তথ্যপ্রযুক্তি

করোনাকালে উদ্যোক্তা সৃষ্টিতে অর্থসংস্থানই বড় চ্যালেঞ্জ

যেকোনো উদ্যোক্তার স্টার্টআপ বা কাজ শুরু করার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো প্রয়োজনীয় অর্থ সঙ্কট। এজন্য প্রতিযোগিতাপূর্ণ বাজারে অনেক তরুণ উদ্যোক্তা নতুন নতুন আইডিয়া নিয়ে বাজারে এলেও পুঁজি সঙ্কটের কারণে তা বাস্তবায়ন করতে পারেন না।

Advertisement

দেশে করোনা পরিস্থিতির আগে যেসব আর্থিক প্রতিষ্ঠান এক্ষেত্রে বিনিয়োগে আগ্রহ ছিল, এখন তা অনেকাংশে কমে গেছে। শনিবার (১২ ডিসেম্বর) অনলাইন প্লাটফর্মে আয়োজিত ‘এক্সিলারেটর বাংলাদেশ ৩.০: আগামী দশকে উদ্যোক্তা হওয়ার ক্ষেত্রে বিবেচ্য বিষয় ও জাতীয় সংলাপ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তারা এসব বলেন।

ইয়থ কো ল্যাব ব্যানারে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) ও সিটি ফাউন্ডেশনের যৌথ আয়োজনে সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। আয়োজনে সহযোগী হিসেবে ছিল স্টার্টআপ বাংলাদেশ লিমিটেড ও দেশের বিজনেস কনসালট্যান্সি প্রতিষ্ঠান লাইটক্যাসল পার্টনার্স।

ইয়থ কো ল্যাব হচ্ছে ইউএনডিপি ও সিটি ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠিত তরুণদের জন্য একটি প্লাটফর্ম। এই প্লাটফর্মের মাধ্যমে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে (এসডিজি) তরুণ উদ্যোক্তা ও উদ্ভাবকদের বিনিয়োগের মাধ্যমে ক্ষমতায়নে সহযোগিতা করা হয়।

Advertisement

সংলাপে ইউএনডিপির আঞ্চলিক যুব প্রকল্পের ম্যানেজার সাভিন্দা রানাতুঙ্গা বলেন, ইউএনডিপি বরাবরই তরুণদের সম্ভাবনাময় ক্ষমতা ও তাদের বিনিয়োগ সম্প্রসারণকে গুরুত্ব দিয়ে আসছে। এছাড়া সংস্থাটি এসডিজি লক্ষ্য অর্জনে তরুণদের নেতৃত্ব, নতুন উদ্ভাবন, উদ্যোক্তা সৃষ্টিতে সহায়ক হিসেবে কাজ করছে।

সিটি ব্যাংক এন এ, বাংলাদেশের ক্যাপিট্যাল মার্কেট অ্যান্ড অ্যাডভাইজরি শাখার পরিচালক ও হেড অব ব্যাংকিং শামস জামান বলেন, ইয়থ কো ল্যাব প্লাটফর্মে সিটি ফাউন্ডেশন অত্যন্ত আনন্দিত ও গর্বিত। এই প্লাটফর্মে তরুণরা সামাজিক ও পরিবেশের নতুন সমস্যা সমাধানের মাধ্যমে আগামী দিন নতুন নেতৃত্ব ও উন্নয়নে অবদান রাখতে পারবে।

স্টার্টআপ বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক টিনা জাবিন বলেন, সরকার দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে স্টার্টআপের মাধ্যমে চাকরির নতুন সুযোগ ও সম্ভাবনার ক্ষেত্র তৈরি হবে। এক্ষেত্রে স্টার্টআপ বাংলাদেশ লিমিটেড দেশের তরুণ উদ্যোক্তাদের প্রয়োজনীয় সমস্যা সমাধানে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত।

ইউএনডিপি ও সিটি ফাউন্ডেশনকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, ইয়থ কো ল্যাব সারাদেশের তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য একটি নতুন দ্বার উন্মুক্ত করেছে।

Advertisement

অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ইউএনডিপি বাংলাদেশের ইয়থ প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর ফয়েজ আহমেদ ও লাইট ক্যাসল পার্টনার্সের প্রজেক্ট ম্যানেজার ও সিনিয়র বিজনেস কনসালট্যান্ট মেহাদ উল হক। এতে দুটি সেশনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইউএনডিপির ব্যাংকক রিজওনাল হাবের ইনোভেশন স্পেশালিস্ট কি লিন (লিংকা) ও লাইটক্যাসল পার্টনার্সের নির্বাহী পরিচালক বিজন ইসলাম।

সংলাপে সরকারি শীর্ষ কর্মকর্তা, উদ্যোক্তা, একাডেমিশিয়ান, তরুণ ব্যবসায়ী নেতা, বেসরকারি ও উন্নয়ন সংস্থার প্রতিনিধিসহ ৬০-এর অধিক আলোচক অংশগ্রহণ করেন।

আলোচনায় বক্তারা চলমান কোভিড-১৯ প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশে স্টার্টআপ ইকোসিস্টেম এগিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে অর্থ সঙ্কটের পাশাপাশি বেশ কয়েকটি চ্যালেঞ্জ তুলে ধরেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- উদ্যোক্তা হওয়ার ক্ষেত্রে তরুণদের চাকরিকেন্দ্রিক চিন্তাধারা থেকে বেরিয়ে না আসা, দেশের গ্রাম পর্যায়ে প্রত্যাশিতভাবে ডিজিটালাইজেশন না হওয়া, প্রশিক্ষণ পেলেও সেটার সাথে সমন্বয় ঘটিয়ে অর্থসহ অন্যান্য সহযোগিতা না পাওয়া।

এছাড়া স্বল্প পুঁজির উদ্যোক্তাদের গুরুত্ব না দেয়া, তরুণদের সাফল্যের গল্প তুলে না ধরা, শুধু কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া ছাত্রছাত্রীদের জন্য নয় বরং করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে স্বল্প শিক্ষিত তরুণদেরও স্টার্টআপের ব্যাপারে উৎসাহিত করা।

বক্তারা স্টার্টআপ-উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করতে সরকারকে ভ্যাট-ট্যাক্স কমানো, ডিজিটাইলজেশনকে ঢাকাকেন্দ্রিক না করে গ্রাম পর্যায়ে ছড়িয়ে দেয়া, এ সংশ্লিষ্ট একাডেমিক ইনস্টিটিউশন গড়ে তোলা এবং নগরকেন্দ্রিক সুযোগ-সুবিধা আরও বাড়ানোর সুপারিশ করে। প্রসঙ্গত, ইয়থ কো ল্যাব বাংলাদেশসহ এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের ২৫টি দেশে নতুন নেতৃত্ব, সোশ্যাল ইনোভেশন ও উদ্যোক্তা সৃষ্টির মাধ্যমে এসডিজি বাস্তবায়ন ত্বরান্বিত করতে কাজ করে।

এমইউ/এমআরএম/এমকেএইচ