প্রতি বছরের ৩ মে বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস উপলক্ষে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার সূচক প্রকাশ করে আন্তর্জাতিক সংস্থা রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস (আরএসএফ), যেখানে দেখা যায় ইউরোপের কয়েকটি দেশ, বিশেষ করে নরওয়ে, এস্তোনিয়া, নেদারল্যান্ডসের মতো দেশগুলো স্বাধীন সাংবাদিকতার সূচকে শীর্ষে থাকে। আর তালিকার তলানিতে থাকে মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশগুলো। এমনকি বাংলাদেশও তালিকার বেশ নিচের দিকে থাকে।
Advertisement
গত বছরের তুলনায় বাংলাদেশ এবার ১৬ ধাপ এগোলেও এখানে স্বাধীন সাংবাদিকতার পরিস্থিতি ‘বেশ গুরুতর’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে আরএসএফ। ২০২৫ সালের সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ১৪৯তম। এ বছরের সূচকে স্বাধীন সাংবাদিকতায় দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ভারত, পাকিস্তান ও ভুটানের চেয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে থাকলেও পিছিয়ে আছে নেপাল, শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপের চেয়ে। মজার ব্যাপার হলো, সূচকে ২০২৪ সালে ১১ ধাপ পেছানোর পর এ বছর আরও দুই ধাপ পিছিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এমনকি এবার স্বাধীন সাংবাদিকতার সূচকে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান আফ্রিকার যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ সিয়েরা লিওনেরও নিচে। এর বিপরীতে টানা নবমবারের মতো স্বাধীন সাংবাদিকতার সূচকের শীর্ষে আছে ইউরোপের দেশ নরওয়ে। তালিকার দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে ইউরোপের দেশ এস্তোনিয়া ও নেদারল্যান্ডস।
প্রশ্ন হলো, এই দেশগুলো বরাবরই কেন স্বাধীন সাংবাদিকতা বা মুক্ত গণমাধ্যমের সূচকে তালিকার শীর্ষে থাকে আর মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা ও দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো, বিশেষ করে বাংলাদেশ কেন তালিকার নিচের দিকে থাকে?
সংবিধান সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার নিশ্চয়তা দিলেও এখনো বাংলাদেশে সাইবার নিরাপত্তার নামে গণমাধ্যমকে চাপে রাখা হয়েছে। অফিসিয়াল সিক্রেসি অ্যাক্টের মতো আইন এখনো বিদ্যমান। তথ্য অধিকার আইন হওয়ার ফলে সাংবাদিক তো বটেই, যে কোনো নাগরিকের তথ্য পাওয়া অধিকতর সহজ হওয়ার কথা থাকলেও অনেক ক্ষেত্রেই উল্টো হয়েছে।
Advertisement
২.যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে গণতন্ত্র ও পরমতসহিষ্ণুতার উদাহরণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়, সেই দেশটি এবার স্বাধীন সাংবাদিকতার সূচকে কেন যুদ্ধবিধ্বস্ত সিয়েরা লিওনেরও নিচে? আরএসএফের মতে, দ্বিতীয় দফায় প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতায় ‘আশঙ্কাজনক অবনতি’ ঘটিয়েছেন, যা দেশটিতে ‘স্বৈরাচারী মোড়ের’ ইঙ্গিত দেয়।
