ফিচার

হাত-পা ছাড়া মানুষটিই আজ সবার অনুপ্রেরণা

হাত-পা বিহীন ছোট্ট একটি শিশু। জন্মের পরপরই বিকলাঙ্গ সন্তানকে দেখে মা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলেন। জন্মের ৪ মাস পর্যন্ত শিশুটি তার মায়ের যত্ন ও ভালোবাসা পাননি। সেই জন্ম থেকে শুরু করে আজও অব্দি বিকলাঙ্গ শরীর নিয়ে মানুষটি নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করতে শত বাঁধা-বিপত্তি অতিক্রম করেছেন। অতঃপর আজ তিনি সফল ব্যক্তিদের মধ্যে একজন।

Advertisement

অস্ট্রেলিয়ার খ্যাতিনামা মোটিভেশনাল স্পিকার হিসেবে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন হাত-পা বিহীন এই মানুষটি। যার নাম নিক ভুজিসিক। ১৯৮২ সালের ৪ ডিসেম্বর জন্মগ্রহণ করেন তিনি। বিরল রোগ টেট্রা-আমেলিয়া সিনড্রোম নিয়ে জন্মগ্রহণ করেন নিক। এ কারণে চার হাত-পা ছাড়াই জন্মগ্রহণ করেন তিনি।

চিকিৎসকরা বলেছিলেন, মানুষ হিসেবে জন্ম নিলেও বিকলাঙ্গ নিক একটি সবজির মতো! সেই নিক লেখাপড়া শিখেছেন, পায়ের পাতা দিয়ে লিখতে ও কম্পিউটার চালাতেও শিখেছেন। এমনকি নিজেই ইলেকট্রিক হুইলচেয়ার চালাতেও সক্ষম। একজন সুস্থ মানুষ যেভাবে তার কাজকর্ম করেন; নিক কোনো অংশেই কম কম নন।

নিকের বাবা-মা তাদের সন্তানকে প্রতিবন্ধীদের স্কুলে ভর্তি করেননি। তারা একটি পাবলিক স্কুলেই ভর্তি করেছিলেন নিককে। এরপরই তার জীবন যেন নরকে পরিণত হয়। ওই ছোট্ট বয়স থেকেই সহপাঠিদের বুলিংয়ের শিকার হতে হতে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন নিক। আশাহীন হয়ে নিক তখন হতাশ ও দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়েন।

Advertisement

এ কারণে মাত্র ১০ বছর বয়সে আত্মহত্যা করতে একটি পানিভর্তি বাথটবে নিজেকে ডুবিয়ে ফেলেন নিক। এ ছাড়াও আরও কয়েকবার আত্মহত্যা করার সিদ্ধান্ত নিয়ে ব্যর্থ হন। যতবারই তিনি মরতে চেয়েছেন; ততবারই বেঁচে থাকার প্রবলইচ্ছে জেগেছে তার মাঝে।

১৭ বছর বয়সে নিকের জীবনে পরিবর্তন আসতে শুরু করে। তার হাই স্কুলের একজন কেয়ার টেকার, যিনি নিককে খুবই ভালোবাসতেন। তিনি বলেন, ‘নিক তুমি খুব শিগগিরই একজন বক্তা হতে যাচ্ছ।’ সেদিন সত্যিই নিক তার স্কুলে একটি বক্তব্য পেশ করেন।

তার সামনে সেদিন উপস্থিত ছিলেন মাত্র ৬ জন শিক্ষার্থী। এরপরই নিক অনুভব করলেন, আমি তো এই লড়াইয়ে এক নই। আমোর মতো অনেকেই আছেন এই পৃথিবীতে। তাদেরকে বাঁচিয়ে রাখতে আমি চেষ্টা করব। এরপরই নিক সিদ্ধান্ত নিলেন, তিনি পাবলিক স্পিকার হবেন। যিনি অন্যদের বেঁচে থাকার অনুপ্রেরণা যোগাবেন।

এরপরই নিক তার ১৭ বছর বয়সে একটি অলাভজনক সংস্থা ‘লাইফ উইদআউট লিম্বস’ অর্থাৎ ‘হাত-পা বিহীন জীবন’ প্রতিষ্ঠা করেন। এই সংস্থার হয়ে বিভিন্ন প্রচার-প্রচারণা চালাতে শুরু করেন নিক। সেই তখন থেকে শুরু...

Advertisement

এরই মধ্যে নিক বিশ্বের ৬০টি দেশ ভ্রমণ করেছেন এবং লাখ লাখ মানুষকে অনুপ্রাণিত করেছেন তার অনুপ্রেরণামূলক বক্তৃতার মাধ্যমে। এ পর্যন্ত নিক প্রায় ৩০০০টি স্পিচ দিয়েছেন। বর্তমানে বিশ্বের খ্যাতনামা একজন মোটিভেশনাল স্পিকার হলেন নিক ভুজিসিক। নিক ২১ বছর বয়সে গ্রিফিথ ইউনিভার্সিটি থেকে হিসাব বিজ্ঞান ও ব্যবসা পরিকল্পনা বিষয়ে ব্যাচেলর ডিগ্রী অর্জন করেন।

বিকলাঙ্গ এই মানুষটি এখন স্কাইড্রাইভিং, সার্ফস, সাঁতার কাটাসহ ছবি আঁকিয়ে তার অবসর কাটান। ২০০৮ সালে নিকের এক স্পিচ শুনতে এসে এক নারী তার প্রেমে পাগল হয়ে যান। এর ৪ বছর পর অর্থাৎ ২০১২ সালে তারা বিয়ে করেন। বর্তমানে তাদের ঘরে আছে ৪টি সন্তান।

২০০৫ সালে নিক তার দৈনন্দিন জীবনযাত্রার উপর একটি ডকুমেন্টরি ‘লাইফ’স গ্রেটার পারপোস’ চলচ্চিত্রের ডিভিডি বাজারে ছাড়েন। ২০১০ সালে তার রচিত প্রথম বই লাইফ উইদআউট লিমিটস: ফর আ রিডিকুলাসলি গুড লাইফ’ প্রকাশিত হয়। যা ৩০টি ভাষায় অনুবাদ হয় পরবর্তীতে।

দ্য বাটারফ্লাই সার্কাস নামের একটি চলচ্চিত্রে নিক অভিনয় করেছেন। চলচ্চিত্রটি ২০০৯ সালে ডরপোস্ট ফিল্ম প্রোজেক্টস এ প্রথম পুরস্কার অর্জন করে। এই চলচ্চিত্রের উইল চরিত্রে অনবদ্য অভিনয় করার জন্য ২০১০ সালে নিক ‘মেথড ফেস্ট ইন্ডিপেন্ডেন্ট ফিল্ম ফেস্টিভালে সেরা অভিনেতার সম্মাননা লাভ করেন।

সূত্র: অ্যাওয়াকেন দ্য গ্রেটনেস উইদিন

জেএমএস/জিকেএস