জাগো জবস

একবার অংশগ্রহণ করেই বিসিএস ক্যাডার হন কাবেরী

কাবেরী জালাল সেতুর জন্ম পাবনা সদরের দক্ষিণ রাঘবপুর গ্রামে। বাবা মো. জালাল উদ্দিন আহমেদ ছিলেন আইনজীবী। মা বেগম গুলনাহার ছিলেন ইছামতি গার্লস হাই-স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা। কাবেরী ২০০৪ সালে ইছামতি হাইস্কুল থেকে মাধ্যমিক ও ২০০৬ সালে পাবনা সরকারি মহিলা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। এরপর পাবনা এডওয়ার্ড কলেজ থেকে ইংরেজিতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পাস করেন।

Advertisement

কাবেরী জালাল ২০১৬ সালে সহকারী কমিশনার হিসেবে কর্মজীবনে প্রবেশ করেন। সম্প্রতি তার বিসিএস জয়, ভবিষ্যৎ স্বপ্ন ও সফলতার গল্প শুনিয়েছেন জাগো নিউজকে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ফিচার লেখক 

জাগো নিউজ: আপনার ছোটবেলা কেমন কেটেছে?কাবেরী জালাল: ছোটবেলা থেকে চাকরিতে প্রবেশের আগমুহূর্ত পর্যন্ত আমার সময় কেটেছে পাবনায়। শৈশব-কৈশোরের সব স্মৃতি সেখানে। ছোটবেলার স্মৃতি তেমন মনে নেই। তবে ভাই-বোনরা মিলে অনেক আড্ডা, গল্প ও খেলাধুলা করতাম।

জাগো নিউজ: পড়াশোনায় কোনো প্রতিবন্ধকতা ছিল?কাবেরী জালাল: না। মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে ছিলাম। পড়াশোনার ব্যাপারে কোনো প্রতিবন্ধকতা ছিল না। বাবা-মা পড়াশোনার ব্যাপারে খুব যত্নশীল ছিলেন। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট অনুযায়ী বাবা-মা আমাকে পড়াশোনার ব্যাপারে খুবই উৎসাহ দিতেন। তারা সব সময় বলেছেন, যতদূর তোমার ইচ্ছা; ততদূর তুমি পড়ালেখা করো। এমনকি এখনো আমার বাবা বলেন, পিএইচডি তো করলে না। পড়াশোনার ব্যাপারে কোনোরকম প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়তে হয়নি।

Advertisement

জাগো নিউজ: বিসিএসের স্বপ্ন দেখেছিলেন কখন থেকে?কাবেরী জালাল: উচ্চমাধ্যমিক পড়ার পর পাবনা এডওয়ার্ড কলেজে ভর্তি হওয়ার পর স্যারদের দেখতাম। তারা সবাই বিসিএস ক্যাডার। তাদের দেখে বিসিএস ক্যাডার হওয়ার ইচ্ছা জাগতো। বিশেষ করে শ্রদ্ধেয় শিহাব উদ্দিন ও কলিমুদ্দিন স্যারের কাছে গল্প শুনতাম, তারা কিভাবে পড়তেন। তাদের বিসিএসের ভাইভার কথা শুনতাম। তখন আমাদের কাছে বিসিএসের ভাইভা স্বপ্নের মতো মনে হতো। তারপর একদিন আম্মুর স্কুলে ইউএনও ভিজিটে এসেছিলেন। আম্মু তখন বলেছিলেন, দেখো একজন মহিলা ইউএনও এসেছেন, তার কী সম্মান। তখন থেকেই আম্মু ভাবতেন, আমার মেয়েও একদিন ইউএনও হবে। তখন থেকেই মূলত বিসিএসের স্বপ্ন দেখা।

জাগো নিউজ: বিসিএস যাত্রার গল্প শুনতে চাই— কাবেরী জালাল: আমি যখন স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী ছিলাম; তখই স্যারেরা বিসিএসের কথা বলতেন। শুধু আমাকেই না, সবাইকে বলতেন। তারপর আমার এক বড় ভাইয়ের পরামর্শে অনেকগুলো বই কিনলাম বিসিএস রিলেটেড। কিনে সেগুলো পড়া শুরু করলাম। প্রশ্নের ধরন দেখে সিরিয়াসভাবে পড়ালেখা শুরু করেছিলাম। বিসিএসের পড়াশোনা অনেক বিস্তৃত। দেখা যায়, বিসিএসের জন্য পড়লে বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে অনেক চাকরির ভাইভা বা পরীক্ষা ফেস করা যায়। তবে বিসিএসের জন্য আলাদা কোনো কোচিং করিনি। আমার স্নাতকের সমাপনী পরীক্ষার সময় ৩৪তম বিসিএসের সার্কুলার দিয়েছিল। আমি পরীক্ষা শেষ করে বিসিএসে আবেদন করার জন্য দুদিন পেয়েছিলাম। আল্লাহর অশেষ রহমতে প্রথমটাতেই প্রশাসন ক্যাডারে সিলেক্ট হই। এরপর ৩৫তম বিসিএসে প্রিলিতে টিকি। কিন্তু ৩৪তমতে সিলেক্ট হওয়ায় আর পরীক্ষা দেইনি।

