ফিচার

পাঞ্জাবি-ফতুয়ার নকশায় ১০০ নারীর মুখে হাসি

তরুণ উদ্যোক্তা মোহাম্মদ মাসুদ। গ্রামের গরিব-অসহায় মানুষের জন্য কিছু করতে গাইবান্ধার বোয়ালী ইউনিয়নের খামার চান্দ্রি ভিটা গ্রামে গড়ে তোলেন নারী উন্নয়ন কেন্দ্র। প্রায় ১ যুগ ধরে পাঞ্জাবি-ফতুয়ায় নকশার কাজ করছেন। নিজের সাথে সাথে গ্রামের অসহায় মানুষের মুখেও হাসি ফুটিয়েছেন। বিস্তারিত জানাচ্ছেন মো. মনির হোসেন-

Advertisement

প্রথমে গ্রামের অসহায়, আর্থিক অস্বচ্ছল ১০-১২ জন নারীকে স্বল্পমেয়াদী প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ করে তোলা হয়। তাদের দিয়েই যাত্রা শুরু হয় নারী উন্নয়ন কেন্দ্র। প্রতিষ্ঠার প্রথম থেকেই আসতে থাকে সফলতা। বেশির ভাগ সদস্য কাজ করেন নিজ বাড়িতে। এজন্য ছোট ছোট দলে ভাগ করে প্রায় বাড়িতেই স্থাপন করে দিয়েছেন নকশা তৈরির মেশিন। সংসারের অন্যান্য কাজের ফাঁকে বাড়তি আয় হওয়ায় অন্য নারীও এ কাজে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে কেন্দ্রের কলেবর। বর্তমানে কেন্দ্রের সদস্য প্রায় ১০০ জন।

জানা যায়, মোহাম্মদ মাসুদকে ফ্যাশন হাউস থেকে নতুন নতুন অর্ডারের জন্য বেশির ভাগ সময় ঢাকায় থাকতে হয়। তাই নারী উন্নয়ন কেন্দ্র দেখাশোনা করেন তার স্ত্রী। ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের নামকরা ফ্যাশন হাউসগুলোর আকর্ষণীয় পাঞ্জাবি ও ফতুয়ার নেপথ্য কারিগর এ কেন্দ্রের নারীরা।

শ্রমিকরা জানান, শুরুর দিকে যেসব নারী সারাদিন ঘরের কাজ শেষে প্রচুর অবসর পেত; তারা বাড়তি আয়ের আশায় হাতে তুলে নেন সুঁই-সুতা। বর্তমানে অনেক শিক্ষিত নারীও এখানে কাজ করছেন। কারখানার বেশির ভাগ শ্রমিকই অবসর সময়ে কাজ করেন। কাজ ও নকশা অনুযায়ী মজুরি নির্ধারণ করা হয়। একজন শ্রমিক সংসারের কাজের ফাঁকে মাসে ৭-১০ হাজার টাকা বাড়তি আয় করছেন। তবে ফ্যাশন হাউস থেকে টাকা সময়মতো না পাওয়ায় প্রতি মাসে পরিশোধ করা হয় না। কিন্তু দুই ঈদের সময় সব টাকা পরিশোধ করা হয়। যারা দীর্ঘদিন কাজ করছেন; তারা মাসে আরও বেশি আয় করে থাকেন।

Advertisement

নারী উন্নয়ন কেন্দ্রের উদ্যোক্তা মোহাম্মদ মাসুদ জানান, লেখাপড়া করার সময় ঢাকার মীরপুরে তিনি এ কাজ শেখেন। পরে গ্রামের মানুষের কথা চিন্তা করে এ কারখানা স্থাপন করেন। বর্তমানে কারখানার নকশা করা পাঞ্জাবি ও ফতুয়ার কাপড়গুলো দেশের নামকরা ফ্যাশন হাউসে ভায়া (তৃতীয় ব্যক্তি) হয়ে বিক্রি করেন। ফলে অনেক সময় ন্যায্য দাম পান না। এছাড়া সঠিক সময়ে টাকাও পরিশোধ করে না। যে কারণে কারখানার শ্রমিকদের সময়মতো বেতন দিতে অসুবিধা হয়।

ফ্যাশন হাউসের কর্মকর্তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি বলেন, ‘তারা যদি আমাদের কাছ থেকে সরাসরি কিনতো তাহলে গ্রামের নারীদের জীবনে আরও স্বচ্ছলতা আসতো। এতে আরও বেশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি হতো। অথচ গ্রামীণ নারীদের হাতের কাজ বলে তেমন মূল্য পাওয়া যায় না। তাই এসব কাজের বিনিময় বাড়ানোর দাবি জানাচ্ছি।’

লেখক: উন্নয়নকর্মী, চাঁদপুর।

এসইউ/এমএস

Advertisement