কৃষি ও প্রকৃতি

সবুজের মাঝে সূর্যমুখীর হলুদ রাজ্য

চারিদিকে সবুজের মাঝে হলুদের সমারোহ। আর এই হলুদ প্রকৃতিকে করেছে আরো মনোলোভা। যা দেখে চোখ ফেরাতে মন চায় না। এজন্যই মৌলভীবাজার জেলার সদর উপজেলার আজমেরু এলাকার সূর্যমুখী বাগানের ফুল দেখতে ভিড় জমাচ্ছেন অসংখ্য মানুষ।

Advertisement

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, মৌলভীবাজার জেলায় এ বছর সূর্যমুখী চাষ হয়েছে ৫৬৫ হেক্টর জমিতে। তিনটি ভেরাইটি হাইসান-৩৩, হাইসান-৩৬, নতুন বীজ আরডিএস-৭৫ হাইব্রিড জাতের সূর্যমুখী চাষ হয়েছে। জেলার ৭ উপজেলায় এই সূর্যমুখীর চাষ।

গত বছর যেখানে জেলাজুড়ে সূর্যমুখীর চাষ মাত্র ৫৮ হেক্টর জমিতে। কিন্তু এ বছর তার ১০ গুণের চেয়ে বেশি জায়গায় সূর্যমুখী চাষ হয়েছে। সাংবাদিকতার পাশাপশি সদর উপজেলার মোস্তফাপুর ইউনিয়নের আজমেরু গ্রামে ৬ বিঘা জমিতে সূর্যমুখী চাষ করেছেন দুই সৈয়দ হুমায়েদ আলী শাহিন ও এস এম উমেদ আলী। এছাড়াও সদরের গিয়াসনগর ইউনিয়নের আরিফুল ইসলাম ২ একর, আব্দুল বাতেন ও গোবিন্দ সূত্রধর ১ একর জমিতে সূর্যমুখী চাষ করেছেন।

সৈয়দ হুমায়েদ আলী শাহিন বলেন, আগে অগ্রহায়ণ মাসে আমন ধান তোলার পর এই জমিগুলো পতিত থাকত। কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শে আমরা গতবছর থেকে সূর্যমুখী চাষ করছি। আমাদের এই সূর্যমুখীর চাষ অনেক মানুষ দেখতে আসছেন। দেখে তারা উৎসাহ বোধ করছে। এবং বলছে তারা এই সুর্যমুখী চাষ করবে।

Advertisement

তিনি আরো বলেন, বাজারে যে ভোজ্যতেল পাওয়া যায় সেটি মানসম্মত নয়। সূর্যমুখীর তেল অনেক ভালো। আমাদের যা প্রয়োজন তা রেখে অতিরিক্ত বীজ বাজারে বিক্রি দেব।

এস এম উমেদ আলী বলেন, গত বছর বীজের মূল্য কম ছিল। সিন্ডিকেটের কারণে বাজারে প্রতি কেজী সূর্যমুখী বীজের মূল্য ছিল ৫০-৫২ টাকা। কিন্তু এবছর ৯০-১০০ টাকা পর্যন্ত কেজি বিক্রি হচ্ছে। এরকম থাকলে আশা করি উপযুক্ত মূল্য পাবো।

তিনি বলেন, অনেকে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন এটি চাষের জন্য। তারা আমাদের কাছ থেকে এবং কৃষি অধিদফতরের কাছ থেকে পরামর্শ নিয়েছেন।

তিনি আরো বলেন, তেল জাতীয় সরিষা, সূর্যমুখী, বাদাম এর মেশিন কৃষি ভর্তুকির আওতায় ক্ষুদ্রভাবে গ্রামে গ্রামে স্থাপন করা যায় তাহলে আমদানি নির্ভর ভোজ্যতেল অনেকটা কমে আসবে।

Advertisement

কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. ফরহাদুল হক জানান, ফসল অনেক ভালো হয়েছে। আগামী ১০-১৫ দিনের মধ্যে ফসল তোলা যাবে। ভালো ফলন হবে আশাকরি। প্রতি হেক্টরে ২ টন বা প্রতি বিঘায় ৮ মণ সূর্যমুখী বীজ পাওয়া যাবে। এতে স্থানীয় চাহিদা অনেকটা পূরণ হবে। এই সূর্যমুখী বীজ কৃষকরা ন্যায্যমূল্যে বিক্রয় করতে পারবেন।

তিনি আরও জানান, ৯০-১০০ দিনে সূর্য দিনের মধ্যে ফল উৎপাদন করা যায়। হাইসান জাতের ভেরাইটি লম্বা হয়। এবং ফলনের হার ৪২-৪৩ শতাংশ। আর নতুন ভেরাইটি আরডিএস-৭৫ খাটো জাতের। এই গাছে একাধিক ফুল হয়।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর মৌলভীবাজারের উপ-পরিচালক কাজী লুৎফুল বারী বলেন, আমাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে ভোজ্য তেলের যে চাহিদা সেই চাহিদার জন্য বিদেশ থেকে ভোজ্য তেল আমাদানি করতে হয়। আমরা সয়াবিন নির্ভর। সেখান থেকে বেরিয়ে এসে নিজস্ব তেল সরিষা এবং সূর্যমুখী এই দুটিকে লক্ষ্য করে আমাদের নিজস্ব উৎপাদন বৃদ্ধি করার জন্য কর্মসূচি নিয়েছি। এমএমএফ/এএসএম