খেলাধুলা

আইসিসির চোখেও বিশ্বকাপে ব্যর্থ বাংলাদেশ!

আমিনুল ইসলাম বুলবুলকে লজ্জায় ফেলে দিয়েছেন তার আইসিসির সহকর্মীরা। এই বলে খুনসুটি করছেন, ‘আচ্ছা! আমিনুল তোমার দেশ বিশ্বকাপে এ কেমন করলো?’

Advertisement

বুলবুল একটু বড় গলায় বলার চেষ্টা করলেন, ‘কেন কি আবার করবে? ভালোই তো খেলেছে। তিন তিনটি জয় নিয়ে দেশে ফিরলো, দক্ষিণ আফ্রিকা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ আর আফগানিস্তানকে তো হারিয়েছে। এ আর মন্দ কি! এক আসরে প্রোটিয়া আর ক্যারিবীয়দের হারানো তো আর যে সে ব্যাপার নয়। একই সঙ্গে সাকিব একাই তো বিশ্বকে শাসন করলো। দুটি সেঞ্চুরি, সাথে পাঁচ-পাঁচটি হাফ সেঞ্চুরি ও বল হাতে ১১ উইকেট- দুর্দান্ত অলরাউন্ড পারফরম্যান্স। পুরো বিশ্বকাপে তিন তিনবার ৩০০ প্লাস রান করেছে সেটাই কি বা কম কিসে? কাজেই খারাপটা খেললো কোথায় বলেন তো?’

আমিনুল ইসলাম বুলবুল ভেবেছিলেন, ব্যস! দিয়েছি মুখ বন্ধ করে। আমার আইসিসির কলিগরা বুঝি আর কিছু বলতে পারবে না; কিন্তু বাংলাদেশের প্রথম বিশ্বকাপ অধিনায়ক আর অভিষেক টেস্টে ভারতের বিপক্ষে সেঞ্চুরিয়ান আমিনুল ইসলাম বুলবুলকে তার আইসিসির সহযোগীরা যে এরপর দুর্দান্ত ইয়র্কার ছুড়বেন, তা ঘূর্ণাক্ষরেও টের পাননি বর্তমানে আইসিসিতে কর্মরত এবং এশিয়ান ক্রিকেটের গেম ডেভেলপমেন্ট ম্যানেজার আমিনুল।

তাকে থামিয়ে দিয়ে আইসিসির সহকর্মীরা বলে উঠলো, ‘আমিনুল শোন, তুমি যাই বল না কেন, তোমার দল বিশ্বকাপে মোটেই ভাল খেলেনি। কারণ, দিন শেষে তোমাদের অবস্থান ৮ নম্বর। খালি চোখে অষ্টম। তবে আমরা বলবো তোমরা লাস্ট। সবার পেছনে।’

Advertisement

সে কি বলছো! আমরা তো দুই দলের ওপরে। হ্যাঁ, তা আছো। তবে সেই দুই দল আবার কোন দুই দল জান তো? যারা বাছাইপর্ব খেলে এসেছে। ভুলে গেছো, এবার আট দল র্যাংকিংয়ের এগিয়ে থাকার সুবাদে সরাসরি বিশ্বকাপ খেলেছে। আর বাকি দুই দলের তো বাছাই পর্ব খেলে আসতে হয়েছে। যেহেতু তোমাদের বাছাইপর্ব খেলতে হয়নি। তোমরা সাত নম্বরে ছিলে। তাই সরাসরি বিশ্বকাপ খেলার সুযোগও পেয়েছো। সেই তোমরা এখন যেহেতু আট নম্বর হয়েছো, তাই তোমরা আইসিসির রেটিং ও র্যাংকিং ধরলে ‘অষ্টম।’

ওপরের ব্যাখ্যাগুলো আইসিসির বিভিন্ন পদে কর্মরতদের ব্যাখ্যা। তারা কারা? বুলবুল নাম বলেননি। রোববার লর্ডসে ফাইনালের প্রথম ইনিংস শেষের ব্রেকে লর্ডসের প্রেস বক্সের ঠিক নিচে কথা হচ্ছিল বাংলাদেশের ক্রিকেটের এ অসামান্য প্রতিভাবান ও প্রচন্ড পরিশ্রমি অলরাউন্ডারের সাথে।

তিনি এসেছেন আইসিসির বার্ষিক সাধারণ সভায় যোগ দিতে। ১৫ থেকে ১৮ জুলাই লর্ডসের খুব কাছেই পাঁচ তারকা হোটেল..., হবে আইসিসির এজিএম। এশিয়ান ক্রিকেটের গেম ডেভেলপমেন্ট ম্যানেজার হিসেবে সে বার্ষিক সাধারণ সভায় বুলবুলও উপস্থিত থাকবেন।

