ভ্রমণ

যে গুহায় কখনোই সূর্যের আলো পৌঁছায় না

সালমান ইসলাম

Advertisement

ইতিহাস থেকে জানা যায়, আগে পাহাড়টির নাম ছিল আরবারী পর্বত। ২য় বিশ্বযুদ্ধের সময় এ জেলায় খাদ্যাভাব দেখা দিলে এখানকার মানুষ এ পাহাড় থেকে আলু সংগ্রহ করে খেয়ে জীবন ধারন করতো। সে থেকেই লোকমুখে প্রচারিত হতে হতে স্থানটির নাম এখন আলুটিলায় রূপান্তরিত হয়েছে।

আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্র: আলুটিলা রহস্যগুহায় যেতে হলে দর্শনার্থীদের পর্যটন কেন্দ্রের নির্ধারিত টিকিট কাটতে হয়। প্রবেশের শুরুতেই বিশাল দুটি বটবৃক্ষ দর্শনার্থীদের স্বাগত জানানোর জন্য শতবর্ষ ধরে দাঁড়িয়ে আছে।

পর্যটন কেন্দ্রের প্রবেশমুখ থেকে ডান ও বাম দিকে দুটি রাস্তা রয়েছে। বামদিকের রাস্তাটি দিয়েই মূলত রহস্যগুহায় যাওয়া যায়। আপনি চাইলে ডানদিকের রাস্তাটি ধরে কিছুটা এগিয়ে বাড়তি আনন্দ উপভোগ করে নিতে পারেন।

Advertisement

পর্যটন কেন্দ্রের মূল গেটের ডানদিক দিয়ে যে রাস্তা রয়েছে; সেই রাস্তা ধরে কিছুটা পথ এগোলেই সামনে পড়বে চিকন একটি পাহাড়ি পথ। এটি নিচের দিকে নেমে গেছে। পথটি ধরে নিচে নামলে প্রথমেই চোখে পড়বে ছোট আকারের একটি ঝরনা।

রহস্যগুহার দিকে: ফটক থেকে বামদিকে যে রাস্তাটি, সেই রাস্তা দিয়ে কিছুটা এগোলেই দেখা মিলবে সেই রহস্যগুহার। গুহার মুখে দর্শনার্থীদের জন্য রয়েছে একটি বিশ্রামাগার। বিশ্রামাগারের সামনে থেকে সোজা একটি পথ গুহার মুখে গিয়ে মিলেছে। গুহার ভেতরে প্রবেশের আগে অবশ্যই দর্শনার্থীদের মশাল সংগ্রহ করে নিতে হবে অথবা মাথায় হেডলাইটওয়ালা ক্যাপ সাথে করে নিতে হবে। কেননা গুহার ভেতরে সূর্যের আলোর বিন্দুমাত্রও পৌঁছায় না।

গুহার মুখে গিয়ে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামতে হবে। ধাপে ধাপে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামলে দেখা মিলবে সেই রহস্যময় গুহার। ভেতরে ঢোকার পর যে কারোরই গায়ে কাটা দিতে বাধ্য। তাই ভীত না হয়ে ধীর পায়ে সামনে এগিয়ে যেতে হবে। উল্লেখ্য, এখানে অন্য কোনো জীব-জন্তুর ভয় নেই। মূলত এর নিচ দিয়ে একটি ঝরনা প্রবাহিত হওয়ার কারণে পর্যটকদের অতিরিক্ত সাবধানতা অবলম্বন করতে হয়।

গুহার ভেতরের পথ ধরে কিছুটা এগোলে দু’দিকে দু’টো রাস্তা রয়েছে। এরমধ্যে একটি রাস্তা বন্ধ। সোজা যেই রাস্তা রয়েছে; সেই রাস্তা ধরেই এগোতে হবে। আপনি চাইলে বন্ধ রাস্তাটিতেও ঘুরে আসতে পারেন। মাঝপথে গুহাটির উচ্চতা স্বাভাবিকের চাইতে কম হওয়ায় পর্যটকদের মাথা নুইয়ে চলতে হয়।

Advertisement

গুহাটির মোট দৈর্ঘ্য ৩৫০ ফুট। গুহার এপাশ থেকে ওপাশে যেতে সময় লাগে মোটামুটি ১৫ থেকে ২০ মিনিটের মতো। অপরূপ সৌন্দর্যমণ্ডিত গুহাটি দেখে যে কারোরই ভালো লাগতে বাধ্য।

