জাগো জবস

আনুশা চৌধুরীর আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভের গল্প

মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে বিভিন্ন স্তরের মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে আনুশা চৌধুরীর হাত ধরে ২০১৮ সালে যাত্রা শুরু করে ‘লেটস টক মেন্টাল হেলথ’। তার একান্ত প্রচেষ্টায় সংগঠনটি দেশ-বিদেশের অগণিত মানুষের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করছে। মানসিক স্বাস্থ্যক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের জন্য এ বছর তিনি ভূষিত হয়েছেন সম্মানজনক ‘ডায়ানা অ্যাওয়ার্ডে’। ৯-২৫ বছর বয়সী উদ্যোক্তা ও স্বেচ্ছাসেবীদের জন্য ব্রিটিশ রাজপরিবারের পক্ষ থেকে ১৯৯৯ সালে প্রিন্সেস ডায়ানার নামে এ পুরস্কার চালু করা হয়। এ বছর বিশ্বের ৮ জন তরুণ উদ্যোক্তা এ পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছেন।

Advertisement

গত ১ জুলাই পুরস্কারপ্রাপ্তদের নাম ঘোষণা করা হয়, যেখানে আনুশা চৌধুরীর নামও ছিল। নিজের প্রতিষ্ঠিত ‘লেটস টক মেন্টাল হেলথ’ নামের প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বিশ্বে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম ছড়িয়ে দেওয়ার স্বীকৃতি হিসেবে তাকে এ পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়াও আনুশা চৌধুরী কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের (সিইউবি) এক্সটার্নাল অ্যাফেয়ার্সের ডিরেক্টর হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন।

সম্প্রতি ‘হার্ভার্ড বিজনেস স্কুল অনলাইন’ তাদের ইনস্টাগ্রাম হাইলাইটে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে আনুশা চৌধুরীর অনন্য সাধারণ কার্যক্রম নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। জাগো নিউজের পক্ষ থেকে তার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বেনজির আবরার—

প্রথমেই নিজের সম্পর্কে কিছু বলুন—আনুশা চৌধুরী: আমার জন্ম ও বেড়ে ওঠা ওমানে। সেখানকার একটি ইন্ডিয়ান স্কুল নিজওয়া থেকে প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ করে বাংলাদেশে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি থেকে বিবিএতে স্নাতক অর্জন করেছি। এ ছাড়াও আমি হার্ভার্ড বিজনেস স্কুল থেকে ‘এন্টারপ্রেনারশিপ এসেনশিয়াল’ কোর্স সম্পন্ন করেছি। কিছুদিন আগেই হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় সোশ্যাল মিডিয়া পেজে আমার সফলতার গল্পগুলো বেশ সুন্দরভাবে ফিচার করেছে। বর্তমানে কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশে পরিচালক পদে দায়িত্ব পালন করছি।

Advertisement

জানিয়ে রাখছি, আমি গ্লোবাল ইয়ুথ পার্লামেন্ট নেপাল থেকে লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড পেয়েছি। পাশাপাশি উইমেন্স ইনস্পিরেশন অ্যাওয়ার্ড পেয়েছি। ভারতের সারদা ইউনিভার্সিটির ‘লাইটেন দা লোড’ প্রোগ্রাম থেকেও সম্মাননা পেয়েছি। আমার বাবা-মায়ের সবচেয়ে বড় সন্তান হিসেবে সব সময় চেষ্টা করতাম পরিবারের প্রতি নিজের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি নিজের ছোট দুই ভাইয়ের কাছেও একটি আদর্শিক মানুষ হয়ে উঠতে। এখন পর্যন্ত যতটুকু আসতে পেরেছি, তাতে আমি যেমন কৃতজ্ঞ; তেমনই ভবিষ্যতেও ভালো কিছু করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।

