জাতীয়

ডেঙ্গুর সঙ্গে যুদ্ধ করেই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির প্রস্তুতি সবুজের

নারায়ণগঞ্জ আদালতে দায়িত্ব পালনকালেই শরীরে জ্বর অনুভব করেন পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) সালাহউদ্দিন আহমেদ। সন্ধ্যার দিকে হাড় কাঁপিয়ে জ্বর; সঙ্গে মাথাসহ শরীরে প্রচণ্ড ব্যথা নিয়ে স্থানীয় ভিক্টোরিয়া হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। রাতে অবস্থার আরও অবনতি ঘটে। গত শুক্রবার (২৬ জুলাই) গভীর রাতে পাঠানো হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে।

Advertisement

ঢামেক হাসপাতালে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর জানতে পারেন এডিস মশার কামড়ে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন তিনি। চিকিৎসা চলাকালেই প্লাটিলেট কমতে থাকে। ঢামেকে চিকিৎসা নিয়ে তিনি বলছেন, এখানে চিকিৎসা ভালো, তবে নার্সিংটা ভালো নয়।

ঢামেক হাসপাতালের নতুন ভবনের ষষ্ঠ তলায় চিকিৎসাধীন তিনি। চিকিৎসা চলাকালেই তার রক্তের প্লাটিলেট কমতে থাকে।

এসআই সালাহউদ্দিন বলেন, ‘শনিবার দুপুরে পরীক্ষা করে জানা যায়, প্লাটিলেট কমে হয়েছে ১ লাখ ৩৮ হাজার। পরের দিনের পরীক্ষায় আরও কমে দাঁড়ায় ৭০ হাজারে। সোমবার আবার পরীক্ষা করা হলে তা দেখায় ১ লাখ ২৯ হাজার।’

Advertisement

পুলিশের এ এসআই বলেন, ‘রিপোর্ট নিয়ে সন্দেহ তৈরি হয়। মঙ্গলবার পরীক্ষা করে জানতে পারি আমার প্লাটিলেট মাত্র ১৪ হাজার। রক্ত দেয়ার প্রয়োজন হয়। আত্মীয়দের সঙ্গে কথা বলে রক্ত দেয়া হয়। কিন্তু গতকালকে সকালে আবার জরুরি ভিত্তিতে পরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষায় প্লাটিলেট দেখায় ১৭ হাজার। সন্দেহজনকভাবে গ্রীন রোডের এসআরএল ডায়াগনস্টিক বাংলাদেশে পরীক্ষা করার পর প্লাটিলেট দেখায় মাত্র আট হাজার।’

তিনি বলেন, ‘আমার এখানে এতকিছুর মধ্যেও চিকিৎসা নিয়ে অসন্তুষ্টি নেই কিন্তু নার্সিং খুবই বাজে। আমার একশ’ ডাকে নার্স হয়তো একবার সাড়া দেন। ডাক্তার রাউন্ডে থাকেন, আসেন দেখেন, খোঁজ নেন, তখন নার্স থাকে। এরপর যেন নার্স লাপাত্তা।’

ওয়ার্ডের বাইরে বারান্দায় জায়গা হয়েছে কারওয়ান বাজারের ফল ব্যবসায়ী সুজনের। তিনি বলেন, গত শনিবার জ্বর নিয়ে এখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার জানতে পারি ডেঙ্গু জ্বর হয়েছে। চিকিৎসকের পরামর্শে ভর্তি হই। এরপর থেকে হাসপাতালেই আছি। জ্বর আসছে যাচ্ছে কিন্তু ব্যথা কমছে না। ব্যথায় কাতরাচ্ছি। কিন্তু যেন কোনো ট্রিটমেন্টেই নেই। ডাক্তাররা সেরে যাবে আশ্বস্ত করছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘স্যালাইন চলছে, শেষ হয়ে গেলেও সুই খোলার যেন কেউ নেই। নার্সদের ডেকে পাচ্ছি না।’

