খেলাধুলা

মাশরাফি না মাহমুদুল্লাহ- মুকুট উঠছে কার মাথায়

আরেকটি কুমিল্লা-রংপুর হাইভোল্টেজ ম্যাচ, আরেকটি সাকিব-মাশরাফি দ্বৈরথ। না, গল্পটা এমন হলো না। রোববার সাকিবের রংপুরের স্বপ্নযাত্রা থামিয়ে ফাইনালে নাম লিখিয়ে ফেলল বরিশাল বুলস। টুর্নামেন্টের শুরু থেকেই দারুণ খেলে ফাইনালে জায়গা করে নিয়েছে মাহমুদুল্লাহর নেতৃত্বে থাকা দলটি। বাংলাদেশ ক্রিকেটে মাশরাফির নেতৃত্বের কথা নতুন করে বলার কিছু নেই। যে বাংলাদেশি সবচেয়ে কম ক্রিকেট বোঝেন, তিনিও বোধকরি জানেন মাশরাফি নামের জাদুর কাঠির কথা। তবে বিপিএলে এবারের আসরে মাশরাফির পরেই যার নেতৃত্ব প্রশংসা পেয়েছে সবচেয়ে বেশি, তিনি বরিশালের মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। দুই তুখোড় নেতার দ্বৈরথ ভারত-পাকিস্তান কিংবা অস্ট্রেলিয়া-দক্ষিণ আফ্রিকার মতই আলো ছড়াবে বলে বিশ্বাস ক্রিকেটবোদ্ধাদের।পরিসংখ্যানের বিচারে এখন পর্যন্ত সমানে সমান দুই দল। গ্রুপ পর্বে দুই দলই ১০ ম্যাচ খেলে সমান সংখ্যক ৭টি করে জয় তুলে নিয়েছিল। তবে রানরেটে এগিয়ে থাকার কারণে পয়েন্ট তালিকার শীর্ষস্থানে ছিল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। লিগ পর্বের দুই বারের মোকাবেলায় বরিশাল বুলসকে সহজেই হারিয়েছিল কুমিল্লা। প্রথম ম্যাচে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের দলকে ৮৯ রানে অলআউট করে ৮ উইকেটের জয় তুলে নিয়েছিল মাশরাফিরা। পরের ম্যাচেও প্রায় একই গল্প। ১০৫ রানে বরিশালকে অলআউট করে দিয়ে ৭ উইকেটের বড় জয় তুলে নেয় কুমিল্লা।টুর্নামেন্টের শুরু থেকেই কুমিল্লাকে কেউ ততটা ফেভারিটের তকমা দেয়নি। মাঝারিমানের খেলোয়াড়দের নিয়ে তৈরি দলটিকে অনেকেই ভেবেছিলেন- ‘এদের দৌড় সর্বোচ্চ এলিমিনেটর রাউন্ড পর্যন্ত।’ অথচ তারাই লিগটেবিলে শীর্ষস্থান নিয়ে ফাইনালের মঞ্চে সবার আগে আসন দখল করে নিলো। শক্তির বিবেচনায় এগিয়ে না থাকলেও ‘টিম স্পিরিট’-এ অনেক এগিয়ে রয়েছে দলটি। সঙ্গে মাশরাফির দুর্দান্ত নেতৃত্ব তো রয়েছেই। তার নেতৃত্বে সতীর্থরা সবাই কিছু না কিছু পারফর্ম করে এগিয়ে নিচ্ছেন দলকে। এনিয়ে তৃতীয় বারের মত ফাইনাল খেলছেন মাশরাফি। আগের দুই আসরে ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটর্সের হয়ে ফাইনালে খেলেছেন তিনি। দুবারই তার নেতৃত্বে শিরোপা জয় করে ঢাকা। অপরদিকে মাহমুদুল্লাহ নিজের দ্বিতীয় ফাইনাল খেলছেন। আগের আসরে চিটাগাং কিংসের অধিনায়ক ছিলেন তিনি।