ডায়ানা অ্যাওয়ার্ড প্রাপ্তির অনুভূতি জানতে চাই—আনুশা চৌধুরী: যে কোনো অ্যাওয়ার্ড পাওয়ার অনুভূতি অবশ্যই খুব দারুণ। বিশেষত একটি আন্তর্জাতিক অ্যাওয়ার্ড, যা কি না বিশ্বের সৃষ্টিশীল তরুণদের ভিন্নভাবে সম্মানিত করে। তা পাওয়ার পর ভালো লাগার চেয়েও দায়িত্ববোধটা বেশি কাজ করে। বাসায় যখন অ্যাওয়ার্ডটির জন্য মনোনীত হওয়ার বিষয়টি জানালাম, তখন আমার মা বলেছিলেন, ‘আমার ছোট মেয়ে, যাকে আমি রাজকন্যার পোশাক পরিয়ে সাজাতাম; সে আজ সত্যিকারের রাজকন্যার কাছ থেকে সম্মাননা পেল।’ আমি মনে করি, আমার সংস্থা, লেটস টক মেন্টাল হেলথের মাধ্যমে বহু মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে।

মানুষের জন্য কাজ করতে পারার আনন্দ ও সংগঠন সম্পর্কে বলুন—আনুশা চৌধুরী: আমি মনে করি, একজন মানুষ হিসেবে অন্য কোনো মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেয়ে বড় আর কিছুই হয় না। এ চিন্তাকে সামনে রেখেই ২০১৮ সালের নভেম্বরে বাংলাদেশে ‘লেটস টক মেন্টাল হেলথ’র কার্যক্রম শুরু করি। আমাদের প্রতিষ্ঠাকালীন মূল উদ্দেশ্য ছিল—যেসব মানুষ মানসিকভাবে বিপর্যস্ত কিংবা অন্য যে কোনো কারণে হীন্মন্যতায় ভোগেন, তাদের পাশে দাঁড়ানো এবং একটি ইতিবাচক জীবনযাপনে সাহায্য করা।

বর্তমানে আফ্রিকা, কানাডা, দুবাই, ফিলিপাইন, ভারত প্রভৃতি দেশে ১১২ জন প্রতিনিধি নিযুক্ত করার মাধ্যমে আমাদের কর্মকাণ্ডকে সম্প্রসারণের চেষ্টা করছি। ইতোমধ্যে ৩৭,০০০ মানুষ এ সংস্থার বিভিন্ন কার্যক্রম থেকে উপকৃত হয়েছে। ভবিষ্যতে আরও মানুষের কাছে মানসিক সুস্থতার বিষয়টি নিয়ে সহায়তা করতেও আমরা আশাবাদী। আমাদের প্রায় ৬টি প্রজেক্ট ও ৯টি ক্যাম্পেইন বেশ আলোচনায় এসেছিল। আমাদের কার্যক্রম এখন পর্যন্ত ১.২ মিলিয়ন মানুষকে আকৃষ্ট করতে পেরেছে। আমরা মানুষকে বোঝাতে সক্ষম হচ্ছি—মানসিক স্বাস্থ্যও একটি জরুরি বিষয়, প্রয়োজনীয় এবং অবিচ্ছেদ্য জিনিস।

Advertisement

ভবিষ্যতে মানুষের জন্য যা যা করতে চান—আনুশা চৌধুরী: অবশ্যই চেষ্টা থাকবে প্রতিষ্ঠানটিকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার। প্রতিষ্ঠানটির মাধ্যমে মানুষকে সহায়তা করা, প্রতিষ্ঠানটিকে মানুষের মধ্যে পরিচিত করে তোলা এবং একইসাথে একটি অ্যাপ তৈরি করা। যা খুব সহজেই মানুষকে পরামর্শ দিতে পারবে। আমরা ইতোমধ্যে একটি অ্যাপ ডেভেলপমেন্টের চেষ্টায় আছি, যে অ্যাপের সাহায্যে মানুষ সহজেই তাদের মুঠোফোন থেকে মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে যে কোনো পরামর্শ নিতে পারবে।

মানুষ নিজেদের মানসিক সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে পারবে। এ অ্যাপে প্রশিক্ষিত মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ থাকবে। এ ছাড়া বিশ্বব্যাপী অনেক কিশোর-কিশোরী আছে, যারা অনেক ধরনের মানসিক সমস্যায় ভোগেন। এ জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় দক্ষ মনোরোগ বিশেষজ্ঞ দ্বারা কাউন্সিলিংয়ের ব্যবস্থা করা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দায়িত্বশীল এবং অভিভাবকদেরও মানসিক সুস্বাস্থ্য নিয়ে অবগত করার বিষয়েও আমরা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।

এসইউ/এমএস