ইসলাম ও মুসলমানদের জন্য ইয়াহুদিদের চক্রান্ত নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সময় থেকে চলে আসছে। সে সময়ও তারা নবিজীর প্রতি অনেক বিষয়ে আপত্তি উপস্থাপন করতো। আর সেসব খণ্ডনে মহান আল্লাহ কোরআনে আয়াত নাজিল করতেন। ইয়াহুদিদের এমনই কিছু চক্রান্ত ও অভিযোগ খণ্ডনে আল্লাহ তাআলা উল্লেখিত ৩টি আয়াত নাজিল করেন। তাহলো-
Advertisement
کُلُّ الطَّعَامِ کَانَ حِلًّا لِّبَنِیۡۤ اِسۡرَآءِیۡلَ اِلَّا مَا حَرَّمَ اِسۡرَآءِیۡلُ عَلٰی نَفۡسِهٖ مِنۡ قَبۡلِ اَنۡ تُنَزَّلَ التَّوۡرٰىۃُ ؕ قُلۡ فَاۡتُوۡا بِالتَّوۡرٰىۃِ فَاتۡلُوۡهَاۤ اِنۡ کُنۡتُمۡ صٰدِقِیۡنَ
তওরাত অবতীর্ণ হওয়ার আগে ইসরাঈল (ইয়াকুব আ.) নিজের জন্য যা অবৈধ করেছিল, তা ব্যতিত বনি ইসরাঈলের জন্য যাবতীয় খাদ্যই বৈধ ছিল। বল, ‘যদি তোমরা সত্যবাদী হও, তবে তওরাত আন এবং তা পাঠ কর।’ (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ৯৩)
فَمَنِ افۡتَرٰی عَلَی اللّٰهِ الۡکَذِبَ مِنۡۢ بَعۡدِ ذٰلِکَ فَاُولٰٓئِکَ هُمُ الظّٰلِمُوۡنَ
Advertisement
‘এরপরও যারা আল্লাহর প্রতি মিথ্যা আরোপ করে, তারাই অত্যাচারী।’ (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ৯৪)
قُلۡ صَدَقَ اللّٰهُ ۟ فَاتَّبِعُوۡا مِلَّۃَ اِبۡرٰهِیۡمَ حَنِیۡفًا ؕ وَ مَا کَانَ مِنَ الۡمُشۡرِکِیۡنَ
‘বল, আল্লাহ সত্য বলেছেন। সুতরাং তোমরা একনিষ্ঠ ইবরাহিমের ধর্মাদর্শ অনুসরণ কর এবং সে মুশরিকদের দলভুক্ত ছিল না।’ (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ৯৫)
আয়াত ৩টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সুরা আল ইমরানের ৯৩-৯৫নং আয়াত এগুলো। আয়াতগুলো ইয়াহুদিদের অভিযোগ খণ্ডনে অবতীর্ণ হয়। তারা নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলল যে-
Advertisement
‘তুমি নিজেকে ইবরাহিম আলাইহিস সালামের দ্বীনের অনুসারী বলে দাবি কর কিন্তু তুমি উটের গোশত খাও; অথচ ইবরাহিমের দ্বীনে উটের গোশত এবং তার দুধ খাওয়া ও পান করা হারাম ছিল।’
মহান আল্লাহ বললেন, ইয়াহুদিদের এ অভিযোগ ভুল ও ভিত্তিহীন। কারণ, ইবরাহিম আলাইহিস সালামের দ্বীনে এ জিনিসগুলো হারাম ছিল না। তবে হ্যাঁ; কোনো কোনো জিনিস ইসরাঈল (ইয়াকুব আ.) নিজের উপর হারাম করে নিয়েছিলেন। আর তা ছিল এই উটের গোশত এবং তার দুধ। আর তার কারণ ছিল মানত অথবা রোগ। আর ইয়াকুব (আ.)-এর এ কাজও ছিল তাওরাত নাজিল হওয়ার আগের কথা। কারণ আসমানি গ্রন্থ ‘তাওরাত’ ইবরাহিম ও ইয়াকুব (আলাইহিমাস সালাম)-এর অনেক পরে নাজিল হয়। অতএব কিভাবে তোমরা উক্ত অভিযোগ উত্থাপন কর?
তাছাড়া তাওরাতে কিছু জিনিস তোমাদের উপর হারাম করা হয়েছে কেবল তোমাদের জুলুম ও অবাধ্যতার কারণে। যা সুরা আনআম ৪৬ ও সুরা নিসার ১৬০নং আয়াতে বলা হয়েছে।
তাইতো ইয়াহুদিদের উদ্দেশ্যে কোরআনে এ কথা বলা হয়েছে যে, ‘যদি তোমাদের বিশ্বাস না হয়, তাহলে তাওরাত নিয়ে এসো এবং তা পড়ে শুনাও, দেখবে এ কথা পরিষ্কার হয়ে যাবে যে, ইবরাহিম (আ.)-এর সময়ে এ জিনিসগুলো হারাম ছিল না এবং তোমাদের উপর যা কিছু জিনিস হারাম করা হয়েছে তা কেবল তোমাদের জুলুম ও সীমালঙ্ঘনের কারণে। অর্থাৎ, শাস্তি স্বরূপ তা হারাম করা হয়েছিল। (আয়সারুত তাফাসির, আহসানুল বায়ান)
হজরত ইয়াকুব আ. কেন উটের গোশ্ত খাওয়া থেকে বিরত ছিলেন?
হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, ‘ইয়াকুব আলাইহিস সালামের ‘ইরকুন নাসা’ নামক রোগ ছিল। এজন্য তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যে, যদি তিনি এ রোগ থেকে আরোগ্য লাভ করেন তাহলে তিনি উটের গোশত খাওয়া ত্যাগ করবেন। আয়াতে এ ঘটনার দিকেই ইঙ্গিত করা হয়েছে।’ (মুসতাদরাকে হাকেম)
ইয়াহুদিদের মিথ্যা আপত্তি ও তা খণ্ডন
ইয়াহুদিরা আপত্তি করল যে, আপনারা উটের গোশত খান, দুধ পান করেন। অথচ এগুলো ইবরাহিম আলাইহিস সালামের প্রতি হারাম ছিল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উত্তরে বললেন- ‘ভুল কথা, এগুলো তার প্রতি হালাল ছিল।’ ইয়াহুদিরা বলল, আমরা যেসব বস্তু হারাম মনে করি, সবই নূহ ও ইবরাহিমের যুগ থেকেই হারাম হিসাবে চলে এসেছে এবং আমাদের কাছ পর্যন্ত তা পৌঁছেছে। ইয়াহুদিদের এ কথোপকথনের পর আলোচ্য আয়াত নাজিল হয়। এতে ইয়াহুদিদের মিথ্যাবাদিতা প্রতিপন্ন করা হয়েছে। বলা হচ্ছে- তাওরাত নাজিলের আগে উটের গোশত ব্যতিত সব খাদ্যদ্রব্য স্বয়ং বনী-ইসরাঈলের জন্যও হালাল ছিল। তবে উটের গোশত বিশেষ কারণবশত ইয়াকুব আলাইহিস সালাম নিজেই নিজের জন্য নিষিদ্ধ করে নিয়েছিলেন।’ (ইবন কাসির)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে ইয়াহুদিদের কূটকৌশল ও চক্রান্ত থেকে মুক্ত থাকার তাওফিক দান করুন। কোরআন-সুন্নাহর দিকনির্দেশনা অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/জিকেএস