সাহিত্য

না ছুঁয়ে তোমাকে ছোঁব : বিরহের আবেগমাখা শব্দমালা

জেনারুল ইসলাম

Advertisement

কবিরা নারীকে কামনা করে তবে স্পর্শ পায় না। কাঙ্ক্ষিত নারীকে স্পর্শ করা সাধনার বিষয়। কবি তার কাঙ্ক্ষিত নারীকে পাবে এ নিয়ম পৃথিবীতে নেই। কারণ কবি তার কাঙ্ক্ষিত নারীকে পেলে বদলে যাবে পৃথিবীর কোন স্বাভাবিক নিয়ম। ‘না ছুঁয়ে তোমাকে ছোঁব’ শিরোনামটি কাঙ্ক্ষিত নারীকে স্পর্শ করার তীব্র বাসনার শৈল্পিক প্রতিফলন।

প্রিয়জনও শত্রু হয় কিংবা শত্রুও হয় প্রিয়জন! সংবাদকর্মী জাকির হোসেন রাজুর কাব্য ‘না ছুঁয়ে তোমাকে ছোঁব’ হাতে নিলে তা সুস্পষ্টভাবে নজরে পড়ে। বইটিতে সম্পূর্ণ ব্যতিক্রমী উৎসর্গপত্র লিখেছেন, যা পাঠককে শুরুতেই বইটি পড়ার তীব্র আকাঙ্ক্ষা তৈরি করবে।

আবেগ, দরদ ও মায়ামাখা শব্দশৈলীতে সুদক্ষ কারিগরের মতো রাগ-অনুরাগ, মান-অভিমান, বিরহ-বিচ্ছেদের মহাসম্মেলন করেছেন অণুকাব্যটিতে। সহজ কথা যায় না বলা সহজে। কিন্তু তিনি সহজ-সরল কথাগুলোই বলেছেন বেশ সাবলীলভাবে। শৈল্পিক রূপ দিয়েছেন অন্ত্যমিল, ছন্দ, সুর ও তালে।

Advertisement

তরুণ কবি জাকির হোসেন রাজু দৃপ্তকণ্ঠে উচ্চারণ করেছেন সাহসী শব্দমালা! কবি তার কাঙ্ক্ষিত স্বপ্নকে ছুঁতে চেয়েছেন মেঘ, বৃষ্টি নয়তো হিমেল হাওয়া হয়ে। কাঙ্ক্ষিত নারীকে স্পর্শ করা সাধনার বিষয়। তবে কবি তার কাঙ্ক্ষিত নারীকে ছুঁতে চেয়েছেন ভালোবেসে, হৃদয় দিয়ে, মমতা, দরদ কিংবা প্রেমের স্বিগ্ধ পরশে। এ স্পর্শানুভূতি স্বর্গের অনুভূতিকে হার মানায়। হয় হৃদয়াঙ্গম, হৃদয়ের সাথে হৃদয়ের লেনদেন।

কবি ‘তোমাকে ছোঁব’ শিরোনামে লিখেছেন,‘হঠাৎ করে চৈত্রের দিনে বৃষ্টি নামলেজানালা দিয়ে বাড়িয়ে দিও তোমার দুটি হাতআমি না হয় বৃষ্টি হয়ে খুঁজে নেবতোমায় ছোঁয়ার হাজারো অজুহাত।’

ভালোবাসা অনেক বড় অস্ত্র। এ অস্ত্র দিয়ে জয় করা যায় দুনিয়া। পৃথিবীর যত দ্বন্দ্ব, সংঘাত, যুদ্ধ ভালোবাসাকে কেন্দ্র করে হয়েছে এবং হচ্ছে। এ যুদ্ধে কখনো রক্ত ঝরে, কখনো ঝরে নিষ্পাপ চোখের জল। প্রকৃতির নিয়মে মানুষ মারা যাবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু ভালোবাসাহীনতায় কি তার চেয়ে কম মারা যায়? দুর্ভিক্ষে পৃথিবীর যত মানুষ মারা যায়, ভালোবাসাহীনতায় তার চেয়ে সহস্রগুণ বেশি মানুষ মরণকে আপন করে। তাই তো কবি ‘খুন’ শিরোনামে কবিতায় শৈল্পিক শব্দে বলেছেন,‘সবাই তো খুন করছেকেউ বুলেট দিয়েকেউ ভালোবাসা দিয়েরক্ত নয়তো জল ঝরছেই...’