বিপিএলের জমজমাট ফাইনালের সব আলো নিজের দিকে টেনে নিতে পারেন তরুণ বাম হাতি পোর আবু হায়দার রনি। টুর্নামেন্টে এখনও পর্যন্ত ২১ উইকেট নিয়ে সবার ওপরে রয়েছেন তিনি। এছাড়াও পুরো টুর্নামেন্টে ধারাবাহিক পারফর্ম করা পাকিস্তানি অলরাউন্ডার আসহার জাইদিও ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারেন যে কোন সময়। এছাড়া ফর্মে ফিরেছেন অভিজ্ঞ ইমরুল কায়েস। তার সঙ্গি লিটন দাসও শেষ ম্যাচে দারুণ খেলেছেন। ফাইনালে ফিরতে পারেন পাকিস্তানের শোয়েব মালিক। সম্প্রতি নিজের সেরা সময় কাটাচ্ছেন এই পাকিস্তানি ক্রিকেটার। এছাড়াও তার সতীর্থ আহমেদ শেহজাদ টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের পরীক্ষিত সৈনিক।তবে কুমিল্লার জয়ের পথে সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে ইনজুরি। প্রথম সারির ছয়-সাত জন খেলোয়াড় ইনজুরিতে আক্রান্ত। অধিনায়ক মাশরাফি থেকে শুরু করে কামরুল ইসলাম রাব্বি, ডলার মাহমুদ, শোয়েব মালিক, কুলাসেকেরাসহ আরও বেশ কয়েকজন খেলোয়াড় খেলার জন্য সম্পূর্ণ ফিট নন। তবে এসব নিয়ে ভাবছেন না অধিনায়ক। দলের ইনজুরি সমস্যা নিয়ে মাশরাফি বলেন, ‘আমাদের শুরু থেকেই এই সমস্যাগুলো ছিল। কোনো নির্দিষ্ট খেলোয়াড়কে আমরা একসাথে অনেক সময়ের জন্য পাইনি, জাইদি আর কুলাসেকারা ছাড়া। এছাড়া সবাই আসা যাওয়ার মধ্যেই ছিল। আমরা এ সময়গুলো পার করে এসেছি। এখন এসব নিয়ে চিন্তা করারও সময় নেই। ওসব শুরুর দিকে অনেক ভাবিয়েছে। এখন আল্লাহর রহমতে একটা পর্যায়ে এসেছি যেখানে আর একটা ম্যাচই বাকি। ২৪ ঘন্টা আগে এসব নিয়ে ভাবার আর সুযোগ নেই। আমাদের বিদেশি খেলোযাড়রা যারাই খেলেছে কোনো না কোনোভাবে পারফর্ম করেছে। কালকে (মঙ্গলবার) যদি কারো সমস্যা থাকে সেটা এখনো আলোচনা হয়নি। আমার বিশ্বাস যারা সুযোগ পাবে ইনশাল্লাহ সেরাটাই খেলবে।’আগামিকালের (মঙ্গলবার) ম্যাচে জয়ের ব্যপারে দারুণ আশাবাদী মাশরাফি। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এটা তো খুবই পরিষ্কার যে, আমরা যেভাবে খেলতে চেয়েছি আলহামদুলিল্লাহ এখনও পর্যন্ত সেভাবেই খেলে আসতে পেরেছি। আর এখন তো দুই দলের জন্যই ডু অর ডাই ম্যাচ। তো আমরা ইনশাল্লাহ আশাবাদী এবং ইতিবাচক। আশা করি যে, আমরা শেষ যতগুলো ম্যাচ আমরা জিতেছি, যেভাবে ইতিবাচকভাবে খেলে এসেছি এভাবে যদি খেলতে পারি ইনশাল্লাহ ভালো কিছু হবে।’