তার মানে কোনো একটি দেশের গণমাধ্যম কতটা স্বাধীনতা ভোগ করবে বা সাংবাদিকরা কতটা মুক্তভাবে ও ভয়হীন পরিবেশে কাজ করতে পারবেন, সেটি প্রধানত নির্ভর করে সরকারের দৃষ্টিভঙ্গির ওপর। এক্ষেত্রে দেশগুলো তাদের সংবিধানে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা কতটুকু নিশ্চিত করেছে; অন্যান্য আইনি কাঠামো কতটা গণমাধ্যম-সহায়ক; ক্ষমতাসীন দল ও তাদের স্টেকহোল্ডাররা গণমাধ্যমের ওপর কতটা প্রভাব বিস্তার করতে পারে বা কতটা চাপে রাখে বা রাখতে পারে; রাষ্ট্রের নির্বাহী বিভাগ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও অন্যান্য বাহিনী গণমাধ্যমকে কতটা ভয় পায় বা সমীহ করে—এরকম অনেকগুলো বিষয়ের ওপর সংশ্লিষ্ট দেশের সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা নির্ভর করে। তবে এসব কিছুর বাইরে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা বা সাংবাদিকের ভয়হীন ও মুক্ত পরিবেশে কাজ করার বিষয়টি নির্ভর করে মূলত তার পেশাগত নিশ্চয়তার ওপরে। বিশেষ করে বাংলাদেশের মতো তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোয়, যেখানে মৌলিক মানবাধিকারগুলো নিশ্চিত করাই নাগরিকদের প্রধান চ্যালেঞ্জ এবং সাংবাদিকের পেশাগত নিশ্চয়তা নেই, সেখানে গণমাধ্যমকে চাপে রাখা বা ভয়ের মধ্যে রেখে গণমাধ্যমকে প্রচারমাধ্যমে পরিণত করা ক্ষমতাবানদের পক্ষে সহজ।
৩.আরএসএফ’র এ বছরের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ বছর বিশ্বের ৪২টি দেশে— যেখানে বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি মানুষ বসবাস করে, সেখানে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা পুরোপুরি অনুপস্থিত এবং এসব দেশে সাংবাদিকতা করা অত্যন্ত বিপজ্জনক। এর মধ্যে অন্যতম ফিলিস্তিন, যেখানে ১৮ মাস ধরে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী সাংবাদিকতাকে নিশ্চিহ্ন করে দিচ্ছে; প্রায় ২০০ জন গণমাধ্যমকর্মী নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে অন্তত ৪৩ জনকে কাজ করার সময় হত্যা করা হয়েছে এবং অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় একধরনের তথ্যবিচ্ছিন্নতা চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। ইসরায়েল এ বছর আরও ১১ ধাপ নিচে নেমে গেছে।
এ বছর তিনটি পূর্ব আফ্রিকান দেশ উগান্ডা, ইথিওপিয়া এবং রুয়ান্ডাকে সাংবাদিকতার জন্য ‘অত্যন্ত গুরুতর’ বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। এশিয়ার দেশ হংকং এবার প্রথমবারের মতো লাল জোনে ঢুকেছে। তার প্রতিবেশী চীন, উত্তর কোরিয়াও একই শ্রেণিভুক্ত। মধ্য এশিয়ার দেশ কিরগিজস্তান ও কাজাখস্তান, মধ্যপ্রাচ্যের জর্ডানের পরিস্থিতিও খারাপ, যার প্রধান কারণ হলো সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে দমনমূলক আইনের প্রয়োগ।
Advertisement
এ বছর স্বাধীন সাংবাদিকতার সূচকে একেবারে তলানিতে, অর্থাৎ ১৮০টি দেশের মধ্যে সবার নিচে রয়েছে পূর্ব আফ্রিকার দেশ ইরিত্রিয়া। এখান গণমাধ্যম সম্পূর্ণরূপে রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত। দেশে কোনো স্বাধীন সংবাদমাধ্যম নেই। এখানে বিদেশি সাংবাদিকদেরও প্রবেশ নিষেধ। ফলে নিরপেক্ষ তথ্যপ্রবাহ ব্যাহত হয়। ইরিত্রিয়ায় বহু সাংবাদিক বহু বছর ধরে বিনা বিচারে আটক রয়েছেন। তাদের কেউ কেউ নিরুদ্দেশ বলেও মনে করা হয়। এখানে ইন্টারনেট ও যোগাযোগ ব্যবস্থায় রাষ্ট্র কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে। নাগরিকদের ইন্টারনেটে প্রবেশাধিকার সীমিত এবং অনলাইন তথ্য প্রচারে কঠোর নজরদারি ও সেন্সরশিপ আরোপ করা হয়। এসব কিছুর মূলে রয়েছে গণতন্ত্রহীনতা। ইরিত্রিয়ায় পিপলস ফ্রন্ট ফর ডেমোক্রেসি অ্যান্ড জাস্টিস (PFDJ) একমাত্র বৈধ রাজনৈতিক দল। ফলে দেশে নির্বাচন হয় না। বিরোধী মত প্রকাশও নিষিদ্ধ। তার মানে স্বাধীন সাংবাদিকতার জন্য যে ধরনের রাষ্ট্রীয় পরিকাঠামো দরকার, আফ্রিকার এই দেশটিতে তা সম্পূর্ণ অনুপস্থিত।
