থাই জাতের বারোমাসি পেয়ারা চাষ করে সফল হয়েছেন চট্টগ্রামের যুবক আলাউদ্দিন মো. তৌফিক। তিনি মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল এসে পতিত জমি ইজারা নিয়ে বারোমাসি থাই পেয়ারার বাগান করেছেন।
Advertisement
শিক্ষিত এ যুবক সাবলম্বী হওয়ার আশায় শ্রীমঙ্গলে প্রথম হলুদ রঙের তরমুজ চাষ করে চমক সৃষ্টি করেছিলেন। পাশাপাশি লাভবানও হয়েছিলেন।
শ্রীমঙ্গল উপজেলার কালাপুর ইউনিয়নের রাজাপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, পতিত জমি লিজ নিয়ে বারোমাসি থাই পেয়ারা বাগান করেছেন আলাউদ্দিন। এক বছর বয়সের প্রতিটি গাছেই থোকায় থোকায় ঝুলছে পেয়ারা। জেলায় বাণিজ্যিকভাবে থাই পেয়ারা এই প্রথম চাষ করা হয়েছে। কম সময়ে বেশি লাভজনক পেয়ারা চাষ করে এলাকায় সাড়া ফেলে দিয়েছেন।
কৃষি বিভাগ বলছে, এ পেয়ারা উৎপাদনে একদিকে যেমন পুষ্টি চাহিদা পূরণ হচ্ছে, অন্যদিকে পতিত জমি কৃষির আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে। তিনি কালাপুর ইউনিয়নের রাজাপুর গ্রামের পতিত ১২ বিঘা জমি লিজ নিয়ে ২০২১ সালের এপ্রিল মাসে ঝিনাইদহ থেকে বারোমাসি থাই পেয়ারার চারা এনে রোপণ করেন।
Advertisement
জানা যায়, তার বাগানে আছে প্রায় ৫ হাজার থাই পেয়ারা গাছ। মাত্র এক বছর বয়সের গাছের উচ্চতা আড়াই থেকে ৩ ফুট। প্রতিটি গাছে ভালো ফল এসেছে। প্রতি গাছে ঝুলছে ছোট-বড় সাইজের হাজারো পেয়ারা। পেয়ারাগুলো প্যাকেট করায় পোকামাকড় দমনে কীটনাশক দিতে হচ্ছে না। এতে ফলের রং সুন্দর থাকে।
কীটনাশকমুক্ত ফল উৎপাদনের পাশাপাশি বাগানে কর্মসংস্থান হয়েছে বেশকিছু বেকার যুবকের। বাগানে গেলে কথা হয় শ্রমিক আব্দুল মাজেদের সঙ্গে। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘আগে বেকার ছিলাম। এ বাগানে কাজ করতে পারছি। নিয়মিত গাছের যত্ন করতে হয়। শুরু থেকে কাজ করছি। কাজে কোনো কষ্ট নেই। পরিবার-পরিজন নিয়ে ভালো আছি।’
শ্রমিক মো. আজমল মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, ‘রাস্তার পাশে বাগান হওয়ায় দর্শনার্থীদের ঝামেলা বেশি। প্রতিদিনই বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন নতুন জাতের এ ফল দেখতে আসেন।’
এমন পেয়ারা বাগান করার ইচ্ছা রাজাপুর গ্রামের গৌতম দাশের। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘রাজাপুর গ্রামের বাংলা বাড়ির পতিত জায়গায় পেয়ারা চাষে সফল হয়েছেন আলাউদ্দিন। এতে বেকার সমস্যা নিরসন করা সম্ভব তাই পেয়ারা বাগান করার উদ্যোগ নিয়েছি।’ আলাউদ্দিন মো. তৌফিক জাগো নিউজকে বলেন, ‘নতুন নতুন চাষ করা আমার নেশা। এই নেশা এখন পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছি। ২০২১ সালে এ জায়গা লিজ নিয়ে পেয়ারার পাঁচ হাজার গ্রাফটিং চারা এনে এপ্রিল মাসে রোপণ করি। এতে প্রায় ৫ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। চারার বয়স ১ বছর হওয়ার আগেই ফল আসতে শুরু করেছে। প্রতিকেজি ৮০-১০০ টাকা দরে প্রতিসপ্তাহে প্রায় ২শ কেজি পেয়ারা বিক্রি করতে পারছি।’
Advertisement
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নিলুফা ইয়াসমিন মোনালিসা সুইটি জাগো নিউজকে বলেন, ‘পাহাড়ি এলাকার পতিত জমি কৃষির আওতায় আনার জন্য উদ্যোক্তা সৃষ্টি করছি। তৌফিক পেয়ারা বাগান করার উদ্যোগ নিলে তাকে সব রকম সহযোগিতা করছি। এটি দেখে অনেকে উৎসাহী হয়ে পেয়ারা বাগান করার জন্য আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন।’
মৌলভীবাজার কৃষি সম্পসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ কাজী লুৎফুল বারী জাগো নিউজকে বলেন, ‘বারোমাসি পেয়ারা এলাকায় নতুন। এটি চাষে কৃষক যেমন লাভবান হচ্ছেন; তেমনই আমাদের পুষ্টি চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে। পাহাড়ি এলাকায় এমন বাগান করায় কারিগরি সহযোগিতা দিয়ে বাণিজ্যিকভাবে চাষ বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’
আব্দুল আজিজ/এসইউ/জিকেএস