জাগো জবস

চাকরির শুরুতে বেতন নয় অভিজ্ঞতাকে প্রাধান্য দিন

কাজী মোহাম্মদ জাফর সাদেক। প্রধান মানবসম্পদ এবং প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করছেন দারাজ বাংলাদেশ লিমিটেডে। সম্প্রতি তার ক্যারিয়ার ও সফলতা নিয়ে কথা বলেছেন জাগো নিউজের সঙ্গে। সমসাময়িক বিষয়ে সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন বেনজির আবরার—

Advertisement

আপনার ছোটবেলা ও পড়াশোনা সম্পর্কে জানতে চাই—কাজী মোহাম্মদ জাফর সাদেক: ঢাকায় বড় হয়েছি। আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজ থেকে এইচএসসি এবং ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক করেছিলাম। এইচআর পেশায় কেন?কাজী মোহাম্মদ জাফর সাদেক: বিবিএতে অনেকগুলো প্রধান বিষয় ছিল। তার মধ্যে মানবসম্পদ বিভাগ বা হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিষয়টি নতুন ছিল। তাই এ বিভাগে প্রধান বিষয় হিসেবে পড়ার ইচ্ছা হয়েছিল। যাতে পরবর্তীতে চাকরির বাজারে মানবসম্পদ বিভাগে যোগদানের মাধ্যমে প্রাতিষ্ঠানিক সুস্থ সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি স্থায়ী ও অস্থায়ী জনশক্তির পূর্ণ যোগ্যতা কাজে লাগানোর জন্য দক্ষতা বৃদ্ধি নিশ্চিত করা যায়।

জীবনে যা হতে চেয়েছিলেন— কাজী মোহাম্মদ জাফর সাদেক: জীবনে আইনজীবী হতে চেয়েছিলাম। বিটিভিতে একটি সিরিয়াল দেখাতো ডার্ক জাস্টিস। তা থেকে উজ্জীবিত হয়ে আইনজীবী হতে চেয়েছিলাম। তাছাড়া বাবাকেও এ পেশায় দেখেছি। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে সব কিছু পরিবর্তন হয়েছে। যার ফলশ্রুতিতে আমি আজ এইচআর প্রফেশনাল।

কোভিড-১৯ ক্যারিয়ারে কী বার্তা দিয়ে গেল— কাজী মোহাম্মদ জাফর সাদেক: বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আর্থিক পেশীশক্তি ও পরিচালনা পর্ষদের সিদ্ধান্তগুলোর উপর নির্ভর করে। যদিও নির্দিষ্ট কিছু ব্যবসা স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে যেতে পারে। কিছু লড়াই করবে এবং কিছু বিজয়ী হিসাবে প্রকাশিত হবে। স্থায়ী ও অস্থায়ী উভয়ই লাখ লাখ লোককে বেকার করে রাখবে। এমনকি এ মন্দায় স্বাস্থ্যযত্ন, ফার্মেসি, চিকিৎসা সরঞ্জাম, ই-কমার্স, অনলাইন মিডিয়া, বিনোদন, ই-লার্নিং, ডিজিটাল পেমেন্ট, ফুড প্রসেসিং ইত্যাদিতে সংস্থাগুলোর একটি নির্দিষ্ট সংখ্যার চাহিদা বাড়ছে। তারা নতুন কাজের সুযোগ তৈরি করবে। এ অবস্থায় মানবসম্পদ বিভাগ যেকোনো প্রতিষ্ঠানে সর্বদা গুরুত্বের সাথে পরিচালিত হবে। ভবিষ্যতে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের বুদ্ধি অনুযায়ী বিভিন্ন স্বল্পমেয়াদী এবং দীর্ঘমেয়াদী মানবসম্পদ ব্যবস্থা গ্রহণ করার পরিকল্পনা করবে।

