জাগো জবস

বিসিএস বন ক্যাডারে নাজমুলের প্রথম হওয়ার গল্প

মোহাম্মদ নাজমুল আলম ৩৮তম বিসিএসে ‘বন ক্যাডারে’ প্রথম হন। তার শৈশব ও বেড়ে ওঠা চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার দক্ষিণ পাহাড়তলিতে। তার বাবা মোহাম্মদ সোলায়মান পেশায় একজন ব্যবসায়ী। মা হোসনে আরা বেগম একজন গৃহিণী। তিনি ফতেয়াবাদ আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। এরপর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব ফরেস্টি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সেস থেকে ফরেস্টি বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর (থিসিস) ডিগ্রি অর্জন করেন। এ ছাড়াও ভূমিরূপ পরিবর্তনে ক্লাইমেট চেঞ্জের প্রভাব নিয়ে এমফিল গবেষণা করছেন।

Advertisement

বর্তমানে তিনি সিলেট বন বিভাগের অধীনে রেঞ্জ ট্রেনিংয়ে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের রাজকান্দি আছেন। সম্প্রতি তার বিসিএস জয়, স্বপ্ন ও সফলতার গল্প শুনিয়েছেন জাগো নিউজকে। তার সঙ্গে কথা বলে লিখেছেন আনিসুল ইসলাম নাঈম—

শৈশবের কাটানো দিনগুলো আমি শৈশবে খুব দুষ্টু ছিলাম। প্রাইমারি স্কুলে স্যাররা আমাকে খুব বকাঝকা করতেন। আবার খুব স্নেহও করতেন। বাড়িতে আমার মা-বাবা অভিযোগ নিষ্পত্তি করতে করতে শেষ। তবে আমার এক কাজিন ছিল, যার সাথে এক ধরনের প্রতিযোগিতা সেই ক্লাস থ্রি থেকেই ছিল। আমি সব সময় চেষ্টা করতাম তার চেয়ে ভালো রেজাল্ট করার। সেও চাইতো আমার চেয়ে ভালো রেজাল্ট করতে।

পড়াশোনায় তেমন প্রতিবন্ধকতা ছিল নাপড়াশোনায় প্রতিবন্ধকতা খুব একটা ছিল না। বিশেষ করে আমার বাবা, যিনি একজন ব্যবসায়ী এবং সমাজসেবক। তিনি পড়াশোনার ব্যাপারে খুব সচেতন ছিলেন। আমাদের পরিবার তথা পুরো এলাকার পড়াশোনার ব্যাপারে তার আগ্রহ ছিল। আমাদের এলাকার একটি প্রাইমারি বিদ্যালয় আছে, যার সভাপতি আমার বাবা। ওই বিদ্যালয়ের অবকাঠামো উন্নয়নে তার অগ্রণী ভূমিকা সর্বজনবিদিত। পড়াশোনার ব্যাপারে সব ধরনের সহযোগিতা পরিবার থেকে পেয়েছি।

Advertisement

শিক্ষকের অনুপ্রেরণায় অনার্স থেকেই স্বপ্ন দেখিআমি যখন বিএসসির (অনার্স) ৩য় সেমিস্টারে পড়ি; তখন আমার একজন শ্রদ্ধেয় শিক্ষক মোশাররফ হোসেন ক্লাসে জিজ্ঞেস করলেন, ‘কে কী হতে চাও?’ তখন আমি বলেছিলাম, ‘আমি এসিএফ (অ্যাসিস্ট্যান্ট কনজারভেটর অব ফরেস্টস) হতে চাই।’ স্যার বললেন, ‘তাহলে তোমাকে বিসিএস পাস করতে হবে।’ আমি বলেছিলাম, ‘ইনশাআল্লাহ্ আমি বিসিএস পাস করে একজন এসিএফ হবো। সেই থেকে মূলত বিসিএসের স্বপ্ন দেখা শুরু করি।

বেশি বেশি বইপড়া বিসিএসে কাজে দিয়েছে আমি যখন অনার্সে ভর্তি হই; তখন আমার এক বন্ধুর উৎসাহে প্রচুর বই কিনতে শুরু করি। শিক্ষাজীবনের শুরু থেকেই বইপড়ার প্রতি খুব আগ্রহ ছিল। অনার্সের ৪ বছরে আমি প্রচুর বই কিনি। বাসায় ছোটখাটো একটি লাইব্রেরি তৈরি করে ফেলি। বিভিন্ন বিষয়ের ওপর বই কিনতাম আর পড়তাম। শহরে যে উপলক্ষেই যেতাম না কেন, বই কিনে নিয়ে আসতাম। আমার মা খুব বকাঝকা করতেন। বলতেন, ‘এত বই আনিস পড়ে শেষ করতে পারবি?’ পরে আম্মুর থেকে লুকিয়ে লুকিয়ে বই কিনে নিয়ে আসতাম। এই বইপড়াটা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবেই আমার বিসিএস জার্নিতে সহায়তা করেছে। আমি অনার্স শেষ করেই বিসিএসের জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করি। বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ করতাম, তারা কী কী বই পড়ছে? তা জেনে নিতাম। আমিও ওই বইগুলো কিনে পড়া শুরু করতাম। বই কেনার ব্যাপারে কোন কার্পণ্য থাকা উচিত নয়। লিখিত পরীক্ষার জন্য নোট করে করে পড়তাম। একটি বিষয়ের ওপরে ৪-৫টি বই, জার্নাল একসাথে রেখে নোট করতাম। চেষ্টা করতাম আমার লেখা যাতে অন্য দশ জনের মতো না হয়। ভিন্ন কিছু যেন থাকে। পেপার কাটিং রাখতাম, সেগুলো খাতায় পেস্ট দিয়ে লাগিয়ে দিতাম। সাথে অন্য কোনো নোট থাকলে পাশে লিখে রাখতাম। লিখিত পরীক্ষার জন্য প্রচুর সময় নোট করার কাজে ব্যয় করেছি, যা কাজে লেগেছে। আমি সব সময়ই নিজের মতো করে নোট করে পড়তে ভালোবাসি।

