ধর্ম

ইসলাম গ্রহণ করায় সাহাবিদের যেসব নির্যাতন করা হতো

ইসলামের জন্য অসামান্য আত্মত্যাগ করেছেন প্রথম যুগের মুসলিমরা। যারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ইসলাম গ্রহণ করেছেন। ইসলাম গ্রহণের অপরাধে ভোগ করতে হয়েছেন মক্কার মুশরিকরা সীমাহীন জুলুম-নির্যাতন। বীভৎস উপায়ে সদ্য নব মুসলিমদের কষ্ট দিতো মুশরিকরা। নব মুসলিমদের কাউকে উট ও গাভির কাঁচা চামড়ায় জড়িয়ে তীব্র রোদে ফেলে রাখা হতো। লোহার বর্ম পরিয়ে উত্তপ্ত পাথরের ওপর শুইয়ে দেওয়া হতো। কাউকে হাত-পা বেঁধে পাড়ার দুষ্টু ছেলেদের লেলিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে নির্যাতন করা হতো। এমন কষ্টের সময় নবিজি নব মুসলিমদের এভাবে উপদেশ দিয়েছেন-হজরত খাব্বাব ইবনে আরত রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এমন মুহূর্তে অভিযোগ করলাম, যখন তিনি কাবা ঘরের ছায়ায় চাদর দিয়ে বালিশ বানিয়ে বিশ্রাম করছিলেন। আমরা বললাম, আপনি আমাদের জন্য কি সাহায্য কামনা করবেন না? আমাদের জন্য কি দোয়া করবেন না? তিনি বললেন, দেখো! তোমাদের আগের যারা ঈমানদার ছিল (তাদের প্রতি এমন নির্যাতন হতো যে) তাদের কাউকে ধরে জমিনে গর্ত করে পুঁতে দেওয়া হতো। এরপর তার মাথায় করাত রেখে দ্বিখণ্ডিত করা হতো। আর লোহার চিরুনি দ্বারা শরীরের গোশত ও হাড় পৃথক করা হতো। কিন্তু এমন নির্মম অত্যাচারও তাদেরকে দ্বীন থেকে বিরত করতে পারেনি। আল্লাহর শপথ! এই দ্বীন পূর্ণতা লাভ করবে, এমনকি ভ্রমণকারী সানআ থেকে হাজরা মাউত পর্যন্ত নির্বিঘ্নে ভ্রমন করবে; কিন্তু ‘আল্লাহ ছাড়া আর কাউকে ভয় পাবে না। আর মেষপালের জন্য একমাত্র বাঘের ভয় বাকি থাকবে; কিন্তু ‘তোমরা আসলে তাড়াহুড়া করছো।”(বুখারি)

Advertisement

মুশরিকদের নির্যাতন থেকে রক্ষা পায়নি যারাঅভিজাত শ্রেণি থেকে শুরু করে সাধারণ কোনো শ্রেণির মুসলিমরাই মুশরিকদের নির্যাতন থেকে রেহাই পায়নি। ইসলাম গ্রহণের পর হজরত উসমান ইবনে আফফান রাদিয়াল্লাহু আনহুর চাচা তাঁকে খেজুরের চাটাইয়ের মধ্যে জড়িয়ে ধোঁয়া দিত। হজরত মুসআব ইবনে উমায়ের রাদিয়াল্লাহু আনহু অত্যন্ত স্বাচ্ছন্দ্য ও আরাম-আয়েশে লালিত-পালিত হন। ইসলাম গ্রহণ করায় তাঁর মা তাঁকে ঘর থেকে বের করে দেন এবং খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করে দেন। ক্ষুধার কষ্টে তার শরীর খোলস ছাড়ানো সাপের গায়ের মতো হয়ে যায়।

হজরত বেলালের প্রতি নির্যাতনহজরত বেলাল রাদিয়াল্লাহু আনহু উমাইয়া ইবনে খালফের ক্রীতদাস ছিলেন। নবিজির প্রতি ঈমান আনার অপরাধে উমাইয়া হজরত বেলাল রাদিয়াল্লাহু আনহুর গলায় দড়ি বেঁধে উচ্ছৃঙ্খল ছেলেদের হাতে তুলে দিতো। তাকে নির্মমভাবে প্রহার করা হতো। উত্তপ্ত বালির ওপর শুইয়ে বুকের ওপর ভারি পাথর দিয়ে চাপা দিয়ে রাখ হতো। এমন কঠিন সময়েও হজরত বেলাল রাদিয়াল্লাহু আনহু ‘আহাদ’, ‘আহাদ’ (আল্লাহ এক, আল্লাহ এক) বলে চিৎকার করতেন। হজরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু চরম অত্যাচার থেকে মুক্তি দিতে তাঁকে কিনে স্বাধীন করে দেন।