Advertisement

সুজনের স্ত্রী রুমা বেগম বলেন, ‘দিন আনি দিন খাই। এর মধ্যে ব্যবসাপাতি বন্ধ। খাওন নিয়েই দুশ্চিন্তা যেখানে, সেখানে ডেঙ্গুজ্বরে স্বামীর সঙ্গে পুরো পরিবারই হাসপাতালে।’

বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কোচিং করতে এসে হাসপাতালে জায়গা হয়েছে সবুজের। একই হাসপাতালে ভর্তি সবুজ মিয়া নামের ওই শিক্ষার্থী বলেন, ‘জুলাইয়ে এইচএসসি পাসের পর বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি যুদ্ধে অংশ নিতে প্রস্তুতির জন্য ফার্মগেটে ফোকাস কোচিংয়ে ভর্তি হই। কিন্তু গত ২৭ জুলাই থেকে আমার জায়গা হয় এই ঢামেক হাসপাতালে।’

তিনি বলেন, ‘পড়াশুনায় সাংঘাতিক ছেদ ঘটেছে। কাল রিলিজ দেবার কথা রয়েছে। কিন্তু কালকে রিলিজ নিতে পারব কিনা ভাবছি। কথা হলো ডেঙ্গুর সঙ্গে যুদ্ধ করেই আমার বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে হবে।’

ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ঢামেকে ভর্তি পুলিশ সদস্য সালাহ উদ্দিন

ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে গতকাল বুধবার (৩১ জুলাই) পর্যন্ত ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৬৫২ জন রোগী। এর মধ্যে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন ১৬৭ জন। তবে গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছের আরও ২২২ রোগী। সব মিলে ৩১ জুলাই পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ৭০৬। তবে গতকাল মারা গেছেন একজন।

আজ বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) বিকেল ৩টায় হাসপাতালের প্রশাসনিক ব্লকের সভাকক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান হাসপাতালের সহকারী পরিচালক (অর্থ ও স্টোর) ডা. আলাউদ্দিন আল আজাদ।

তিনি বলেন, ডেঙ্গু রোগ নিয়ে পেনিক তৈরি হয়েছে। যে কারণে ডেঙ্গুর আতঙ্ক নিয়ে হাসপাতালে আসছে সুস্থ মানুষও।

উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, গতকাল ৪৬৫ জনের রক্ত নিয়ে এনএস-১ পরীক্ষা করার পর মাত্র ১৬ জনের ডেঙ্গু রোগের নমুনা পাওয়া গেছে। তাহলে এখানেই স্পষ্ট যে, ডেঙ্গু আক্রান্তের চেয়ে আতঙ্কই বেশি। পেনিকের কারণে ডেঙ্গু নিয়ে আতঙ্কিত হয়ে মানুষ হাসপাতালে আসছে। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সামগ্রিক সুন্দর ব্যবস্থাপনায় ডেঙ্গুর রোগীদের চিকিৎসা দিচ্ছে। আতঙ্কিত না হওয়ার জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে অনুরোধ জানান তিনি।

ডা. আলাউদ্দিন আল আজাদ বলেন, আমাদের ডেঙ্গু রোগ পরীক্ষায় কিট পর্যাপ্ত রয়েছে। ডেঙ্গু রোগী আসার যে রেশিও তা যদি চলতে থাকে তাহলে আমরা আরও দু-াতিন মাস ডেঙ্গু রোগ পরীক্ষা কার্যক্রম সুন্দরভাবে সম্পন্ন করতে পারব।

ঢামেক হাসপাতালে সব ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসা-সংক্রান্ত তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘গত জুনে হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগ নিয়ে ভর্তি হয়েছেন ১৩৫ রোগী। এর মধ্যে একজন মারা যান। জুলাইয়ে সর্বোচ্চ ২ হাজার ৪৬৪ জন ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেন। এর মধ্যে মারা যান ১০ জন। সব মিলে এখন হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ২ হাজার ৬১৭ জন। মারা যাওয়ার সংখ্যা ১১ জন। বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ৭০৬ জন।’

জেইউ/এসআর/এমকেএইচ