জয়ের ব্যপারে দারুণ আশাবাদী দলের কোচ সালাহউদ্দিনও। জয়ের আশাবাদ ব্যাক্ত করে তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয় সব কিছু ভালোই যাচ্ছে। তবে শুরু থেকে মনে হয়েছিলো, আমরা যেমন দল গড়তে চেয়েছি তা হয়নি। ভারসাম্য নিয়ে সংশয় ছিলো। কয়েকজন খেলোয়াড় আসার পর ভারসাম্যটাও ঠিক হয়েছে। আমার কাছে মনে হয় যে, আমাদের দল পুরো ছন্দে উঠেছে মাশরাফির ওই ইনিংস (ফিফটি করে জেতানো) থেকে। ওই ইনিংসটা যদি ও না খেলতো। তাহলে আমাদের দলের আত্মবিশ্বাস আসতো না। ওই ইনিংসের পর থেকেই মনে হতো, আমরা মাঠে নামলেই জিতবো। দলের ম্যানেজমেন্ট, পাইলট আছেন; সবাই আমাদের হেল্প করেছে। আমি ফাইনালের জন্য আশাবাদী।’কুমিল্লার বিপক্ষে গ্রুপ পর্বে দুই ম্যাচে হারলেও এবার শক্তির বিবেচনায় অনন্য বরিশাল বুলস। ফর্মে ফিরেছেন দলের সেরা ব্যাটসম্যান সাব্বির রহমান। এছাড়া অভিজ্ঞ শাহরিয়ার নাফিসও ছন্দ ফিরে পেয়েছেন। এছাড়া দারুণ খেলছেন দলের বিদেশি ব্যাটসম্যানরা। তবে ব্যাটিংয়ের চেয়ে বোলিং বিভাগে দারুণ সফল তারা। দুর্দান্ত ফর্মে রয়েছেন পেসার আল-আমিন হোসেন। একমাত্র হ্যাটট্রিকটিও তার করা। দারুণ ছন্দে রয়েছেন কেভন কুপার। আবু হায়দারের পরেই ২০টি উইকেট নিয়ে দ্বিতীয় সেরা বোলারের তালিকায় রয়েছেন এই ক্যারিবিয়ান। টুর্নামেন্টের শুরু থেকেই দারুণ হিসেবি বোলিং করছেন পাকিস্তানি মোহাম্মদ সামি। স্পিনে তাইজুলও দলের প্রত্যাশা মেটাতে পারছেন।তবে ক্রিস গেইল চলে যাওয়ায় দলের শক্তি কিছুটা কমেছে বরিশাল বুলসের- এমনই মনে করেছিল সবাই; কিন্তু দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ার ম্যাচে রংপুরের বিপক্ষে গেইলকে ছাড়াও ১৬০ রান তাড়া করে জয় তুলে নিয়ে নিজেদের সামর্থ্য প্রমাণ করেছে তারা। গেইল ছাড়াও জয়ের আশাবাদ ব্যক্ত করে দলের উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান শাহরিয়ার নাফিস বলেন, ‘গেইল দলে নেই, তো কি হয়েছে। আমাদের কোন সমস্যা হবে না। ওকে ছাড়াও আমরা জিতেছি। সবাই মিলে যদি পারফর্ম করি, তবে কালকেও আমরা জিততে পারবো।’নাফিস আরও যোগ করেন, ‘আমরা লিগ পর্ব এবং কোয়ালিফায়ারে ভালো খেলে ফাইনালে এসেছি। সেই খেলাটাই আমরা ধরে রাখতে চাই। ফাইনাল ভেবে নয়, আমরা নিজেদের স্বাভাবিক খেলাটা খেলতে চাই। তাহলেই আশা করি ভালো কিছু হবে।’বরিশালের কোচ গ্রাহাম ফোর্ডও জয়ের ব্যপারে আশাবাদী। তবে জয়ের চেয়ে ভালো খেলার দিকে নজর দিচ্ছেন বলে জানান এই প্রোটিয়া। এই নিয়ে তিনি বলেন, ‘দুই দলই ভালো দল। খেলার আগে তাই কে জিতবে কে হারবে এ বিষয়ে কিছু বলা যাচ্ছে না। আমাদের লক্ষ্য থাকবে টুর্নামেন্ট জুড়ে যেভাবে খেলেছি, কালও (মঙ্গলবার) সেভাবে খেলতে।’আরটি/আইএইচএস/আরআইপি

Advertisement