দেশজুড়ে

ডাম্পিং স্টেশন নেই দেড়শ বছরের পৌরসভার

দেড়শ বছরেরও বেশি পুরনো ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভায় চার লাখ মানুষের বসবাস। সাড়ে ১১ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এ পৌরসভায় প্রতিদিন গড়ে ৫০ টন বর্জ্য তৈরি হয়। বিশাল এই বর্জ্য অপসারণে নেই আধুনিক কোনো ব্যবস্থা। স্থায়ী কোনো ডাম্পিং স্টেশন না থাকায় খোলা জায়গায় ডাম্পিং করা হয় এসব বর্জ্য।

Advertisement

শহরের প্রায় অর্ধশত হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের অপরিশোধিত বর্জ্যও খোলা জায়গাতেই ডাম্পিং করার কারণে হুমকির মুখে পরিবেশ ও জীব-বৈচিত্র। তবে পৌর কর্তৃপক্ষ বলছে স্থায়ী ডাম্পিং স্টেশন তৈরির চেষ্টা চলছে। অচিরেই সেই কাজ শুরু হবে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৮৬৮ সালে প্রতিষ্ঠিত ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার বর্জ্য অপসারণের জন্য ৪৫ জন স্টাফ রয়েছেন। এর মধ্যে ৩৯ জন শ্রমিক ও ছয়জন ট্রাকচালক। আর বর্জ্য সংগ্রহের জন্য ট্রাক রয়েছে মাত্র ৮টি। বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য চাহিদা অনুযায়ী পৌরসভার এই জনবল ও ট্রাকের সংখ্যা খুবই অপ্রতুল। প্রতিদিন সকালে পৌরশহরের সকল বাসা-বাড়ির বর্জ্য প্রথমে ভ্যানে করে শহরের পৈরতলা বাস স্ট্যান্ড এলাকার কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের পাশে ডাম্পিং হয়। এরপর সেখান থেকে ট্রাকে করে শহরের ছয়বাড়িয়া এলাকায় সড়কের পাশে পৌরসভার নিজস্ব খোলা জায়গায় ডাম্পিং করা হয়।

এছাড়া প্রতিদিন হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে দেড় থেকে দুই টন বর্জ্যও তৈরি হয়। এসব বর্জ্যও ছয়বাড়িয়া এলাকার সেই খোলা জায়গাতে আলাদাভাবে ডাম্পিং করে পৌর কর্তৃপক্ষ। ইনসিনেরেটর যন্ত্রের মাধ্যমে বিষাক্ত এসব বর্জ্য পরিশোধন করার জন্য পৌরসভার পক্ষ থেকে হাসপাতাল-ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলাকে বারবার নির্দেশনা দিলেও সেটি আমলে নিচ্ছে না সংশ্লিষ্টরা। শহরের কোনো হাসপাতাল-ডায়াগনস্টিক সেন্টারেরই ইনসিনেরেটর যন্ত্র নেই। এর ফলে সড়কের পাশে ডাম্পিং করার কারণে বর্জ্যের উৎকট গন্ধে যেমন স্থানীয়দের দুর্ভোগ পোহাতে হয় তেমনি হাসপাতাল-ডায়াগনস্টিক সেন্টারের অপরিশোধিত বর্জ্য ডাম্পিংয়ের কারণে হুমকির মুখে সেখানকার পরিবেশ ও জীব-বৈচিত্র।

Advertisement

ব্রাহ্মণবাড়িয়া পরিবেশ অধিদফতরের রিসার্চ কর্মকর্তা মো. রুনায়েত আমিন রেজা জাগো নিউজকে জানান, হাসপাতাল-ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বর্জ্যের ব্যাপারে পৌরসভা কর্তৃপক্ষকে আমরা একাধিকবার বলেছি। সিভিল সার্জনও বিষয়টি নিয়ে যথেষ্ঠ তৎপর। আর পৌরসভার সকল বর্জ্য থেকে বায়োগ্যস উৎপন্ন করার জন্য আমাদের একটি চুক্তি হয়েছে। ইতোমধ্যে পরিবেশ অধিদফতরের একটি দল প্রকল্পের জায়গাটি পরিদর্শন করেছেন।

পৌরসভার পূর্বের কোনো মেয়রই বর্জ্য অপসারণের জন্য ডাম্পিং স্টেশন তৈরিতে কার্যকরী কোনো পদক্ষেপ নেননি। এর ফলে দীর্ঘদিন ধরে পুরনো নিয়মেই বর্জ্য ফেলা হচ্ছে সড়কের পাশে। এ নিয়ে স্থানীয়রা অভিযোগ জানিয়ে এলেও নিরুপায় হয়ে খোলা জায়গাতেই বর্জ্য ফেলতে হচ্ছে পৌর কর্তৃপক্ষকে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার মেয়র নায়ার কবির জাগো নিউজকে বলেন, পৌরসভার নানা সীমাবদ্ধতার মধ্যেও নাগরিকদের সর্বোচ্চ সেবা দেয়ার জন্য আমরা চেষ্টা করি। আমি দায়িত্ব নেয়ার পরই স্থায়ী ডাম্পিং স্টেশন তৈরির কাজ হাতে নিয়েছি। ছয়বাড়িয়া এলাকায় পৌরসভার নিজস্ব জায়গায় স্থায়ী ডাম্পিং স্টেশন তৈরির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। অচিরেই সেই স্থায়ী ডাম্পিং স্টেশন তৈরির কাজ শুরু হবে বলে জানান তিনি।

আজিজুল সঞ্চয়/এফএ/জেআইএম

Advertisement