জগেশ রায়
Advertisement
বর্তমানে জুম অ্যাপ জনপ্রিয় অ্যাপগুলোর মধ্যে অন্যতম। শুরুতে জুম অ্যাপের কোনো ব্যবহার ছিল না বললেই চলে। এখন প্রায় ৩শ মিলিয়নের অধিক প্রতিদিন জুম অ্যাপের মধ্য দিয়ে বিভিন্ন মিটিং, সেমিনার ও ক্লাসে অংশগ্রহণ করছে।
করোনা ভাইরাসের কবলে পড়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সরকারি ও প্রাইভেট প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেলে অনলাইনে ঝুঁকে পরে সবাই। অনলাইনে অফিসে স্টাফদের সাথে একসাথে মিটিং ও শিক্ষার্থীদের ক্লাসে অংশগ্রহণের জন্য একটা প্লাটফর্মের দরকার হয়। কিন্তু বেশ কয়েকটি প্লাটফর্ম থাকলে সবাই জুম অ্যাপের দিকে ঝুঁকে পড়ে।
এই অ্যাপের পেছনের গল্পের দিকে তাকালে দেখতে পাই, ১৯৭০ সালে চীনের তাইয়ানে জন্মগ্রহণ করেন এরিক ইউয়ান। শিক্ষিত পরিবারে জন্ম নেয়া ইঞ্জিনিয়ার বাবার সন্তান এরিক ইউয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ে পা রাখে ১৯৮৭ সালে। সদ্য যৌবনে পা দেয়া ইউয়ান এক মেয়ের প্রেমে পড়ে যান। তার বান্ধবীর নাম ছিল সেরি (এখন স্ত্রী)।
Advertisement
তার বান্ধবীর সাথে দেখা করতে যেতে হতো ট্রেনে ১০ ঘণ্টা পথ পাড়ি দিয়ে। অনেক দূরত্বের কারণে, তিনি বছরে মাত্র দুবার তার সাথে দেখা করতে পারতেন। এই ট্রেনে যাওয়ার সময় একদিন স্বপ্ন দেখেছিলেন যে এমন কোনো ডিভাইস ব্যবহার করতে পারবে যে তার বান্ধবি যেখানেই থাকুক না কেন দেখা করা যাবে।
এই স্বপ্ন তিনি মনে পুষে রেখেছিলেন এবং প্রতিদিন এটা নিয়ে ভাবতেন । ইউয়ান বেইজিংয়ে গণিতে স্নাত্ক ও ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে স্নাতকোত্তর শেষ করেন। ৪ বছর ধরে জাপানে অবস্থান করেছিলেন ।
মাইক্রোসফ্টের তৎকালীন প্রধান নির্বাহী বিল গেটস ১৯৯৪ সালে জাপানে অবস্থানকালে প্রশিক্ষণ প্রোগ্রামেরর এক ভাষণে ইন্টারনেট এবং ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের বর্ণনা দিয়েছিলেন। এই বক্তব্য ইউয়ানের জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। কখন এবং কিভাবে একটি বড় ঝুঁকি নিতে হয় সে সম্পর্কে তিনি ধারণা পেয়েছিলেন।
তিনি দিবাস্বপ্নকে পূর্ণতা দেয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালিতে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। শুরুতে তিনি অনেক জটিলতায় পরেন এবং ভিসা পেতে ব্যর্থ হয়েছিলেন। তিনি ২ বছর ধরে আবেদন করেছিলেন এবং বারবার তাকে প্রত্যাখ্যান করেছিল। অবশেষে নবমবারের চেষ্টায় তিনি সফল হন ।
Advertisement
সবশেষে ইউয়ান ১৯৯৭ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যান। ভালোমত ইংরেজি বলতে না পারায় সেখানেও সমস্যায় পরেন। তবে কম্পিউটার কোড লেখার দক্ষতা থাকায় ভিডিও কনফারেন্সিং সফ্টওয়্যার সংস্থা ওয়েবএক্সের ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের সেক্টরে কাজ শুরু করেছিলেন। ২০০৭ সালে এই কোম্পানি সিসকোতে রূপান্তরিত হয়। ইউয়ান এই কোম্পানির ভাইস প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন।
২০১১ সালে ইউয়ান ভিডিও কনফারেন্স প্ল্যাটফর্মটির স্মার্টফোন এবং ট্যাবলেট সংস্করণের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। কোম্পানি তার ধারণা প্রত্যাখ্যান করেছিল। যদিও কোম্পানি পরে তাদের ভুল বুঝতে পেরেছিল।
প্রস্তাব প্রত্যাখান করায় অসন্তুষ্ট ইউয়ান ঝুঁকি নিয়ে ২০১৩ সালের সিসকো ছেড়ে তার কিছু সহকর্মী নিয়ে জুম অ্যাপের কাজ শুরু করেন। সেই সময় ওয়েবএক্স, গুগল হ্যাংআউট এবং স্কাইপ (মাইক্রোসফ্টের মালিকানাধীন) সেইভাবে ব্যবসা করেছিল। তবুও ঝুঁকি নিয়ে কাজ শুরু করেছিল।
বৃত্তবানদের বিনিয়োগকৃত অর্থ, বন্ধু ও পরিবারের কাছে টাকা ধার করে নিয়ে কাজ চালিয়ে যাচ্ছিল। ২০১৩ সালের মার্চে অনলাইনে কার্যক্রম শুরু হলে সে বছর ১ মিলিয়ন অংশগ্রহণকারী ছিল। বর্তমানে প্রতিদিন প্রায় ৩শ মিলিয়ন মানুষ এই অ্যাপের মধ্যদিয়ে বিভিন্ন মিটিং, সেমিনার ও ক্লাসে অংশগ্রহণ করছে। বর্তমানে তার সাবেক কর্মস্থলের অ্যাপ ওয়েবএক্সকে ছাড়িয়ে গেছে।
জুমের সদর দপ্তর যুক্তরাষ্ট্রের স্যান জোসে। আজ ইউয়ান ভিডিও কনফারেন্সিং ক্লাউড সফটওয়্যার সংস্থা জুমের প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা। বান্ধবীকে দেখার তাড়না থেকে সৃষ্টি হওয়া দিবা স্বপ্ন বাস্তবে রূপ দিয়েছেন। ২০২০ সালে প্রকাশিত ফোর্বসের ৪০০ বৃত্তবানের তালিকায় ৪৩ নম্বরে আছেন ইউয়ান ।
শিক্ষার্থী ও সাংবাদিক, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, সাধারণ সম্পাদক, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রেসক্লাব
এমএমএফ/এমএস