আন্তর্জাতিক

বজ্রপাতে মৃতের সংখ্যা যেভাবে কমিয়েছে উড়িষ্যা

ভারতের উড়িষ্যায় আগাম সতর্কতা জারি করে বজ্রপাতের মৃতের সংখ্যা ৩১ শতাংশ কমানো সম্ভব হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের এক বেসরকারি কোম্পানির সহযোগিতায় নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে এ সতর্ক ব্যবস্থা জারি করা হয়েছে।

Advertisement

উড়িষ্যার বিধানসভায় পেশ করা এক তথ্যে মন্ত্রী সুদাম মারান্ডি জানান, ২০১৭-১৮ সালে যেখানে ৪৬৫ মানুষ বজ্রপাতে মারা গেছে, সেখানে ২০১৮-১৯ সালে মৃত্যু হয়েছে ৩২০ জনের। গত বেশ কয়েক বছরের মধ্যে এবারই নিহতের সংখ্যা চারশর নীচে নামিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে।

প্রতিবছর বজ্রপাতে সব চেয়ে বেশি মৃত্যু হয় মে-সেপ্টেম্বরে। তবে নতুন সতর্কতা ব্যবস্থা চালুর পর হতাহতের সংখ্যা কমাতে সফল হয়েছে উড়িষ্যা রাজ্য প্রশাসন।

উড়িষ্যার বিপর্যয় মোকাবিলা কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিষ্ণুপদ শেঠি বলেন, ‘আমরা যুক্তরাষ্ট্রের আর্থ নেটওয়ার্ক নামের একটি সংস্থার সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছি, যারা কোন এলাকায় বাজ পড়বে, তা প্রায় একঘণ্টা আগে জানিয়ে দিচ্ছে। কন্ট্রোল রুম ওই বার্তা পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই সংশ্লিষ্ট এলাকায় মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীদের কাছে এসএমএসের মাধ্যমে নিরাপদে, কংক্রিটের ছাদের তলায় আশ্রয় নিতে বলা হচ্ছে।’

Advertisement

তিনি জানান, সতর্কবার্তা পাওয়ার সময় থেকে সাধারণ মানুষের কাছে বার্তা পৌঁছতে দুই থেকে তিন মিনিট সময় লাগছে।

বজ্রপাতের আগাম তথ্য পাওয়ার বিষয়ে বিপর্যয় মোকাবিলা কর্তৃপক্ষের জিওগ্রাফিক্যাল ইনফরমেশন সিস্টেমসের প্রকৌশলী ভোলানাথ মিশ্র বলেন, ‘আর্থ নেটওয়ার্ক রাজ্যের বিভিন্ন পয়েন্টে ছয়টি সেন্সর বসিয়েছে। সেই সেন্সর থেকে সংগ্রহ করা তথ্য তাদের দফতরে পৌঁছচ্ছে। মেঘের অবস্থান, আকৃতি, হাওয়ার গতিপ্রকৃতির মতো অনেকগুলি প্যারামিটার খতিয়ে দেখে বিশ্লেষণ করা হচ্ছে মোটামুটি কোন এলাকায় বজ্রপাত হতে পারে। সেই তথ্য আমাদের কন্ট্রোল রুমে আসা মাত্র স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থায় সংশ্লিষ্ট এলাকায় মোবাইল ফোনে এসএমএস দেয়া হচ্ছে। এছাড়া আমরা একটা অ্যাপ বানিয়েছি। অ্যান্ড্রয়েড আর অ্যাপেল ফোনের জন্য তৈরি সেই অ্যাপেও সতর্কবার্তা দেয়া হচ্ছে।’

তাল, সুপারি, নারকেল গাছ কাটবেন না

অন্যদিকে তাল, সুপারি, খেজুর বা নারকেল গাছের মতো উঁচু গাছ যাতে কেটে ফেলা না হয়, সেই প্রচারও চলানো হচ্ছে উড়িশ্যায়। এ ধরনের উঁচু গাছ অনেক সময়েই বজ্রপাত আকৃষ্ট করে সাধারণ মানুষকে বিপদ থেকে রক্ষা করে। গাছ হয়তো জ্বলে যায়, কিন্তু মানুষ আশপাশে থাকা মানুষ বেঁচে যান।

Advertisement

ভোলানাথ মিশ্র জানায়, ‘আমরা ১৪টি ঝুঁকিপ্রবণ এলাকা চিহ্নিত করেছি। সেসব এলাকায় সাইরেনের ব্যবস্থা চালু করেছি। সতর্কতা জারি হলেই সাইরেন বাজতে থাকবে। কেউ যদি মোবাইলের মেসেজ নাও পড়েন বা অ্যাপের অ্যালার্ট নাও দেখতে পারেন, তাহলেও সাইরেন শুনেই সতর্ক হচ্ছেন। এটা পরীক্ষামূলক ব্যবস্থা। সফল হলে গোটা রাজ্যেই এটা চালু হবে। এর সঙ্গে উপকূল অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড়ের সতর্কতা জারির যে ব্যবস্থা সেটাকেও বজ্রপাতের সতর্কতার সঙ্গে জুড়ে দেয়ার কাজ হচ্ছে। সূত্র: বিবিসি বাংলা

এএইচ/এমকেএইচ