আন্তর্জাতিক

কাশ্মীরে কারফিউ, সাবেক দুই মুখ্যমন্ত্রীকে গৃহবন্দি

কাশ্মীরের চলমান অস্থিরতার মধ্যেই গত রাতে ভারত শাসিত জম্মু-কাশ্মীরের সাবেক দুই মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ এবং মেহবুবা মুফতিকে গৃহবন্দি করা হয়েছে। এ ছাড়া গৃহবন্দি হয়েছেন বিধায়ক সাজ্জাদ লোন। এদিকে সিপিএম নেতা ইউসুফ তারিগামি এবং কংগ্রেস নেতা উসমান মজিদকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

Advertisement

গতকাল রোববার রাজধানী নয়াদিল্লিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ’র দিনভর দফায় দফায় বৈঠক অন্য দিকে পাকিস্তানের হুঁশিয়ারির কারণে উৎকণ্ঠার পারদ চড়ছিল কাশ্মীরে। কিন্তু বোঝা যাচ্ছিল না, কেন্দ্র ঠিক কী পদক্ষেপ করতে চলেছে। দিন পেরিয়ে এ খবর শোনা গেল।

দিনভর দফায় দফায় বৈঠকের পর অবেশেষে গত রাতে কাশ্মীরের অন্যতম প্রধান দুই নেতাকে গৃহবন্দি করলো মোদি সরকার। এ ছাড়া বাম এবং কংগ্রেসের নেতাদেরও গ্রেফতার করা হয়েছে। আর গোটা জম্মু-কাশ্মীরে কারফিউ জারি করা হয়েছে।

কাশ্মীরে যে কিছু একটা ঘটতে যাচ্ছে তার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছিল গত কয়েকদিন ধরেই। গত শনিবার হিন্দু তীর্থযাত্রীদের অমরনাথ যাত্রা বন্ধ করে দিয়ে পর্যটকদের দ্রুত কাশ্মীর ছেড়ে যাওয়ার নির্দেশ দেয় সরকার। এ ছাড়া মোতায়েন করা হয় অতিরিক্ত সেনা। মানুষ আতঙ্কিত হলে গোটা উপত্যকাজুড়ে থমথমে পরিস্থিতি তৈরি হয়।

Advertisement

সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, তারা গোয়েন্দা সূত্রে সম্ভাব্য জঙ্গি হামলা হবে বলে জানতে পেরেছে। তবে অনেকেই বলছেন সংবিধানে কাশ্মীরে বিশেষ অধিকার সম্বলিত ৩৫-ক এবং ৩৭০ ধারা বাতিলের চেষ্টা করছে সরকার। তবে কাশ্মীরের রাজ্যপাল এ অভিযোগ অস্বীকার করলেও কেন্দ্রীয় সরকার এ নিয়ে চুপ ছিল।

রাজনৈতিক ভাষ্যকারদের মতে, সেনা মোতায়েনের পেছনে সরকারের অন্য কোনও উদ্দেশ্য রয়েছে। রোববার সন্ধ্যায় একটি সূত্রে শোনা যায়, জম্মু-কাশ্মীর পুলিশকে অস্ত্র জমা দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। অবশ্য সে কথা স্বীকার করেনি সরকার।

তবে বিভিন্ন সূত্রের বরাতে ভারতীয় গণমাধ্যমের খবরে জানা গেছে, বিতর্কিত এই উপত্যকাটির বেশ কিছু স্পর্শকাতর এলাকাগুলোতে থানা পাহারা দিচ্ছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বা বিএসএফ। এ ছাড়া বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়। ফিরিয়ে আনা হয়েছে যুব ক্রিকেটারদেরও।

শনিবার উত্তেজান চরমে উঠলে রোববার কাশ্মীরের রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা সাবেক মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতির বাড়িতে এক সর্বদলীয় বৈঠকে মিলিত হয়। কাশ্মীরের বিশেষ সাংবিধানিক মর্যাদা খর্ব করার চেষ্টা হলে একযোগে প্রতিরোধের সিদ্ধান্ত নেন তারা।

Advertisement

দুপুরের বৈঠকের পরপরই তাদের কাউকে গ্রেফতার, কাউকে গৃহবন্দি করা হল। মেহবুবা-ওমর দুজনেই টুইট বার্তায় নিজেদের গৃহবন্দি হওয়ার কথা সবাইকে জানিয়েছেন। এই গ্রেফতার গৃহবন্দির সিদ্ধান্ত দিল্লির রোববারের বৈঠকে থেকেই হলো কি-না তা জানা না গেলেও বিষয়টা স্পষ্ট।

রোববার সকালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল এবং স্বরাষ্ট্রসচিবের মধ্যে বৈঠক হয়। কিছুক্ষণ পর ওই বৈঠকে যোগ দেন দুই গোয়েন্দা প্রধান অরবিন্দ প্রধান ও সামন্তকুমার গয়াল। পরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জম্মু-কাশ্মীর বিষয়ক অতিরিক্ত সচিব জ্ঞানেশ কুমারের সঙ্গে বৈঠক করেন অমিত শাহ।

এদিকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীও ভারতকে হুঁশিয়ার করেছেন। নিয়ন্ত্রণরেখায় (এলওসি) কেরন সেক্টরে গত ৩১ জুলাই রাতে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ‘ব্যাট টিম’ হামলা চালিয়েছে বলে ভারত দাবি করেছিল। সেই হামলায় নিহত পাঁচ পাক সেনার মরদেহ সাদা পতাকার মাধ্যমে পাকিস্তানকে নিয়ে যেতে বলেছে ভারত। কিন্তু হামলার দাবি প্রত্যাখ্যান করে ভারতকে হুঁশিয়ার করেছেন পাক প্রধানমন্ত্রী।

এক টু্ইট বার্তায় ইমরান খান বলেন, ‘নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে ভারতের হামলার নিন্দা করছি। এটা মানবাধিকার আইন ও ১৯৮৩ সালের প্রথাগত অস্ত্র ব্যবহার চুক্তির পরিপন্থী। এ নিয়ে জাতিসংঘের সতর্ক হওয়া উচিত। ভারত কোনো ভুল পদক্ষেপ নিলে পাকিস্তান তার উপযুক্ত জবাব দেবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘কাশ্মীর সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধান হলে তবেই দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তি বজায় রাখা সম্ভব। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এখনই বিষয়টিতে মধ্যস্থতা করার সময়। ’পাকিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির সঙ্গে বৈঠকও করেন তিনি। এ ছাড়া পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরের প্রধানমন্ত্রী রাজা ফারুক হায়দার কেন্দ্রীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেহমুদ কুরেইশির সঙ্গে বৈঠক করেন।

আজ সোমবার সকালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাসভবনে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা বৈঠকে বসবে। তার আগে মন্ত্রিসভার নিরাপত্তা বিষয় কমিটির বৈঠকও হতে পারে। সাধারণত কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠক হয় বুধবার কিন্তু সোমবার কাশ্মীরের পরিস্থিতি নিয়ে চলমান উত্তেজনার মধ্যে মন্ত্রিসভার বৈঠকের খবরে জল্পনা জোরালো হয়।

এসএ/পিআর