৪.ইউরোপের যে দেশগুলো স্বাধীন সাংবাদিকতার সূচকে শীর্ষে থাকে, সেসব দেশ অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধশালী, দুর্নীতি ও অপরাধপ্রবণতা কম, রাজনৈতিক ভিন্নমত পোষণ রাষ্ট্র কর্তৃক স্বীকৃত তথা রাষ্ট্র নাগরিকদের বাকস্বাধীনতার সুরক্ষা দেয়। পক্ষান্তরে নাগরিকদের মৌলিক মানবাধিকার নিয়ে চিন্তিত থাকতে হয় না। কেউ কোনো কারণে কাজ করার সুযোগ না পেলেও তাকে অন্তত না খেয়ে মরতে হয় না। তার মাথা গোঁজার ঠাঁই থাকে। তার সন্তানের পড়ালেখা এবং চিকিৎসার দায়িত্বও রাষ্ট্রের। এর বাইরে আরও কিছু ফ্যাক্টর কাজ করে, যেগুলো এসব দেশে সাংবাদিকদের স্বাধীনভাবে কাজ করার ক্ষেত্রে সহায়ক হয়।
যেমন নরওয়ে। তারা পরপর নবম বছরের মতো স্বাধীন সাংবাদিকতার শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে এবং অন্য দেশের তুলনায় তার ব্যবধান আরও বাড়িয়েছে। এস্তোনিয়া দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে, আর নেদারল্যান্ডস তৃতীয়। সুইডেনকে পেছনে ফেলে এবার সে বিশ্বের শীর্ষ তিনে জায়গা করে নিয়েছে। তার একটি প্রধান কারণ নেদারল্যান্ডসে দুর্নীতি নেই বা তুলনামূলক কম। বড় ধরনের অপরাধও নেই। ফলে এখানে সাংবাদিকদের ঝুঁকি ও চ্যালেঞ্জ কম।
নরওয়ের সংবিধানে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে বেশ সুস্পষ্ট ও শক্তিশালী বিধান রয়েছে, যাকে নরওয়ের গণতান্ত্রিক কাঠামোর একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বলা হয়েছে, প্রত্যেক নাগরিকের তথ্য ও মতামত গ্রহণ, ধারণ এবং প্রকাশের অধিকার রয়েছে—এটি গণতন্ত্রের পূর্বশর্ত। নরওয়েতে তথ্য বা সংবাদ প্রকাশের আগে কোনো ধরনের সেন্সর বা অনুমতির প্রয়োজন হয় না। তবে কেউ যদি প্রকাশিত মতামতের মাধ্যমে আইন লঙ্ঘন করে, তবে তার জন্য পরে জবাবদিহি করতে হয়।
নরওয়ে মনে করে, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব, যাতে একটি উন্মুক্ত ও তথ্যসমৃদ্ধ জনপরিসর গড়ে ওঠে। রাষ্ট্রের কাছে নাগরিকের তথ্য পাওয়ার অধিকার রয়েছে, যাতে তারা জনজীবন ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সক্রিয় অংশ নিতে পারে। সংবিধানের এ ধারাটি ২০০৪ সালে হালনাগাদ করা হয়, যাতে আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের মানদণ্ড সুরক্ষা এবং ডিজিটাল দুনিয়ার সঙ্গে খাপ খাওয়ানো যায়।
একইভাবে এস্তোনিয়ার সংবিধানেও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা সম্পর্কে সুস্পষ্ট ও সুরক্ষিত বিধান রয়েছে। বলা হয়েছে: Everyone shall have the right to freely disseminate ideas, opinions, beliefs and other information by word, print, picture or other means. This right may be restricted by law to protect public order, morals, the rights and freedoms, health, honour and good name of others, as well as for preventing the disclosure of confidential information or for ensuring the independence of the courts. There shall be no censorship. Everyone shall have the right to freely obtain information disseminated for public use.