হজরত আম্মারের ইসলাম গ্রহণইসলাম গ্রহণে হজরত আম্মার ও তার পরিবারের আত্মত্যাগ অবিস্মরণীয়। তিনি ছিলেন বনু মাখজুমের ক্রীতদাস। ইসলাম গ্রহণ করায় তিনি ও তাঁর পিতা ভয়াবহ নির্যাতনের মুখোমুখি হন। নির্দয়ভাবে উত্তপ্ত রোদে মরুভূমির ওপর তাদের শুইয়ে রাখা হতো। একদিন নির্যাতনের সময় নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সে পথ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তখন তিনি বলেন, ‘হে ইয়াসার পরিবার, ধৈর্যধারণ করো, তোমাদের ঠিকানা হচ্ছে জান্নাত।’ মুশরিকদের নির্যাতনে হজরত ইয়াসার ইন্তেকাল করেন আর পাপিষ্ঠ আবু জাহেল হজরত আম্মার রাদিয়াল্লাহু আনহুর মা হজরত সুমাইয়া রাদিয়াল্লাহু আনহাকে লজ্জাস্থানে তীর নিক্ষেপ করে শহিদ করেন। তিনিই হলেন ইসলামের প্রথম শহিদ।

Advertisement

হজরত খাব্বাবের প্রতি নির্যাতনহজরত খাব্বাব ইবনে আরাত রাদিয়াল্লাহু আনহুর প্রতি মুশরিকদের নির্যাতন ছিল মারাত্মক। তিনি ছিলেন খোজায়া গোত্রের উম্মে আনসার নামের এক নারীর ক্রীতদাস। মুশরিকরা তাঁর ওপর নানাভাবে নির্যাতন করতো। কেউ তাকে মাটির ওপর টানতো। কেউ তার মাথার চুল ধরে টানতো। কেউ কেউ তার ঘাড় মটকে দিতো। সবচেয়ে মারাত্মক ব্যাপার হলো তাকে জ্বলন্ত কয়লার উপর শুইয়ে দিয়ে পাথর চাপা দেওয়া হতো। যাতে তার পিঠ পুড়ে বড় গর্তে পরিণত হয়েছিল।

এছাড়াও অন্যান্য মুসলিমদের ওপর চলতো চরম অত্যাচার ও নির্যাতন। মুশরিকরা বীভৎস উপায়ে মুসলিমদের কষ্ট দিতো। ইতিহাস সাক্ষী, মুশরিকরা নির্যাতনের উপায় হিসেবে মুসলিমদের উট ও গাভির কাঁচা চামড়ার ভেতর জড়িয়ে রোদে ফেলে রাখতো, লোহার বর্ম পরিয়ে তপ্ত পাথরের ওপর শুইয়ে রাখতো, হাত-পা বেঁধে দুষ্টু ছেলেদের লেলিয়ে দিয়ে নির্যাতন করতো, যখন তখন ইচ্ছামতো চাবুক দিয়ে পেটাতো।

এ কারণেই মক্কার প্রথম যুগের সাহাবিদের ব্যাপারে কোরআনুল কারিমে বিশেষ ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। ঈমানি পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের কথা এভাবে তুলে ধরা হয়েছে- ‘সাবিকুনাল আউয়ালুন’ (সুরা তওবা : আয়াত ১০১) নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এসব প্রথম সারির সাহাবিদের ব্যাপারে বলেছেন, ‘মুহাজিরদের মধ্যে ‘সাবিকুনাল আউয়ালুন তথা প্রথম সারির মধ্যে অগ্রগামী এবং তাদের পরে তাদের সন্তানদের ব্যাপারে তোমাদে অসিয়ত করছি। যদি তোমরা তা না (সম্মান ও সদ্ব্যবহার) না করো তবে তোমাদের দান ও ন্যায়পরায়ণতা গ্রহণ করা হবে না।’ (জামিউল মাসানিদ ওয়াস-সুনান, হাদিস : ৬০৯২)

এমএমএস/এমএস

Advertisement