, এর জন্য উঁচু করে সিমেন্টের খুঁটি দিয়ে মাঁচা তৈরি করেছেন। ফলে ঝড়-বৃষ্টিতে গাছ ভেঙে পড়ার আশঙ্কা কম।

কৃষক মুনসুর আঙুর চাষের পাশাপাশি চারা উৎপাদনও করছেন। আঙুরের বাম্পার ফলন দেখে কৃষকেরা উদ্বুদ্ধ হয়ে এ চাষে ঝুঁকে পড়ছেন। বিভিন্ন জেলা থেকে তার কাছে চারা সংগ্রহ করতে আসছেন অনেকে। আঙুর কলম চারা ২০০-৩০০ টাকা করে কিনে নিচ্ছেন তারা।

আরও পড়ুন: থাই পেয়ারা চাষে সফল নাটোরের দুই ভাই 

Advertisement

আঙুর চাষি মুনসুর আলী নিজের বাগানকে এ অঞ্চলের একমাত্র বাগান দাবি করে বলেন, ‘আশা করি এ বছর ২শ মণ ফল পাবো। সাধারণত ৮০-৮৫ দিনে ফল খাওয়ার উপযোগী হয়। এখন যে ফল, তা আগামী তিন সপ্তাহের মধ্যে খাওয়া যাবে। সবচেয়ে বড় কষ্টের বিষয় হলো, এ চাষ যখন শুরু করি; তখন আমার আশপাশের মানুষ বিভিন্নভাবে উপহাস করতে থাকেন। এমনকি অনেকে পাগলও বলেন। দোকানে তো বসতেই পারতাম না। এখন আমার আনন্দ ধরে না। প্রতিদিন আঙুর দেখার জন্য অনেক মানুষ আসে। আশা করি এ বছর অনেক লাভবান হতে পারব। কৃষি অফিসাররাও আসছেন। এ পর্যন্ত প্রায় ৪-৫ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। এখন আর তেমন খরচ নেই।’

লেবুতলা গ্রমের কৃষক আতর আলী বলেন, ‘যে বছর মুনসুর আঙুর লাগায়; তখন মনে হচ্ছিলো হবে না। আমরা বলেছি মুনসুর এ কী করছে? কিন্তু এ বছর গাছে লাখ লাখ টাকার ফল হয়েছে। বিভিন্ন জায়গা থেকে মানুষও দেখতে আসছে। আমরাও চাষ করবো। আমরা উচ্ছের চাষ করি। কিন্তু সবজি তো ৩-৪ মাসে শেষ হয়ে যায়। আঙুর বহু বছরের আবাদ।’

ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলা থেকে আঙুর চারা সংগ্রহ করতে এসেছিলেন সুমন মিয়া। তিনি বলেন, ‘মিষ্টি আঙুর যে আমাদের দেশে হবে, তা আমার জানা ছিল না। আমি ইউটিউব থেকে মুনসুর ভাইয়ের আঙুর দেখে এসেছি। আঙুর বাগান দেখে খুব ভালো লাগছে। আমি প্রথমবারের মতো ১০ কাঠা জমিতে এ ফল চাষ করবো। এখানে পরামর্শ নিতে এবং চারা কিনতে এসেছি।’

আরও পড়ুন: বাঙ্গির বাম্পার ফলন, বাজারমূল্য ৩ কোটি 

যশোর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক (শস্য) মো. আবু তালহা বলেন, ‘এর আগে কেউ যশোরে এমন বাগান করতে পারেননি। আমাদের দেশে সাধারণত মিষ্টি আঙুরের চাষ হয় না। কিন্তু মুনসুর আলী ভারত থেকে চারা সংগ্রহ করে এ চাষ করেছেন। সফলও হয়েছেন। বাড়িতে যদি প্রত্যেকে ২টি করে গাছ লাগান, তাহলে বাড়িতে আঙুরের চাহিদাও পূরণ হবে।’

মিলন রহমান/এসইউ/জিকেএস