সংবিধানের এ ধারায় তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় প্রতিফলিত হয়েছে: ১. মতপ্রকাশ ও তথ্য প্রচারের স্বাধীনতা। অর্থাৎ যে কোনো মাধ্যমে মতামত ও তথ্য প্রকাশের অধিকার স্বীকৃত। ২. সেন্সরশিপ আরোপ নিষিদ্ধ। ৩. তথ্য পাওয়ার অধিকার।
বাংলাদেশের সংবিধানেও সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হয়েছে এমনকি ২০০৯ সালে এখান তথ্য অধিকার আইনও হয়েছে। কিন্তু তারপরও স্বাধীন সাংবাদিকতার সূচকে যে বরাবরই বেশ নিচের দিকে থাকে, তার পেছনে বহুবিধ কারণ রয়েছে। তার মধ্যে প্রধান কারণ নাগরিকের সুরক্ষার দোহাই দিয়ে এমন সব আইনি কাঠামো গড়ে তোলা হয়েছে, যার মূল উদ্দেশ্য ক্ষমতাবানদের কাজকে প্রশ্নাতীত রাখা।
সংবিধান সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার নিশ্চয়তা দিলেও এখনো বাংলাদেশে সাইবার নিরাপত্তার নামে গণমাধ্যমকে চাপে রাখা হয়েছে। অফিসিয়াল সিক্রেসি অ্যাক্টের মতো আইন এখনো বিদ্যমান। তথ্য অধিকার আইন হওয়ার ফলে সাংবাদিক তো বটেই, যে কোনো নাগরিকের তথ্য পাওয়া অধিকতর সহজ হওয়ার কথা থাকলেও অনেক ক্ষেত্রেই উল্টো হয়েছে। কেননা এখন আইনের ফাঁক ব্যবহার করেই তথ্য পাওয়ার পথ আরও সংকুচিত করা হয়েছে, যার পেছনে রয়েছে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর তথ্য গোপনের ‘সংস্কৃতি’ এবং নাগরিককে ভৃত্য ভাবার মানসিকতা।
বাংলাদেশ স্বাধীন সাংবাদিকতা বাধাগ্রস্ত হওয়ার কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে
ক. দমনমূলক আইন ও মামলার ভয়: সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বা সাইবার নিরাপত্তা আইনের আওতায় মামলার একটি বড় আতঙ্কে পরিণত হয়েছে। এসব আইনের অস্পষ্ট ধারাগুলো বহু ক্ষেত্রেই সংবাদকর্মীদের হয়রানি করতে ব্যবহৃত হয়। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পরে বলেছিল এ আইনটি বাতিল করবে। কিন্তু এখনো বাতিল করেনি।
খ. রাজনৈতিক চাপ ও মালিকানা নিয়ন্ত্রণ: গণমাধ্যমের মালিকানা দিন দিন রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত হচ্ছে। বেশিরভাগ প্রধান গণমাধ্যম ক্ষমতাসীনদের ঘনিষ্ঠ মালিকানাধীন হওয়ায় সাংবাদিকরা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারেন না।
গ. সাংবাদিকদের নিরাপত্তাহীনতা: অনেক ক্ষেত্রেই সাংবাদিকদের ওপর শারীরিক হামলা, হুমকি বা নিপীড়নের অভিযোগ ওঠে, বিশেষ করে ক্ষমতাবানদের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন প্রকাশ করলে। এসব ঘটনার বেশিরভাগেরই কোনো বিচার হয় না।
ঘ. তথ্যপ্রাপ্তির প্রতিবন্ধকতা: তথ্য অধিকার আইন থাকলেও অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেতে সাংবাদিকরা নানাবিধ হয়রানির শিকার হন। রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তা রক্ষার নামে প্রায়শই গণমাধ্যমকে তথ্যবঞ্চিত করা হয়।
ঙ. অর্থনৈতিক নির্ভরতা ও পেশাগত দুর্বলতা: বিজ্ঞাপন নির্ভরতা এবং সাংবাদিকদের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ, ন্যায্য মজুরি ও চাকরির নিরাপত্তার অভাব স্বাধীন সাংবাদিকতাকে দুর্বল করে তুলেছে।
পরিশেষে, বাংলাদেশের সংবিধান স্বাধীন সাংবাদিকতার পক্ষে। কিন্তু বাস্তবে সাংবাদিকদের প্রতিনিয়ত আইন, রাজনীতি, সহিংসতা এবং অর্থনৈতিক চাপে কাজ করতে হয়। এই দ্বৈত বাস্তবতা দূর না করা পর্যন্ত বাংলাদেশ স্বাধীন সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে উন্নতি করতে পারবে না। ফলে প্রতি বছরই বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবসে আরএসএফ স্বাধীন সাংবাদিকতার সূচক প্রকাশ করবে এবং সেখানে মিলিয়ে দেখতে হবে বাংলাদেশের চেয়েও খারাপ অবস্থায় কোন কোন দেশ আছে?
আগামী এক দশকের মধ্যেই বাংলাদেশের অবস্থা নরওয়ের মতো হয়ে যাবে, এটি প্রত্যাশা করা বোকামি। কিন্তু রাজনৈতিক দল এবং সরকার—উভয়কে এটা উপলব্ধি করতে হবে যে, তারা যদি সত্যিই বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে চায়, যদি দেশকে একটি শক্তিশালী গণতান্ত্রিক ভিত্তির ওপর দাঁড় করাতে চায়, তাহলে তাকে প্রথমেই গণমাধ্যমের স্বাধীনতার পক্ষে দাঁড়াতে হবে।
লেখক: সাংবাদিক ও লেখক।
এইচআর/এমএফএ/এএসএম