Advertisement

সামাজিক যেসব সংগঠনের সাথে যুক্ত আপনি— কাজী মোহাম্মদ জাফর সাদেক: আমি উপদেষ্টা হিসেবে আছি বাংলাদেশ এফএমসিজি এইচআর সোসাইটির সাথে, বাংলাদেশ এইচআর ক্লাবের ফাউন্ডার মেম্বার হিসেবে।

তরুণরা কী কী দক্ষতা অর্জন করলে ভবিষ্যতের জন্য ভালো হবে?কাজী মোহাম্মদ জাফর সাদেক: পড়াশোনার পাশাপাশি বা শেষ করার পর দক্ষতা বৃদ্ধির কোনো বিকল্প নেই। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যে বিষয়ে পড়াশোনা শেষ করা হয়েছে, সেটার সাথে মিল রয়েছে-এমন কোনো প্রফেশনাল কোর্স অথবা শর্ট কোর্স করতে হবে। যেমন- বিজনেস কমিউনিকেশনের উপর দক্ষতা অর্জন, মাইক্রোসফ্ট অফিসের উপর দক্ষতা অর্জন, ডিজিটাল মার্কেটিং, ই-কমার্স, সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন, গুগল অ্যাড ওয়ার্ডস, সিঅ্যান্ডএফ, এক্সপোর্ট, ইম্পোর্ট, গ্রাফিক্স ডিজাইনিং। এ ছাড়া প্রফেশনাল সার্টিফিকেশন কোর্স, যেমন- পিজিডি এইচআরএম, মার্চেন্ডাইজিং, সাপ্লাইচেন, প্রকিউরমেন্ট ও লজিস্টিক্সের উপর কোর্স করতে পারে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ থেকে খণ্ডকালীন যেসব কোর্স করানো হয়, সেগুলো করতে হবে। ফলে চাকরির বাজারে সাক্ষাৎকার দেওয়ার সময় অন্য দশটা প্রার্থী থেকে নিজেকে এগিয়ে রাখা যাবে। মাল্টিন্যাশনাল প্রতিষ্ঠানে যোগদান করতে চাইলে ইংরেজি ভাষায় ভালো দক্ষতা থাকতে হবে। এর জন্য অনর্গল ইংরেজি ভাষায় কথা বলার নিয়মিত চর্চা করার পাশাপাশি বর্তমান ব্যবসা বিষয়ক ও চাকরির বাজার সম্পর্কে খবর রাখতে হবে।

তরুণ চাকরিপ্রার্থীদের জন্য আপনার পরামর্শ— কাজী মোহাম্মদ জাফর সাদেক: নিয়মিত পাঠক্রম বহির্ভুত বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন কার্যকলাপ ও ক্লাবগুলোর সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত থাকা। পড়াশোনা শেষ হওয়ার আগেই বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র ভাই-বোন অথবা অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনদের সাথে সর্বদা যোগাযোগ করা এবং তাদের পরামর্শ নেওয়া। প্রধান বিষয় নির্বাচন করার আগে তাদের পরামর্শ নেওয়ার পাশাপাশি চাকরির বাজারে কোন কোন বিভাগে বেশি চাহিদা রয়েছে, সে অনুযায়ী নিজের শক্তি ও দুর্বলতা পর্যলোচনা করে নিজেকে প্রস্তুত করা। ইন্টার্নশিপ শেষ করার পর চাকরি না পেলে স্বল্পমেয়াদী চাকরিতে যোগদান করা। শুরুতে বেতন বা প্রতিষ্ঠান কত টাকা দিলো, সেটার প্রতি প্রাধান্য না দিয়ে অভিজ্ঞতাকে প্রাধান্য দিতে হবে। নিজের চাকরির অভিজ্ঞতার ভিত্তি শক্ত হলে পরবর্তীতে সব জায়গায় ভালো বেতনে চাকরি পাওয়া সহজ হবে। সর্বোপরি নিত্য নতুন কোর্স ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নিজের দক্ষতাকে বাড়িয়ে তুলতে হবে।

এসইউ/এএ/এমকেএইচ

Advertisement