সব সময় বাবা-মায়ের সাপোর্ট ছিলপর্দার আড়ালে মূলত আমার বাবাই আমাকে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন। আমরা চার ভাইয়ের মধ্যে দুই ভাই কানাডা স্থায়ী। আরেক ভাই ছিলেন লন্ডন। আমার মা বলতেন, ‘সব ছেলেই যদি বাইরে চলে যায়, তাহলে আমাদের দেখবে কে?’ আমাকে ফরেস্টি বিষয়ে পড়তে বাবাই পরামর্শ দিয়েছিলেন। তার স্বপ্ন ছিল, একটি সন্তান বিসিএস ক্যাডার হয়ে দেশ ও জাতির জন্য কাজ করবে। তাই মা-বাবার আশা পূরণ করতে আমার বিসিএস সংগ্রাম।

বিসিএসের সিলেবাসটা খুব গুরুত্বপূর্ণবিসিএস পরীক্ষার তিনটি স্টেজ। প্রিলি, লিখিত ও ভাইবা। তিনটি স্তরের প্রস্তুতি এক নয়। প্রিলি ও লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য নিয়মিত পত্রিকা, বিভিন্ন বিষয়ের ওপর টেক্সট বই পড়তে হবে। নিয়মিত কিছু কিছু নোট করার অভ্যাস খুব ভালো কাজ দেয়। বিসিএসের সিলেবাসটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। সিলেবাস অনুসরণ করে প্রস্তুতি নিতে পারলে তা ভালো নম্বর পেতে সহযোগিতা করে। প্রিলির জন্য সাম্প্রতিক সময়ের বিষয়গুলো জানা থাকলে ভালো। লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতিটা খুব এক্সক্লুসিভ হওয়া উচিত বলে মনে করি। আমি ৩৮তম লিখিত পরীক্ষার ক্ষেত্রে ‘No Stone Unturned’ পলিসি অনুসরণ করি। চেষ্টার কোনো ত্রুটি রাখা যাবে না। টার্গেট করতে হবে, এই বিসিএসেই আমি একটা না একটা ক্যাডার পাবো। তাহলে সবকিছুই সম্ভব। লিখিত পরীক্ষায় টাইম ম্যানেজমেন্ট খুব গুরুত্বপূর্ণ। পরীক্ষার খাতায় নিজের সর্বোচ্চটা দিয়ে আসতে হবে। আমি লিখিত পরীক্ষার আগে ম্যাথ ক্লিয়ার করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বন্ধুকে তিন দিন আমার বাসায় রেখে দিয়েছিলাম। সুতরাং নিজের দুর্বল দিকগুলো যে কোনো উপায়েই কাটিয়ে ওঠার বিকল্প নেই।

Advertisement

ভাইবায় স্মার্টলি কথা বলতে হবেভাইবার ক্ষেত্রে manner and etiquette সম্পর্কে জানতে হবে। স্মার্টলি কথা বলতে হবে। কোনো বিষয়ে না জানলে সিম্পলি সরি বলতে হবে। সাম্প্রতিক বিষয়গুলো সম্পর্কে ধারণা নিয়ে যেতে হবে। নিজের মেজর সম্পর্কে আইডিয়া থাকা ভালো। কঠিন বিষয়গুলো বাদ না দিয়ে আরেকটু বেশি সময় দিয়ে দেখা উচিত। পাশাপাশি ‘No Stone Unturned’ পলিসি অনুসরণ করা। চেষ্টা করলে সব বিষয়েই ধারণা লাভ করা যায়।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা আমার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা হলো জলবায়ু পরিবর্তন ও বন ব্যবস্থাপনার ওপর উচ্চতর ডিগ্রি নেওয়া। এশিয়ার ও উন্নত বিভিন্ন রাষ্ট্রের বন ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে ধারণা নেওয়া। সেই জ্ঞান আমাদের দেশের বন ব্যবস্থাপনায় কাজে লাগানো।

এসইউ/এমএস