প্রেমিক তার প্রেমিকার নিষ্পাপ, বিস্মিত হাসির জন্য বিসর্জন দিতে পারে জীবন-যৌবন। হাসি কেবল দুটো ঠোঁটের মধ্যে সুখের বিজলী নয়, হাসি বেঁচে থাকার নিশ্বাস। হাসি হৃৎপিণ্ডের কোণে লুকিয়ে থাকা সুখের প্রস্ফুটিত পুষ্প। কিন্তু সেই হাসি যদি হয় ছলনাময়ী, মিথ্যা কিংবা ভেজালের মিশ্রণে বিষাক্ত। তবে তা হয় প্রতারণা, যন্ত্রণাদায়ক এবং প্রাণঘাতী। কবি তার ‘হাসি’ শিরোনামের কবিতায় সুস্পষ্ট বর্ণনা দিয়েছেন,‘আমি যদি দোষ করিঅন্ধভাবে তোমাকে ভালোবেসেতুমিও তো দোষ করেছমিথ্যা হাসি হেসে’

Advertisement

জাকির হোসেন রাজু একজন শেকড়মুখী কবি। ১৯৯৬ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার বাদাঘাট দক্ষিণ ইউনিয়নের সিরাজপুর বাগগাঁও গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। সীমান্তের কোলঘেঁষা উর্বশী জনপদের প্রাকৃৃতিক সৌন্দর্যের মায়ায়-ছায়ায় বেড়ে উঠেছেন। সুনামগঞ্জের যাদুকাটা নদীর টলমল পানির ছন্দময় সুর তার ভেতরে কবিতার প্রদীপ প্রজ্জ্বলিত করেছে। তাই তার প্রথম বইয়ের অণুকবিতাগুলো অনুভূতিপ্রবণ। আবেগের কাব্যিক উচ্চারণ। প্রবাহমান জীবনের ছোট ছোট ঘটনাগুলো কবির ঋদ্ধ কলমের দ্যুতিতে, হৃদয় নিংড়ানো বোধের বাণীতে রূপান্তরিত হয়ে উঠেছে। কবি অত্যন্ত সুদক্ষভাবে পাঠকের মন জয় করার তীব্র বাসনা নিয়ে তিনটি অণুকবিতাকে একটি সুন্দর শিরোনামে ফ্রেমবন্দি করেছেন। যা তার মুন্সিয়ানার পরিচয় দেয়।

কবি তার কবিতার ভালোবাসা দিয়ে পৃথিবী ভরিয়ে দিতে চেয়েছেন। সৃষ্টিশীল মানুষ চায় পৃথিবী হোক ভালোবাসাময়। তাই তো কবি বলেছেন,‘ভালোবাসা পুরো পৃথিবীজুড়ে ছড়িয়ে পড়ুকহয়ে এক ছোঁয়াচে রোগমানুষে মানুষ সংক্রমিত হোকএকজনের দুঃখে অন্যজন পালন করুক শোক।’

কবিরা মরেন না। কবিতারা বাঁচলে কবি বেঁচে যান কবিতার মাঝে। কবি জাকির হোসেন রাজু তার কবিতার মাঝে বেঁচে থাকুন যুগ-যুগান্তর। তার প্রথম সৃষ্টিকর্ম অণুকবিতার বই ছুঁয়ে যাক পাঠকের হৃদয়।

বই: না ছুঁয়ে তোমাকে ছোঁবপ্রকাশক: অক্ষরবৃত্ত প্রকাশনপ্রথম প্রকাশ: ফেব্রুয়ারি ২০২১প্রচ্ছদ: আল নোমানমূল্য: ২০০ টাকা।

এসইউ/এমকেএইচ