একুশে বইমেলা

উন্নয়ন হোক ভাষা-সংস্কৃতি ধারণ করেই

নিজস্ব ভাষা-সংস্কৃতিকে ধারণ করে উন্নয়নের পথে হাঁটতে না পারলে সমাজ কল্যাণমূলক হয়ে ওঠে না। সেজন্য ভাষা-সংস্কৃতি ধারণ করেই উন্নয়নের পথে হাঁটার তাগিদ দিয়েছেন প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক ও শিক্ষাবিদ হাসান আজিজুল হক। তার ভাষ্যে, ‘স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরে বাঙালি অনেক দূরে এগিয়ে গেছে। তবে এই অঞ্চলের মানুষের মৌলিক চাহিদার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে আমরা ঠিকঠাক হাঁটতে পারিনি।’

Advertisement

অমর একুশে গ্রন্থমেলা-২০২০ উপলক্ষে জাগো নিউজকে দেয়া এক প্রতিক্রিয়ায় এ কথা বলেন হাসান আজিজুল হক

একুশে পদকজয়ী এ নন্দিত কথাসাহিত্যিক বলেন, ‘একটি ভাষার মর্যাদা রক্ষার মধ্য দিয়ে একটি জাতিসত্তার বিকাশ ঘটেছে পৃথিবীতে। এটি অন্য কোনো জাতি পারেনি। এমনকি বাংলা ভাষাভাষি পশ্চিমবঙ্গের মানুষেরাও পারেনি।’

‘আমাদের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, সবই তো এল এই ভাষা অধিকারের প্রশ্ন থেকেই। ভাষার এলাকা ধরে বাঙালির যে অর্জন, তাকে সামান্য বলা যাবে না। বাঙালির উত্থান আর দশটি জাতির সঙ্গে মেলানো যাবে না।’

Advertisement

১৯৭৩ সাল থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করা এ শিক্ষাবিদ বলেন, ‘স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরে আমরা অনেক দূরে এগিয়েছি। রাস্তা-ঘাট, শিক্ষা, স্বাস্থ্য সব ক্ষেত্রেই তো আমরা এগিয়ে গেলাম। যোগ্য নেতৃত্বের হাত ধরেই আমাদের এগিয়ে যাওয়া। শাসকগোষ্ঠীর মধ্যে বিচক্ষণতা নিয়ে প্রশ্ন থাকতেই পারে। কিন্তু আমরা একেবারে পথ হারাইনি। যেমন, আমাদের সমাজতন্ত্রের দিকে যাওয়ার কথা ছিল। পারিনি। সমাজতন্ত্র না হোক অন্তত কল্যাণ রাষ্ট্রের দিকে যেতে পারতাম। কিছুটা প্রয়াস হয়ত আছে। নইলে তো ১৮ কোটি মানুষের এই দেশ এতটুকু এগিয়ে যেতে পারত না।’

‘কিন্তু এই অঞ্চলের মানুষের মৌলিক চাহিদার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে আমরা ঠিকঠাক হাঁটতে পারিনি। যেমন, ভূমি সংস্কার, জলাভূমির সংস্কার-বণ্টনে আমরা সমতা আনতে পারিনি। আর এখানেই আমাদের বড় ব্যর্থতা। মৌলিক কাঠামোতে পরিবর্তন না আনতে পারলে সমাজের সত্যিকার পরিবর্তন হয় না। আর সমাজ গতিশীল না থাকলে শিল্প-সাহিত্য বাঁচে না।’

‘আগুনপাখি’ উপন্যাসের এ লেখক বলেন, ‘শিল্প-সাহিত্যে অগ্রগতি হয়নি, তা বলা যাবে না। কিন্তু কোথায় যাওয়ার কথা ছিল, আর কোথায় গেলাম, তা নিয়ে তো প্রশ্ন তোলার অধিকার যে কারোরই আছে। আমরা চাল রফতানি করছি। শুনে ভালো লাগছে। গরিব বাঙালি এখন চাল বিদেশে পাঠায়। কিন্তু এই ধান চাষের সঙ্গে বাঙালির ইতিহাস আছে, সংস্কৃতি আছে। আমরা কী সংস্কৃতি এখন ধারণ করছি?’

‘আর এ কারণেই বলছি, আমাদের শিক্ষা-সংস্কৃতি গুরত্ব পাক আমাদের নিজস্বতা ধারণ করেই। আমাদের উন্নয়ন হোক ভাষার সংস্কৃতি ধারণ করেই। নিজস্ব ভাষা-সংস্কৃতিকে ধারণ করে আমরা উন্নয়নের পথে হাঁটতে না পারলে সমাজ কল্যাণমূলক হবে না। বড় মাছ যেভাবে ছোট মাছকে গিলে খায়, মানুষও তাই করবে। হচ্ছেও তো তাই-ই। আর এই গিলে খাওয়ার চিত্র গোটা দুনিয়াজুড়েই’- বলেন হাসান আজিজুল হক।

Advertisement

এএসএস/এইচএ/জেআইএম