জাতীয়

শ্রমিক নিয়োগ স্থগিত করায় মালয়েশিয়াতেই তোলপাড়

মালয়েশিয়া তিন বছরে ১৫ লাখ বাংলাদেশি শ্রমিক নেয়ার চুক্তি স্বাক্ষর করার একদিনের মাথায় তা স্থগিত করায় বিশ্বজুড়ে তোলপাড় শুারু হয়েছে। এ নিয়ে চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা। বিশ্লেষকরা বলছেন মালয়েশিয়া সরকারের এমন আচরণ নতুন নয়; অতীতেও এ ধরনের আচরণ নিয়মে পরিণত হয়েছে।সে দেশের সরকারের মধ্য থেকে একেক রকম বক্তব্য মিডিয়ার সামনে উপস্থাপন করা হচ্ছে। বিদেশি শ্রমিক নিয়োগ বিষয়ে দেশটির সরকার যে যুক্তি উপস্থাপন করছে তারই ধারাবাহিকতায় খোদ মালয়েশিয়ার একজন সাবেক মন্ত্রী এটাকে ডিগবাজি বলে উল্লেখ করেছেন।মালয়েশিয়ার সাবেক আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী তানশ্রী রাফিদাহ আজিজ জানান, ‘১৮ ফেব্রুয়ারি তিন বছরে ১৫ লাখ বাংলাদেশি শ্রমিক আনতে যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে অতপর তা চুক্তির কালি শুকানোর আগেই ১৯ ফেব্রুয়ারি সরকার একটি বিবৃতিতে জানালো যে, সরকার বাংলাদেশি শ্রমিকসহ সব বিদেশি শ্রমিক নিয়োগ স্থগিত করেছে।’সরকারের প্রতি প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, সরকারি নীতির সঙ্গে কেন এমন ডিগবাজি মারা হলো। রাফিদাহ প্রশ্ন করেন, কী এমন ঘটেছে? ঘোষণার পূর্বে কি এ প্রস্তাব বা নীতির কোনো সমীক্ষা করা হয়নি? সবার মতামত বিবেচনায় আনতে সংশ্লিষ্ট সবদলের সঙ্গে কি কোনো আলোচনা করা হয়নি? সব ধরনের প্রভাব বা প্রতিক্রিয়ার কি ভালো বা মন্দ সমীক্ষা করা হয়নি? অর্থাৎ অর্থনৈতিক, সামাজিক ও নিরাপত্তা উদ্বেগ নিয়ে কি কোনো সমীক্ষা করা হয়নি? তিনি দাবি করেন, সরকারের প্রতি জনগণের আস্থা হারানোর কারণে এমনটা করা হয়েছে।রাফিদাহ আরও বলেন, বেসরকারি খাত বিভ্রান্ত ও চিন্তিত। যার ফলে তাদের সরকারের কোনো সিদ্ধান্ত মেনে নিতে কষ্ট হয়। যেসব পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে তা যদি প্রথমে মধ্যস্থতা টেবিলে পুঙ্খানুপুঙ্খু আলোচনা হতো তাহলে সবকিছুই এড়ানো যেতো।শুক্রবার সেনাবাহিনীর একটি ক্যাম্পে এক বৈঠকের পর দেশটির উপপ্রধানমন্ত্রী আহমেদ জাহিদ হামিদি সব ‘সোর্স কান্ট্রি’ থেকে (জনশক্তি নেয়ার জন্য মালয়েশিয়া সরকারের তালিকাভুক্ত দেশ) কর্মী নেয়া স্থগিত রাখার এই ঘোষণা দেন বলে মালয়েশিয়ার রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা বারনামা জানিয়েছে। এতে করে বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশ থেকে আপাতত কোনো শ্রমিক মালয়েশিয়ায় যেতে পারবেন না। দেশটির সেনাপ্রধান কিম মুয়ারা তুয়াংয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে এমন ঘোষণা দেন হামিদি। একই সঙ্গে দেশটিতে শিল্প কারখানার জন্য ঠিক কী পরিমাণ জনশক্তি দরকার তা নিরূপণের আগে নতুন শ্রমিক না নেয়ার ঘোষণা দেন দেশটির উপপ্রধানমন্ত্রী।এদিকে শ্রমিক নিয়োগ স্থগিতের ঘোষণা দিলেও তাতে বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেয়ার চুক্তিতে প্রভাব পড়বে না বলে মন্তব্য করেছে দেশটির মানবসম্পদ মন্ত্রণালয়। গত কাল শনিবার দেশটির মানবসম্পদ মন্ত্রণালয়ের এ সংক্রান্ত একটি বিবৃতি দিয়েছে। বিবৃতিতে মালয় সরকারের মানবসম্পদমন্ত্রী রিচার্ড রায়ত জায়েম বলেন, দেশটির উপ প্রধানমন্ত্রী আহমেদ জাহিদ হামিদি সব ‘সোর্স কান্ট্রি’ থেকে জনশক্তি আমদানি স্থগিতের যে ঘোষণা দিয়েছেন, তাকে তিনি স্বাগত জানান, কেননা এর মধ্য দিয়ে স্থানীয় শ্রমিকদের কর্মসংস্থানের ওপর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। তবে, ওই ঘোষণা বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারকের বৈধতায় কোনো প্রভাব ফেলবে না।অবশ্য সমঝোতা অনুযায়ী মালয়েশিয়া সরকার তাদের পাঁচটি খাতের জন্য এখনই বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেবে কি না- তা ওই বিবৃতিতে স্পষ্ট করা হয়নি। বিদেশি শ্রমিক নেয়া স্থগিত রাখার সিদ্ধান্তের বিষয়ে সরকার শিগগিরই ‘বিস্তারিত জানাবে’ বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে।মালয়েশিয়ার মন্ত্রী রিচার্ড রায়ত এবং বাংলাদেশের প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি গত বৃহস্পতিবার ঢাকায় ওই সমঝোতা স্মারকে সই করেন। ওই চুক্তির আওতায় মালয়েশিয়া তাদের পাঁচটি খাতে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ের সমন্বয়ে ‘জিটুজি প্লাস’ পদ্ধতিতে ১৫ লাখ বাংলাদেশি কর্মী নেবে বলে অনুষ্ঠানের পর জানানো হয়।মালয়েশিয়ার উপ প্রধানমন্ত্রী আহমেদ জাহিদ হামিদি বাংলাদেশসহ সব ‘সোর্স কান্ট্রি’ থেকে জনশক্তি আমদানি স্থগিতের ঘোষণা দেন। এ নিয়ে বাংরাদেশ, মালয়েশিয়াসহ বিশ্বজুড়ে চলছে তুমুল আলোচনা।বিএ

Advertisement