ভ্রমণ

টেংরাগিরি বা ফাতরার বনে একদিন

সকাল ১০টায় লঞ্চে চড়ে সাগর পাড়ির প্রস্তুতি নিলাম। টেংরাগিরি বা ফাতরার বনের উদ্দেশে এ যাত্রা। ৪ সদস্যের পরিবার। সাথে আরও দুটো পরিবার। ৫-৬ জনের দলছুট, তরুণের দলও সাথে। সাগরের ঢেউয়ের তালে তালে ভটভট করতে করতে এগিয়ে চলছি আমরা। বিশাল জলরাশি। ডানপাশে দেখা যায় মোটরবাইকের সারি। দ্রুত ছুটে চলেছে। লাল কাঁকড়ার চরের দিকে। কেউ কেউ ফিরছেনও। একটু পরেই সাগরের অনেক ভেতরে ঢুকে পড়লাম। পাখির ওড়াউড়ি। গাঙচিলের পাখার ঝাপটা। সাগরের ঢেউয়ে কিছু গাঙচিলও ভাসে।

Advertisement

হঠাৎ শুঁটকি মাছের গন্ধ। মাঝি বললেন, ‘ওই দেখা যায়, ওটাই শুঁটকি পল্লি। বিশাল জলরাশির মাঝে মাঝে হঠাৎ চর। সবুজের সমারোহ। মাছ ধরার ট্রলার মাঝে মাঝে ভটভট করে বের হয়ে যাচ্ছে। কিছু নৌকায় ধোঁয়া উড়তে দেখলাম। মানে রান্নার কাজ চলছে। খাওয়া-নাওয়া ট্রলার বা নৌকাতেই। কয়েকদিনের খাদ্যসামগ্রী নৌকায় তুলে নিয়ে জেলেরা রওনা দেন। ঢুকে পড়েন গভীর সমুদ্রে।

এভাবে চলতে চলতে হঠাৎ বড় বনাঞ্চল দেখতে পেলাম। ছবিও তুলে নিচ্ছি ইচ্ছেমতো। একটু যেতেই দেখি বনের ভেতর পানির চ্যানেল ঢুকে পড়েছে। পাশাপাশি দুটো খালের মতো নদী। কী মনোহর সে দৃশ্য! লঞ্চ ঢুকে পড়ল বামদিকের চ্যানেলটি দিয়ে। নির্জন বনের মধ্যে পাখ-পাখালির ডাক। বন্যপ্রাণির আনাগোনা। নৌকা চলছে তরতর করে, টেংরাগিরির দিকে। হঠাৎই থেমে গেল নৌকা বা লঞ্চ। কুয়াকাটা থেকে প্রায় এক ঘণ্টা সাগর ভ্রমণ করে এখানে। বামপাশে একাধিক সাইন বোর্ড। লেখা ‘টেংরাগিরি বন্যপ্রাণি অভয়াশ্রমে স্বাগতম’। মাঝি বললেন, ‘৫০ মিনিট এ বন-বাদাড়ে ঘুরুন।’

বনের ভেতর প্রবেশ করতেই একটি বাড়ি দেখলাম। সাথে কয়েকটি দোকান। ডাবের দোকান থেকে ডাব কিনে খেয়ে নিলাম সবাই মিলে। ছোট মেয়ে ডাবের ভেতরের আঁশ (সর) খাবে বলে বায়না ধরল। আবদার মেটালাম। পাশের দোকান থেকে লাল চা খেয়ে শরীরকে চাঙা রাখার চেষ্টা করলাম। এরপর পুকুর পাড় দিয়ে গহীন অরণ্যে ঢুকলাম। পুল, খাল পেরিয়ে। কিছুদূর যেতেই ছোট্ট খালের ওপর কাঠের পুল। এরপরই এঁদো কাদা। ছোট ছোট হুলের মতো কী যেন! মনে পড়ল সুন্দরবনের লবণাক্ত জলে শ্বাসমূলীয় বৃক্ষ জন্মে। এরাই শ্বাসমূলীয় বৃক্ষ। ক্রমেই প্যাঁচপ্যাঁচে কাদা সরিয়ে গহীন বনের ভেতর যাচ্ছি। চলতে চলতে সমুদ্রতটে চলে এলাম। সমুদ্র থেকে যে বনের ছবি দেখলাম, সেটিই এটি! ঘন ও সবুজ বন। বরগুনার আমতলী থেকে সড়কপথে যাওয়া যায় বনের কাছাকাছি। এরপর জল পেরিয়ে। অবশ্য আমরা গেছি কুয়াকাটা সি-বিচ দিয়ে লঞ্চে বঙ্গোপসাগর আর খাল পেরিয়ে। দু’ধার আর জলরাশির অপূর্ব দৃশ্য দেখতে দেখতে।

Advertisement

খাওয়া-থাকা: আমতলী উপজেলায় তেমন ভালো মানের থাকার ব্যবস্থা নেই। আপনাকে থাকতে হবে বরগুনা শহরে। সেখানে জেলা পরিষদের ডাকবাংলোসহ কিছু রেস্ট হাউস এবং হোটেল রয়েছে। কুয়াকাটায় থাকা ও খাওয়ার সুবিধা হবে। এখানে প্রচুর আবাসন সুবিধা আছে। বিভিন্ন বাজেটের থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থা আছে বিচের কাছাকাছি। বিচের একেবারে কাছ থেকে গন্তব্যের বাস পাবেন।

যাওয়া-আসা: দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে পৌঁছতে হবে বরগুনায়। ঢাকা থেকে সড়ক ও নৌপথে বরগুনা যাওয়া যায়। বরগুনা থেকে তালতলীর দূরত্ব ১৭ কিলোমিটার। গাড়ি ও নৌকায় করে তালতলী যেতে পারবেন। তারপর হেঁটে কিংবা নৌকায় সোনাকাটা বন। সায়েদাবাদ এবং গাবতলী থেকে বিভিন্ন সময় কুয়াকাটা বা বরগুনার উদ্দেশে বাস ছেড়ে যায়।

লেখক: উপ-পরিচালক, বিআরডিবি, কুষ্টিয়া।

এসইউ/পিআর

Advertisement