হাতিমাথা সিঁড়ি: খাগড়াছড়ি জেলার উপজেলা সদরের পেরাছড়া ইউনিয়নের মায়ুং কপাল বা হাতিমুড়া হচ্ছে একটি পাহাড়ি উঁচু পথ। স্থানীয় অনেকেই আবার একে হাতিমাথা বলে ডাকেন। চাকমা ভাষায় যার নাম– এদো সিরে মোন। অনেকে একে স্বর্গের সিঁড়িও বলে থাকেন।

হাতিমুড়া যেতে হলে প্রথমে খাগড়াছড়ি সদর থেকে পানছড়ি যাওয়ার পথে জামতলীস্থ যাত্রী ছাউনির সামনে নামতে হবে। এরপর জামতলীস্থ যাত্রী ছাউনির বামদিকের রাস্তা ধরে সোজা গিয়ে চেঙ্গী নদী পার হয়ে ডানদিকে স্কুলের রাস্তার দিকে যেতে হবে। সেখানে গিয়ে একটি দোকান পাবেন। দোকানের সামনে দিয়ে ডানের রাস্তা ধরে যেতে হবে। দুটি বাঁশের সাঁকো পার হতে হবে। এরপর ডানদিকে ছড়ার পাশ দিয়ে যে ছোট্ট রাস্তা গেছে, সেটি দিয়ে আরেকটি সাঁকো পার হয়ে এবার সোজা পথ ধরে এগিয়ে যেতে হবে।

এখানে বগড়া পাড়া নামে একটি পাড়া পড়বে। এরপর সামনে এগোলে বিস্তৃত ছড়া পড়বে। এরপর একটি বড় টিলা পার হতে হবে। এটি পার হলে একটি লোকালয় পাওয়া যাবে, যে এলাকার নাম কাপতলা। এরপর হাতের ডানদিকে নিচু পথ ধরে এগিয়ে যেতে হবে, যেতে যেতে সামনে দু’টি রাস্তা পাওয়া যাবে এবং ডানদিকের রাস্তা ধরে এগোতে হবে। এরপর দেখা মিলবে অসাধারণ হাতিমাথা। সব মিলিয়ে পৌঁছাতে সময় লাগবে ঘণ্টা দেড়েক।

ট্রেকিং মোটামুটি কষ্টের। কারণ ছোটখাটো পাহাড় পাড়ি দিতে হবে। সাথে অবশ্যই পানি এবং শুকনা খাবার নিয়ে যাবেন। বনের মাঝে এঁকেবেঁকে উঠে যাওয়া রাস্তাটি দেখতে ভয়ঙ্কর লাগলেও আসলে তেমন নয়। একটু সাবধানে উঠলেই হবে। রাস্তাটির স্থানীয় নাম মায়ুংকপাল বা হাতিমাথা পাহাড়ের সিঁড়ি। স্বর্গে যাওয়া না হলেও এ সিঁড়ি আপনাকে নিয়ে যাবে পাহাড়ের চূড়ায় অসম্ভব সুন্দর গ্রামে। আদিবাসীদের গ্রামগুলোকে পাড়া বলে।

খাড়া পাহাড় ডিঙিয়ে দুর্গম এ পথে যাতায়াত করে ১৫টি গ্রামের মানুষ। সদর উপজেলা ও মাটিরাঙ্গা উপজেলার সীমান্তবর্তী গ্রাম ভাঙ্গামুড়া, বাদলছড়া, মাখন তৈসা পাড়া, কিনাপা পাড়া, হাজা পাড়া, বগড়া পাড়া, কেশব মহাজনপাড়া, সাধুপাড়া, কাপতলাপাড়ার মানুষের জীবন যাত্রাকে একটু সহজ করার জন্য নির্মিত হয়েছে ৩০৮ ফুট লম্বা লোহার তৈরি সিঁড়ি।

সব মিলিয়ে পাহাড়ের নানাবিধ বৈচিত্র আপনাকে মুগ্ধ করবে। এসব স্থানে একবার গেলে বারবার যেতে ইচ্ছে করবে। স্মৃতির পাতায় এমন ভ্রমণ চিরকাল স্মরণীয় হয়ে থাকবে।

এসইউ/এমকেএইচ