তথ্যপ্রযুক্তি

স্মার্টফোন বিক্রি নেমেছে অর্ধেকে, ঈদের আগেই ঘুরে দাঁড়ানোর আশা

প্রতি বছর যত স্মার্টফোন বিক্রি হয় তার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ বিক্রি হয় রোজার ঈদের মৌসুমে। তবে চলতি বছর করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ের কারণে বিধিনিষেধের বেড়াজালে আটকে গেছে ব্যবসা। সংক্রমণ বাড়ায় অনেকেই ঘর থেকে বের হতে পারছেন না। আবার মহামারিতে ক্ষতিগ্রস্ত ক্রেতা খরচ বাঁচাতে আপাতত বিলাসী পণ্য কেনার ঝোঁকও কিছুটা কমিয়েছেন। এমন বাস্তবতায় ব্যবসায়ীরা বলছেন, করোনার কারণে স্মার্টফোন বিক্রি কমেছে। ঈদের আগে বাজার ঘুরে দাঁড়াবে সে আশায় বুক বেঁধেছেন তারা।

Advertisement

মোবাইল ফোন আমদানিকারকদের সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে দেশ সাড়ে তিন কোটি মোবাইল ফোনের চাহিদা আছে। যার মধ্যে ৩০ শতাংশ অর্থাৎ ৯০ লাখ স্মার্টফোনের চাহিদা আছে। এই স্মার্টফোনের প্রায় ৫০ শতাংশ বিক্রি হয় দুই ঈদকে কেন্দ্র করে। তবে রাজধানীর বিভিন্ন মার্কেট ঘুরে দেখা গেছে, এবার মোবাইল ফোনের দোকানগুলোতে ক্রেতার উপস্থিতি কম।

রাজধানীর শাহ আলী মার্কেটের মোবাইল মিডিয়ার মালিক জাগো নিউজকে বলেন, ‘ঈদের বাজারে মোবাইল ফোন একটু বেশি বিক্রি হয়। সবার কাছে বোনাসের বাড়তি টাকা থাকে। প্রতি বছর রমজানের এমন সময় দাঁড়িয়ে কথা বলার সুযোগ থাকে না। ইফতার করার ফুরসত থাকে না। কিন্তু এবারের চিত্র ভিন্ন।’

তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত বিক্রি স্বাভাবিক না। মানে স্বাভাবিক সময়ে যে বিক্রি হয় তা তো হচ্ছে না। আর ঈদের বাজারের কথা বাদ দিলাম। প্রতিদিন যেখানে ১০-১৫টি মোবাইল সেট বিক্রি করতাম সেটা আর নেই। সারা দিনে ৩ থেকে ৪টি সেট বিক্রি হয়। আর দামি ফোনের ক্রেতা আসছে না। এখন করোনার কারণে দামি ফোনের ক্রেতা আসছে না নাকি দামি ফোনের ক্রেতা মিড রেঞ্চের ফোনে চলে আসছে, সেটা বোঝা যাচ্ছে না।’

Advertisement

ব্যবসায়ীরা বলছেন, বর্তমানে বাংলাদেশে মোবাইল হ্যান্ডসেটের বাজার ১১ হাজার কোটি টাকার। করোনার কারণে মোবাইল হ্যান্ডসেট বিক্রি চলতি জানুয়ারির তুলনায় এপ্রিলে কমেছে ৪০ শতাংশেরও বেশি।

বাংলাদেশে স্যামসাংয়ের পার্টস অ্যাসেম্বল বা সংযোজন সহযোগী প্রতিষ্ঠান ফেয়ার ইলেক্ট্রনিকসের প্রধান বিপণন কর্মকর্তা মেজবাহ উদ্দীন জাগো নিউজকে বলেন, ‘এখন রিটেইল খুলে দিয়েছে। যখন রিটেইল বন্ধ ছিল তখন সেল অনেকটাই ড্রপ করেছে। রিটেইল খুলে দেয়ার পর আবার বিক্রি শুরু হয়েছে। আমরা আশা করছি মে মাসের শুরু থেকে বিক্রি আরও বাড়বে। কারণ ঈদের সিজন শুরু হবে।’

তিনি বলেন, ‘জানুয়ারিতে হ্যান্ডসেট সাধারণত একটু কম বিক্রি হয়। পরবর্তীতে করোনা বাড়ায় বিক্রি তেমন শুরু হয়নি। মার্চের শুরু থেকে এপ্রিল পর্যন্ত হ্যান্ডসেট বিক্রি কমেছে ৫০ শতাংশ।’

ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ‘করোনাকালে ভার্চুয়াল মিটিং, ফেসবুক লাইভ বাড়ায় গত বছর মোবাইল হ্যান্ডসেট ভালো বিক্রি হয়েছে। একই সঙ্গে বেড়েছিলো হ্যান্ডসেটের অ্যাকসেসরিজ বিক্রি।

Advertisement

মিরপুর-১০ এর স্কাই টাচ নামের দোকানে ৪ বছর ধরে মোবাইল হ্যান্ডসেট বিক্রির কাজ করেন সেলসম্যান রাজীব আহমেদ।

তিনি বলেন, ‘গত বছর করোনাকালে অল্প বিস্তর মোবাইল ফোন বিক্রি হয়েছে। ব্যবসা বাণিজ্য, ক্লাস, মিটিং সবই তো স্মার্টফোনে। করোনার কারণে অল্প বিস্তর বেড়েছিল স্মার্টফোন বিক্রি। কিন্তু ঈদের এই মৌসুমে বেচা-বিক্রি একদম নেই বললেই চলে।’

তিনি বলেন, ‘ঈদ উপলক্ষে অনেক টাকা লগ্নি করেছেন মালিক। তার উপর কর্মচারীদের বেতন বোনাস আছে। রোজার শেষ ১০ দিনে বিক্রি ভালো হলে, আমাদের ঈদটা ভালো যাবে।’

বাংলাদেশে মোবাইল ফোন বিজনেসম্যান অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য ও হ্যান্ডসেট আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান জাহির হাসান বলেন, ‘করোনার কারণে হ্যান্ডসেট বিক্রি কমেছে। অন্য সবার মতো আমরাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। আশা করছি দ্রুত এ অবস্থা কেটে যাবে।

বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলিটরি কমিশন (বিটিআরসি), মোবাইল হ্যান্ডসেট আমদানিকারক ও সংযোজনের সঙ্গে জড়িতরা বলছেন, দেশে তৈরি হ্যান্ডসেট মোট চাহিদার ৮০ শতাংশ পূরণ করতে পারছে।

বিটিআরসি বলছে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে দেশে তৈরি ও বিদেশ থেকে আমদানি করা মোবাইল ফোনের সংখ্যা ছিল দুই কোটি ৯৪ লাখ। যার মধ্যে দেশেই তৈরি হয় এক কোটি ৪৯ লাখ মোবাইল ফোন।

গত অর্থবছরে দেশে তৈরি টুজি হ্যান্ডসেটের (বার ফোন) সংখ্যা ছিল ৯৪ লাখ। আর থ্রিজি স্মার্টফোনের সংখ্যা ছিল নয় লাখ ৭৭ হাজার ও ফোরজি স্মার্টফোনের সংখ্যা ছিল ৪৫ লাখ ৯৯ হাজার।

একই সময়ে আমদানি করা টুজি হ্যান্ডসেট ফোনের সংখ্যা ছিল এক কোটি ৩২ লাখ, থ্রিজি স্মার্টফোনের সংখ্যা ছিল চার লাখ ৭৪ হাজার এবং ফোরজি স্মার্টফোনের সংখ্যা ছিল সাত লাখ ৬৫ হাজার।

বিটিআরসির সর্বশেষ তথ্য বলছে, গত অর্থবছরে হ্যান্ডসেট ব্যবহারকারীদের ৭৭ শতাংশই টুজি ফোন ব্যবহার করেছে। ১৮ শতাংশ ব্যবহার করেছে ফোরজি ফোন। আর ৫ শতাংশ ব্যবহার করেছে থ্রিজি ফোন।

এ প্রসঙ্গে মেজবাহ উদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরা ২০১৮ সাল থেকে স্যামসাংয়ের হ্যান্ডসেট সংযোজন শুরু করি। সে বছর ৬ লাখ ইউনিট সংযোজন করি। ২০১৯ সালে ১৩ লাখ আর ২০২০ সালে সেটা ১৭ লাখে পৌঁছেছে। এ বছর সেটা আরও বাড়বে।’

তিনি বলেন, ‘এখন স্যামসাংয়ের ৯৯ শতাংশ স্মার্টফোন বাংলাদেশেই তৈরি হয়। এছাড়া অন্য কোম্পানিগুলো স্মার্টফোন বানাচ্ছে। স্মার্টফোনের আমদানি নির্ভরতা কমেছে।’

জানা গেছে, দেশীয় ব্র্যান্ড ওয়ালটন, সিম্ফনি ছাড়াও বিদেশি ব্রান্ড অপো, ভিভো, টেকনো, লাভা, রিয়েলমি, উহনস্টার এখন বাংলাদেশেই তৈরি করছে হ্যান্ডসেট।

এসএম/এমএইচআর/এএসএম