একুশে বইমেলা

ভালো-মন্দের দোলাচলে বইমেলা

দেখতে দেখতে শেষ হয়ে এলো অমর একুশে বইমেলা। এবারের বইমেলায় বিগত মেলার চেয়ে বেশকিছু ভালো দিক ছিল। তেমনই মন্দ ও ব্যতিক্রমী দিকও ছিল। তবে ভালো-মন্দ মিলিয়ে এবারের বইমেলা উপভোগ করেছেন লেখক, পাঠক ও দর্শনার্থীরা।

Advertisement

এবারের বইমেলা শুরু হয়েছে দীর্ঘ ইতিহাসের ধারাবাহিকতার ব্যত্যয় ঘটিয়ে। ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের কারণে এবার বইমেলা ১ ফেব্রুয়ারি উদ্বোধন হয়নি। ২ তারিখে বইমেলা শুরু হওয়ায় অনেক প্রকাশক মন খারাপ করেছেন। এ বছর ফেব্রুয়ারি ২৯ দিন হওয়ায় প্রকাশকরা যদিও খুশি হয়েছিলেন।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে প্রকাশনা সংস্থা স্বরবৃত্তের প্রকাশক মো. রহমত উল্লাহ বলেন, ‘এবারের ফেব্রুয়ারি ২৯ দিন হওয়ায় অনেক আশা করেছিলাম যে, একদিন বেশি বিক্রির সময় পাবো। তা আর হলো না। তবে দেশের জাতীয় প্রয়োজনে সবকিছু আমরা মেনে নিয়েছি।’

এবারের বইমেলা ছিল বইমেলার ইতিহাসে দীর্ঘ পরিসরের আয়োজন। মেলার মাঠের ব্যপ্তি বেশি হওয়ায় পাঠকরা আনন্দে ঘোরাফেরা করে পছন্দের বই কিনতে পেরেছেন। বিশেষ করে শুধু ঘুরতে আসা দর্শনার্থীরা আড্ডা দিতে পেরেছেন। পরিসর দীর্ঘ হওয়ায় কেউ কেউ বাংলা একাডেমিকে সাধুবাদ জানিয়েছেন, আবার কেউ ভিন্ন মতও পোষণ করেছেন।

Advertisement

রাজধানীর উত্তরা থেকে আসা নাজমুস সাকিব বলেন, ‘বইমেলার স্টল ও প্যাভিলিয়ন এত বেশি ফাঁকা ফাঁকা যে, সব স্টল ও প্যাভিলিয়ন ঘুরতে ঘুরতে ক্লান্ত হয়ে গেছি। এত বেশি ফাঁকা জায়গার দরকার ছিল না।’

কেরাণীগঞ্জ থেকে আসা ফারহানা বিনতে সুহা আবার ভিন্ন কথা বলেছেন। তিনি বলেন, ‘বইমেলা খোলামেলা হওয়ায় আমার খুব ভালো লেগেছে। মনের মত ঘুরে বেড়ানো যাচ্ছে।’

পরিসর বাড়ানো এবং বইমেলার সার্বিক বিষয় নিয়ে কথা হয় অন্যপ্রকাশের কর্ণধার মাজহারুল ইসলামের সাথে। তিনি বলেন, ‘আমি মেলার শুরু থেকেই বলে আসছি, মেলার স্টল ও প্যাভিলিয়ন বিন্যাস বিগত দিনের চেয়ে অনেক গোছানো। কিন্তু এবার মেলার পরিসর অনেক বেড়েছে। আমার মনে হচ্ছে, পরিসর এতটা না বাড়ালেও চলতো। দীর্ঘ পরিসর হওয়ায় একজন পাঠকের সব স্টল বা প্যাভিলিয়নে যাওয়া কষ্টকর। আরও একটি বিষয় আমি বলতে চাই, মেলায় আরও বেশি প্রবেশপথ দরকার।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাংলা একাডেমির এক কর্মকর্তার সাথে মেলার পরিসর বাড়ানো নিয়ে কথা হয়। তিনি জানান, আসলেই এত বেশি পরিসর নিয়ে মেলা আয়োজন করা ঠিক হয়নি।

Advertisement

বইমেলা ঘুরে বিভিন্ন প্রকাশক, বিক্রয়কর্মী ও পাঠকের সাথে কথা বলে জানা যায়, মেলায় ধুলার রাজত্ব ছিল। ধুলার কারণে দীর্ঘক্ষণ মেলায় অবস্থান করা কষ্টকর ছিল। প্রকাশনা সংস্থা শিকড়ের প্রকাশক মিজানুর রহামান বলেন, ‘এবারের মেলায় এত বেশি ধুলা ছিল যে, রীতিমত অসুস্থ হয়ে পড়ার মতো অবস্থা। স্টলে বসা মুশকিল। আমার মতে, পুরো মেলার মাঠে ইট বিছিয়ে দিলে এত ধুলা হতো না।’

ভালো মানের বইয়ের পাশাপাশি এবারের বইমেলায় বিভিন্ন বিদেশি পাইরেটেড বই পাওয়া যাচ্ছে। এ প্রসঙ্গে প্রকাশনা সংস্থা অন্বেষার প্রকাশক শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘বিভিন্ন স্টলে অনেক বই দেখা গেছে, যেগুলো অনেক বিতর্কিত ও শিশুদের পাঠে অনুপোযোগী। ডোরেমন ও কার্টুন সর্বস্ব বই দিয়ে অনেক স্টল সয়লাব। এগুলো শিশুদের মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত করবে। এগুলো বন্ধের ব্যাপারে বাংলা একাডেমি কথা দিলেও আমরা কার্যকর হতে দেখিনি। কয়েকদিন আগে একবার টাস্কফোর্স এসেছিল। কিন্তু পুরো মেলায় আর তাদের কোনো পদচারণা চোখে পড়েনি।’

অন্যদিকে মেলায় পর্যাপ্ত খাবারের দোকান ছিল। এ খাবারের দোকান নিয়েও বিভিন্ন মত পাওয়া গেছে। আবু তালহা নামের একজন পাঠকের সাথে কথা বলে জানা যায়, তিনি এত বেশি খাবারের দোকান দেখে ক্ষুব্ধ। তার মতে, বইমেলায় এত খাবরের দোকান থাকবে কেন? এখানে তো মানুষ আসে বই কিনতে।

অবশ্য সামিয়া নামে এক পাঠক বলেন, ‘বিভিন্ন ধরনের খাবারের দোকান দেখে ভালোই লাগছে। তবে দাম একুট বেশি।’

এবারের সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা ভালো থাকলেও শেষ দিকে এসে ঘটে একটি অপ্রীতিকর ঘটনা। মেলায় ধূমপান নিয়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও এক চিত্রশিল্পীর সাথে তুমুল বাকবিতণ্ডা হয়। তবে কিছু মন্দ দিক থাকলেও সবকিছু মিলিয়ে এবারের বইমেলা ভালোয় ভালোয় শেষ হচ্ছে।

এসইউ/এমকেএইচ