ধর্ম

বিশ্বনবির প্রতি দরূদ পড়ার নিয়ম

দরূদ হলো মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তাঁর পরিবার-পরিজনের প্রতি সালাত তথা দোয়া। আল্লাহর কাছে পরিবারসহ তাঁর জন্য  শুভকামনা, দয়া-করুণা ও প্রার্থনা করা। তাঁর প্রতি দরূদ পড়া অনেক সম্মান ও মর্যাদার ইবাদত। আরবিতে সংক্ষেপে ছোট্ট বাক্যে- صَلَّى اللهُ عَلَى مُحَمَّد (সাল্লাল্লাহু আলা মুহাম্মাদ) কিংবা صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَ سَلَّم (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)ই হলো- দরূদ। তবে কীভাবে বা কোন নিয়মে দরূদ পড়তে হবে তা বলেছেন স্বয়ং বিশ্বনবি। হাদিসে পাকে এসেছে-

Advertisement

হজরত আব্দুর রহমান ইবনু আবু লাইলা রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বর্ণনা করেন, কাব ইবনু উজরা রাদিয়াল্লাহু আনহু আমার সঙ্গে দেখা করে বললেন, আমি কি আপনাকে এমন একটি হাদিয়া (উপহার) দেব না; যা আমি নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে শুনেছি?

আমি বললাম, হ্যাঁ, আপনি আমাকে সে হাদিয়া (উপহার) দিন।

তিনি বললেন, আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলাম- হে আল্লাহর রাসুল! আপনাদের উপর অর্থাৎ আহলে বাইতের উপর কীভাবে দরূদ পাঠ করতে হবে? কেননা, আল্লাহ তো (শুধু) আমাদেরকে জানিয়ে দিয়েছেন- আমরা কিভাবে আপনার প্রতি সালাম জানাবো।

Advertisement

তিনি (রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তোমরা এভাবে বল-

اَللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ، كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى إِبْرَاهِيْمَ، وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيْمَ، إِنَّكَ حَمِيْدٌ مَجِيْدٌ، اَللَّهُمَّ بَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ، كَمَا بَارَكْتَ عَلَى إِبْرَاهِيْمَ، وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيْمَ، إِنَّكَ حَمِيْدٌ مَجِيْدٌ

‘হে আল্লাহ! আপনি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর উপর এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বংশধরদের উপর রহমত বর্ষণ করুন, যেভাবে আপনি ইবরাহিম আলাইহিস সালাম এবং ইবরাহিম আলাইহিস সালামের বংশধরদের উপর রহমত বর্ষণ করেছেন। নিশ্চয়ই আপনি অতি প্রশংসিত, অত্যন্ত মর্যাদার অধিকারী।

হে আল্লাহ! আপনি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বংশধরদের উপর বরকত দান করুন; যেভাবে আপনি বরকত দান করেছেন ইবরাহিম আলাইহিস সালাম এবং ইবরাহিম আলাইহিস সালামের বংশধরদের উপর। নিশ্চয়ই আপনি অতি প্রশংসিত, অতি মর্যাদার অধিকারী।’ (বুখারি, মুসলিম, মুসনাদে আহমাদ)

Advertisement

হাদিসের শিক্ষা

১. এই হাদিসে হজরত মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি বেশি বেশি সালাত ও সালাম পাঠ করার প্রতি উৎসাহ প্রদান করে।

২. হাদিসে ঘোষিত এ দরূদ পড়া উত্তম-

اَللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ، كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى إِبْرَاهِيْمَ، وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيْمَ، إِنَّكَ حَمِيْدٌ مَجِيْدٌ، اَللَّهُمَّ بَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ، كَمَا بَارَكْتَ عَلَى إِبْرَاهِيْمَ، وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيْمَ، إِنَّكَ حَمِيْدٌ مَجِيْدٌ ".

উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদিনও ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদ; কামা সাল্লাইতা আলা ইবরাহিম ওয়া আলা আলি ইবরাহিম; ইন্নাকা হামিদুম মাঝিদ। আল্লাহুম্মা বারিক আলা মুহাম্মাদিও ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদ; কামা বারাকতা আলা ইবরাহিম ওয়া আলা আলি ইবরাহিম; ইন্নাকা হামিদুম মাঝিদ।’

অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আপনি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর উপর এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বংশধরদের উপর রহমত বর্ষণ করুন, যেভাবে আপনি ইবরাহিম আলাইহিস সালাম এবং ইবরাহিম আলাইহিস সালামের বংশধরদের উপর রহমত বর্ষণ করেছেন। নিশ্চয়ই আপনি অতি প্রশংসিত, অত্যন্ত মর্যাদার অধিকারী।

হে আল্লাহ! আপনি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বংশধরদের উপর বরকত দান করুন; যেভাবে আপনি বরকত দান করেছেন ইবরাহিম আলাইহিস সালাম এবং ইবরাহিম আলাইহিস সালামের বংশধরদের উপর। নিশ্চয়ই আপনি অতি প্রশংসিত, অতি মর্যাদার অধিকারী।’ (বুখারি, মুসলিম, মুসনাদে আহমাদ)

৩.দরূদ পড়া সাওয়াব ও ইসলামি শরিয়তের একটি মর্যাদাপূর্ণ ইবাদত। মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি আল্লাহর সালাত তথা দরূদ পড়ার অর্থ হলো- আল্লাহর পক্ষ থেকে তাঁর রাসুল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে অতিশয় সম্মানিত ও গৌরবান্বিত করা। এ কারণেই আল্লাহ তাআলা কোরআনুল কারিমে নিজে দরূদ পড়েন এবং অন্যকে দরূদ পড়তে নির্দেশ দিয়েছেন এভাবে-

اِنَّ اللّٰهَ وَ مَلٰٓئِکَتَهٗ یُصَلُّوۡنَ عَلَی النَّبِیِّ ؕ یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا صَلُّوۡا عَلَیۡهِ وَ سَلِّمُوۡا تَسۡلِیۡمًا

নিশ্চয়ই আল্লাহ (ঊর্ধ্ব জগতে ফেরেশতাদের মধ্যে) নবীর (সালাত) প্রশংসা করেন এবং তাঁর ফেরেশতাগণ নবির জন্য (সালাত) দোয়া করে। হে মুমিনগণ, তোমরাও নবির উপর দরূদ পাঠ কর এবং তাকে যথাযথভাবে সালাম জানাও।’ (সুরা আহজাব : আয়াত ৫৬)

৪. রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে উম্মতের পড়া দরূদ ফেরেশতার মাধ্যমে পৌছানো হয়। উল্লেখিত আয়াতের আলোকে অন্য হাদিসে তা বর্ণিত হয়েছে এভাবে-

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, إِنَّ لِلَّهِ مَلاَئِكَةً سَيَّاحِيْنَ فيِ الأرْضِ يُبَلِّغُونِي مِنْ أُمَّتِي السَّلاَمَ ‘আল্লাহর পক্ষ থেকে পৃথিবীতে এমন অনেক ভ্রমণকারী ফেরেশতামণ্ডলী নির্ধারিত রয়েছেন, যাঁরা আমার প্রতি আমার উম্মতের পক্ষ থেকে সালাম পৌঁছিয়ে দেন।’ (নাসাঈ)

মনে রাখতে হবে

দরূদ কোনো সামান্য বিষয় নয়; যে কারণে কীভাবে দরূদ পড়তে হবে। প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শিখিয়ে দিয়ে গেছেন। সুতরাং দুরূদের মূল অর্থ ও উদ্দেশ্য হলো-

اللهم عَظِّمْهُ في الدنيا والآخرة بما يليق به

‘হে আল্লাহ! আপনি মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে তাঁর উপযুক্ত সম্মান দুনিয়াতে এবং পরকালে দান করুন।’

৫. নামাজে এ দরূদ পড়া

নবি মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের একটি অধিকার বা প্রাপ্য তাঁর উম্মতের উপর হলো এই যে- তাঁর উম্মতের প্রতিটি মানুষ যেন তাঁর প্রতি সালাম পেশ করে। তাই প্রত্যেক মুসলিম নামাজের শেষ বৈঠকে নবির প্রতি দরূদ পাঠায়।

সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, নামাজ ছাড়াও প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি বেশি বেশি দরূদ পড়া। কেননা এ দরূদ দোয়া কবুল ও অনেক কাজের বরকতের অন্যতম উপাদান।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে বেশি বেশি দরূদ পড়ার তাওফিক দান করুন। কোরআন-সুন্নাহর নিদনির্দেশনা মেনে চলার তাওফিক দান করুন। আমিন।

এমএমএস/জিকেএস