মাকামে ইবরাহিম এক অনন্য নিদর্শন। কাবা শরিফ নির্মাণে সময় এ পাথরটি হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালামকে নিয়ে ঠিক ততটুকু ওপরে ওঠতো; যখন যতটুকু ওঠার প্রয়োজন হতো। আর এ কারণেই আল্লাহ তাআলা এ পাথরটিকে মুসলিম উম্মাহর কাছে তার নিদর্শন হিসেবে তুলে ধরেছেন। কাবা শরিফ নির্মাণ শেষে বাবা-ছেলের কাজের গুরুত্বপূর্ণ অনুসঙ্গ পাথরটির সন্নিকটে দাঁড়িয়ে নামাজ পড়ার কথা বলেছেন। এমনকি এ স্থানের দোয়া আল্লাহ তাআলা কবুল করেন। মহান রব বলেন-
Advertisement
وَ اِذۡ جَعَلۡنَا الۡبَیۡتَ مَثَابَۃً لِّلنَّاسِ وَ اَمۡنًا ؕ وَ اتَّخِذُوۡا مِنۡ مَّقَامِ اِبۡرٰهٖمَ مُصَلًّی ؕ وَ عَهِدۡنَاۤ اِلٰۤی اِبۡرٰهٖمَ وَ اِسۡمٰعِیۡلَ اَنۡ طَهِّرَا بَیۡتِیَ لِلطَّآئِفِیۡنَ وَ الۡعٰکِفِیۡنَ وَ الرُّکَّعِ السُّجُوۡدِ
‘আর (সেই সময়কে স্মরণ কর) যখন কাবা ঘরকে মানবজাতির সম্মিলনক্ষেত্র ও নিরাপত্তাস্থল করেছিলাম। (এবং বলেছিলাম) তোমরা মাকামে ইবরাহিমকে (ইবরাহিমের দাঁড়ানোর জায়গায়) নামাজের জায়গা হিসেবে গ্রহণ করো।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ১২৫)
হজ-ওমরা পালনের সময় কাবা ঘর তাওয়াফকারী আল্লাহর মেহমানদের জন্য এ স্থানে নামাজ ও দোয়া করা জরুরি। কারণ এ স্থানটিতে দোয়া করলে মহান আল্লাহ তা কবুল করেন।
Advertisement
হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালামের পায়ের চিহ্ন সম্বলিত একটি পাথর হলো ‘মাকামে ইবরাহিম’। যা কাবা ঘর নির্মাণের সময় হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালামের জন্য লিফটের মতো উপরে নিচে ওঠা-নামার কাজে ব্যবহৃত হতো। মাকামে ইবরাহিম সম্পর্কে হাদিসের একাধিক নির্দেশনা এসেছে, তাহলো-
১. হজরত আমর বিন আস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি- ‘নিশ্চয়ই হাজরে আসওয়াদ ও মাকামে ইবরাহিম বেহেশতের দুটি ইয়াকুত পাথর। আল্লাহ এই দুটি পাথরে নূর মিশিয়ে দিয়েছেন। এগুলোর আলোতে পূর্ব থেকে পশ্চিম পর্যন্ত সমস্ত ভূখণ্ড আলোকোজ্জ্বল হয়ে যেত।’ (তিরমিজি)
২. অন্য বর্ণনায় এসেছে যে, হজরত জিবরাইল আলাইহিস সালাম মাকামে ইবরাহিমকে (পাথর) নিয়ে এসে হজরত ইবরাহিম আলাইহি সালামের পায়ের নিচে রেখে দেন।
কাবা চত্ত্বরে মাকামে ইবরাহিম স্থাপন
Advertisement
৩. নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সময় থেকে হজরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু-এর খিলাফাতের সময় পর্যন্ত এ পাথর বাইতুল্লাহর সঙ্গে মিলিত ছিল।
৪. হজরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু-এর খেলাফতের সময় বন্যার স্রোতে এ পাথরটি ভেসে যায়। পরে তিনি তা সংগ্রহ করে বাইতুল্লাহ থেকে একটু দূরে সরিয়ে অন্য পাথর দিয়ে স্থায়ীভাবে পরিবেষ্টিত করে রেখে দেন। সে সময় থেকে আজও মাকামে ইবরাহিম নামের ঐতিহাসিক পাথরটি কাবা চত্ত্বরে কাঁচ দিয়ে ঘেরাও অবস্থায় হজরত ওমরের স্থাপিত স্থানেই সুরক্ষিত আছে। (বাইহাকি)
হজ ও ওমরা পালনকারীদের মনে রাখতে হবে, মাকামে ইবরাহিম আল্লাহ তাআলার ঐতিহাসিক নির্দশন সমূহের অন্যতম একটি। আর তা মুসলিম উম্মাহর জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে অনেক বড় উপহার এবং অনেক প্রাচীন নির্দশন।
এ জান্নাতি পাথরে হজরত ইবরাহিম আলাইহি সালামের পায়ের ছাপ/দাগ এখনও বিদ্যমান। হজ ওমরা ও জিয়ারতকারীরা কাবা চত্ত্বরে কাঁচ ঘেরাও মাকামে ইবরাহিমের পাশে দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করেন এবং তা নিজ চোখে দেখে আত্মতৃপ্তি লাভ করেন।
শুধু তাই নয়
হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালাম তাঁর ছেলে হজরত ইসমাইল আলাইহিস সালামকে নিয়ে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যখন কাবা ঘর নির্মাণ শেষ করেন; তখন আল্লাহ তাআলা হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালামকে বিশ্বব্যাপী হজের আহ্বান জানানোর নির্দেশ প্রদান করেন।
তখন এ পাথরের উপর দাঁড়িয়েই হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালাম বিশ্ববাসীর প্রতি হজের আহ্বান জানিয়েছিলেন। যার ফলশ্রুতিতে দিনরাত অনবরত ওমরা, হজ ও জিয়ারতে মুসলিম উম্মাহর আগমন ঘটে কাবার প্রাঙ্গণে।
সুতরাং হজ ও ওমরার সব রোকনগুলো যথাযথ আদায়ের পাশাপাশি দোয়া কবুলের স্থান মাকামে ইবরাহিমে নামাজ পড়ার সঙ্গে দোয়া করার জরুরি।
হজ ও ওমরা পালনকারীরা তাওয়াফ সম্পন্ন করার পর পরই মাকামে ইবরাহিমের কাছে দাঁড়িয়ে ২ রাকাআতন নামাজ আদায় করে। আল্লাহর নির্দেশে এ স্থানে নামাজ আদায় করেছেন প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।
আল্লাহ তাআলঅ মুসলিম উম্মাহকে বাইতুল্লাহ জিয়ারতের তাওফিক দান করুন। হজ ও ওমরার কাজগুলো যথাযথ পালনের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা সব নিদর্শনসমূহ স্বচক্ষে দেখার তাওফিক দান করুন। মাকামে ইবরাহিমে নামাজ পড়ার পাশাপাশি মনের আশা-আকাঙক্ষা পূরণে দোয়া করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/জিকেএস