কৃষি ও প্রকৃতি

ঠাকুরগাঁওয়ে ভুট্টা চাষে স্বপ্ন দেখছেন কৃষকরা

ঠাকুরগাঁওয়ের যেসব মাঠে আগে গম চাষ হতো; সেসব মাঠে এখন চাষ হচ্ছে ভুট্টা। ভুট্টায় তিনগুণ ফলন হওয়ায় গমের স্থান দখল করে নিয়েছে। গত বছর ভুট্টায় লাভবান হয়ে কৃষকরা এবার ব্যাপক হারে চাষ করেছেন। এবারও ভুট্টা চাষে লাভবান হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন কৃষকরা।

Advertisement

গমের চেয়ে ভুট্টায় বেশি লাভ হওয়ায় দিন দিন বাড়ছে ভুট্টা চাষ। কৃষকরা গত বছর ভুট্টার দাম বেশি পাওয়ায় এবছর বেশি করে চাষ করেছেন বিভিন্ন আগাম উচ্চ ফলনশীল জাতের ভুট্টা। এছাড়াও এবার যারা আলু চাষ করেছেন, তারা আলু তুলে আবার রোপণ করেছেন ভুট্টা।

আবহাওয়া ভালো থাকলে এবং গত বছরের মতো দাম পেলে ভুট্টা চাষে লাভবান হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন জেলার কৃষকরা। ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার গিলাবাড়ি গ্রামের কৃষক শাহিন ইকবাল ৬ বিঘা জমিতে ভুট্টা লাগিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের দিকে ভুট্টা গাছে মোচা ভালো এসেছে। আল্লাহ সহায় থাকলে ভুট্টায় চাষিরা বেশি লাভবান হবেন।’

আরও পড়ুন: তেজপাতা চাষে সফল ফুলবাড়ীর রহমত আলী

Advertisement

ভুট্টা চাষি লোকমান আলী বলেন, ‘গম ও আলুতে তেমন লাভ না হওয়ায় জেলার অধিকাংশ কৃষক ভুট্টা চাষ করেছেন। ৫০ শতাংশের এক বিঘা জমিতে এবার ভুট্টা চাষ করতে সর্বোচ্চ খরচ হবে ৩০-৩৫ হাজার টাকা। পরিচর্যা অনুযায়ী ফলন হয় কমপক্ষে ৮০-১০০ মণ। এক বিঘা জমির ভুট্টা বিক্রি হয় কমপক্ষে ৮০-৯০ হাজার টাকা। অন্যদিকে এক বিঘা জমিতে গম হয় মাত্র ২০-২৫ হাজার টাকার। তাই গমের তুলনায় ভুট্টায় বেশি লাভ হওয়ায় ভুট্টার চাষ ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে।’

পীরগঞ্জ উপজেলার মন্ডলপাড়া গ্রামের কৃষক হামিদুর রহমান বলেন, ‘আমি গতবার ভুট্টা চাষ করেছিলাম ৩ বিঘা জমিতে। দাম ভালো পাওয়ায় এবার চাষ করেছি ৫ বিঘায়। আবহাওয়া ভালো থাকলে গতবারের চেয়ে আরও বেশি ফলন হতে পারে।’

রাণীশংকৈল উপজেলার কুমরগঞ্জ এলাকার কৃষক আব্দুল মান্নান বলেন, ‘কৃষকরা ব্যাপকভাবে ভুট্টা চাষ করেছেন। গত বছর ৮০ কেজি ওজনের কাঁচা এক বস্তা ভুট্টা বিক্রি করেছি ২ হাজার ২০০ টাকায়। এবারও যদি এমন দাম থাকে, তাহলে কৃষকরা ভুট্টায় অনেক লাভবান হবেন।’

বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার হরিণমারি এলাকার কৃষক সমসের আলী বলেন, ‘আলু চাষ করে শুধু লস হয়। দাম তেমন পাওয়া যায় না। গতবার ভুট্টার দাম ভালো ছিল। তাই আমিও এবার আগাম জাতের ভুট্টা চাষ করেছি।’

Advertisement

আরও পড়ুন: কুড়িগ্রামে বেড়েছে ভুট্টা চাষ

হরিপুর উপজেলার কামাপুর গ্রামের কৃষক মনসুর আলী বলেন, ‘গতবছর ভুট্টা চাষ করে লাভবান হওয়ায় এবার বেশি করে ভুট্টা চাষ করেছেন। আমাদের পরিবার থেকেই ১৫ বিঘা জমিতে চাষ করেছি। আশা করছি এবার ভুট্টার দাম ভালো পাবো। যেহেতু সবকিছুর দাম বেশি, তাই ভুট্টার দামও বেশি পাবো।’

জেলায় মোট ১ লাখ ৫১ হাজার ৫৯৩ হেক্টর আবাদি জমির মধ্যে চলতি মৌসুমে শুধু ভুট্টা চাষ হয়েছে প্রায় ৩৮ হাজার হেক্টর জমিতে। যার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ লাখ ৮৫ হাজার মেট্রিক টন। গত বছর চাষ হয়েছিল ৩৩ হাজার ৬০ হেক্টর জমিতে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছিল ৩ লাখ ৬২ হাজার ৫৮১ মেট্রিক টন।

এক বছরের ব্যবধানে জেলায় ৫ হাজার হেক্টর জমিতে ভুট্টার চাষ বেড়েছে। চলতি মৌসুমে গম চাষ হয়েছে ৩৬ হাজার ৬৫৭ হেক্টর জমিতে। অথচ গত বছর চাষ হয়েছিল প্রায় ৪৫ হাজার হেক্টর। এক বছরে প্রায় ৯ হাজার হেক্টর জমিতে গমের আবাদ কমেছে। এছাড়াও গত মৌসুমে জেলায় আলু চাষ হয়েছিল ২৭ হাজার ৬৭৭ হেক্টর। এবার তা কমে হয়েছে ২৬ হাজার ১৬৭ হেক্টর হয়েছে বলে জানান জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক।

আরও পড়ুন: ভারতের জমি চাষ করছেন মেহেরপুরের চাষিরা

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্ততরের উপপরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘গম ও আলুর চেয়ে ভুট্টা চাষ বাড়ার কারণ ভুট্টার চাহিদা ও বাজার মূল্য ভালো থাকা। সমপরিমাণ জমিতে গমের তুলনায় ভুট্টার ফলন প্রায় তিনগুণ হওয়ায় কৃষকরা দিন দিন ভুট্টা চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। আশা করছি চলতি মৌসুমে ১ হেক্টর জমিতে প্রায় সাড়ে ১১ টন করে জেলায় মোট ৩ লাখ ৮৫ হাজার মেট্রিক টন ভুট্টা উৎপাদন হবে।’

তানভীর হাসান তানু/এসইউ/এমএস