জাগো নিউজ: কততম বিসিএসের কোন ক্যাডারে আছেন? কাবেরী জালাল: ৩৪তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারে যোগ দেই। বর্তমানে বগুড়ার সোনাতলা উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে আছি।

জাগো নিউজ: বিসিএসের প্রস্তুতি কিভাবে নিতে হয়? ভাইভার ধরন সম্পর্কে যদি বলতেন— কাবেরী জালাল: বিসিএসের পড়াশোনা আসলে অনেক বিস্তৃত। তাই শুরু থেকেই সিরিয়াসভাবে পড়তে হবে। প্রিলি, রিটেনের জন্য বিসিএসের সিলেবাস অনুযায়ী বাজারের মানসম্মত বই কিনে পড়তে হবে। বিজ্ঞান, বাংলা ব্যাকরণ, ইংরেজি, গণিতের জন্য ৬ষ্ঠ-১০ম শ্রেণি পর্যন্ত বোর্ড বই দেখতে হবে। ভাইভার ধরন সম্পর্কে বলতে গেলে, অনেকটা ক্যাডার চয়েজের ওপর ভাইভা বোর্ডের প্রশ্ন নির্ভর করে। তাই পছন্দের ক্যাডার চয়েজ করে সে সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করে পড়তে হবে। এছাড়া বাকিটা পুরো ভাগ্যের ওপর। তবে ভাইভায় নিজ জেলা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, অনার্সের বিষয়, সংবিধান, মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু, সাম্প্রতিক ঘটনা সম্পর্কে ভালো ধারণা রাখতেই হবে।

Advertisement

জাগো নিউজ: কার কাছ থেকে অনুপ্রেরণা পেয়েছেন? কাবেরী জালাল: আমি বিসিএসসের অনুপ্রেরণা পেয়েছি আমার বাবা-মায়ের কাছ থেকেই। আগেই তো বললাম, আমার মা চাইতেন তার মেয়ে একজন ইউএনও হোক। মূলত সেখান থেকেই বিসিএসের স্বপ্ন দেখি এবং অনুপ্রেরণা পাই।

জাগো নিউজ: মাঠপর্যায়ে কাজ করতে গিয়ে কোনো প্রতিবন্ধকতায় পড়েছিলেন?কাবেরী জালাল: আসলে চাকরি জীবনে নারী-পুরুষ প্রধান বিষয় নয়। কর্ম দক্ষতাই প্রধান বিষয়। চাকরি জীবনে আমাদের নারী হিসেবে বিশেষ কোনো সুবিধা দেওয়া হয় না। রাত দুইটায়ও ফোন এলে চলে যেতে হয় স্পটে। পায়ে হেঁটে, মোটরসাইকেলে চড়ে বিভিন্ন সময় কাজ করতে হয়। এছাড়াও গার্ড অব অনারেও যেতে হয়। কাজগুলো করতে গিয়ে নিজেকে নারী হিসেবে আলাদাভাবে ভাবিনি। ভেবেছি একজন ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে। অনেক সময় বলা হয়, এতো মেয়ে। এ জমি বা ভূমি সম্পর্কে কী বুঝবে? কথাগুলো কখনো কানে নেইনি। আপনমনে আমার কাজ করে গেছি। তাই বলি, কাজকে কাজ হিসেবে দেখা উচিত, নারী-পুরুষ হিসেবে নয়।

জাগো নিউজ: আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী? কাবেরী জালাল: চাকরির ক্ষেত্রে আমার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা হলো, আমি চাকরি করে যেতে চাই। রুট লেভেলে চাকরি করতে করতে ভালো লাগা কাজ করেছে চাকরির প্রতি। তাই যতদিন আছি, আমার কাজকে ভালোবেসে করে যাবো।

জাগো নিউজ: সাম্প্রতিক করোনা দুর্যোগে আপনার ভূমিকা কী? কাবেরী জালাল: করোনার সময় সবাইকে লকডাউন মানাতে কাজ করে গেছি। সামাজিক দূরত্ব বা যেসব বিধিনিষেধ আছে, এ সম্পর্কে জনগণকে বোঝাচ্ছি। বিধিনিষেধ পালনে সবাইকে উদ্বুদ্ধ করছি। বিভিন্ন জায়গায় মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করছি। করোনার সময়ে বাল্যবিয়ে বেড়ে গেছে। তাই বাল্যবিয়ে বন্ধে ব্যাপক তৎপর আছি।

এসইউ/এমএস