এশিয়ান ক্রিকেটের আয় উন্নতি এবং নতুন টেস্ট খেলিয়ে দেশ আফগানিস্তান, আরব আমিরাত, নেপাল, হংকং ও মিয়ানমার, চীনসহ বিভিন্ন উন্নয়নকামি ক্রিকেট শক্তিগুলোর ওপর প্রতিবেদনও দাখিল করবেন বাংলাদেশ জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক।

Advertisement

আইসিসির এজিএমে অংশ নিতে আসা বুলবুল কালকের ফাইনালও দেখলেন। এ প্রতিবেদকের সাথে কথা বলতে বলতেই বুলবুল মাঝে-মধ্যে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন অনেক নামী ক্রিকেট ব্যক্তিত্বের সাথে।

সাবেক অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়ক ও ১৯৯৯ সালে এই লর্ডসে বিশ্বকাপ বিজয়ী অস্ট্রেলিয়ান ক্যাপ্টেন এবং কালকের ম্যাচের বিশেষ অতিথি স্টিভ ওয়াহ ম্যাসেজ পাঠালেন, একটি বিষয়ে। শেন ওয়ার্ন, ডেমিয়েন ফ্লেমিংয়ের মত অসি তারকারা ‘হাই! আমিনুল’ বলে কয়েক মুহূর্ত থামলেন। কয়েক মিনিট কথা বলে তারপর গেলেন নিজ নিজ গন্তব্যে।

সে সব কথার ফাঁকে বুলবুল জানালেন তার নিজের মূল্যায়ন। তারও কথা আরও ভাল খেলা উচিৎ ছিল। অনেক অভিজ্ঞ আর পরিণত দল ছিল এবার বাংলাদেশ। বেশ কজন প্লেয়ার ছিল যারা সত্যিই মেধাবি।

বুলবুলের মূল্যায়ন, দল গঠনে ত্রুটি ছিল। জুন-জুলাইতে ইংলিশ কন্ডিশনে কেমন বোলিং কার্যকর, তা আরও আগেভাগে ঠিক করা উচিৎ ছিল। এছাড়া মাঠে প্রয়োজনীয় ও সঠিক সময় সঠিক কাজগুলো হয়নি। সে ক্ষেত্রে, তার ধারনা গেম প্ল্যান আরও ভাল হলে তা হতো না। আর বাজে ফিল্ডিং ও দুর্বল ক্যাচিংও বেশ ভুগিয়েছে বাংলাদেশকে।

তখনই এসব কথা আলোচনা করলেন বুলবুল। জানালেন, ‘আইসিসি কিন্তু বাংলাদেশের প্রতিটি ম্যাচ ‘পাখির চোখে’ দেখেছে। কারা তারা? তাদের নাম না বললেও বুলবুলের কথা, ‘তারা আমার আশপাশেরই মানুষ। আমার সাথেই আইসিসির গেম ডেভেলপমেন্টসহ অন্য ক্ষেত্রে কাজ করে। বেশ কিছুক্ষণ আমি আমার দেশ ও জাতীয় দলের সাফাই গাইতে চেষ্টা করেও পরের দিকে সতীর্থদের যৌক্তিক ব্যাখ্যার কাছে হার মানতে বাধ্য হই। পরে আমারও মনে হয় সত্যিই তো, আমরা বাছাইপর্ব না খেলে সপ্তম থেকে বিশ্বকাপ খেলতে গিয়ে হয়েছি আট নম্বর। এবারের বিশ্বকাপে বাংলাদেশের পারফরমেন্সের চুলচেরা বিশ্লেষণ করতে গেলে কিন্তু তাই মনে হবে।’

বুলবুল সরাসরি বলেননি, তবে হাব-ভাবে বুঝিয়ে দিয়েছন। তাই ধরেই নেয়া যায় আইসিসিতে বাংলাদেশ জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়কের সহকর্মীদের মতামতটা আসলে আইসিসিরই একরকম জরিপ। এক ধরনের সমীক্ষাও।

এদিকে বিশ্বকাপ কভার করতে এসে বিভিন্ন সময় কথা বলা অনেক নিরপেক্ষ ক্রিকেট বিশেষজ্ঞ, সাংবাদিদের ধারণাও কিন্তু তাই। তাদের মত, ‘যত আবেগ-উচ্ছাস দেখানোই হোক না কেন, কঠিন ও নির্মম সত্য হলো, এবারের বিশ্বকাপে মোটেই ভাল করেনি মাশরাফির দল। শেষ পরিণতি আট নম্বর।’

আগের বার সেরা আট বা কোয়ার্টারফাইনাল খেলা দল এবার ১০ দলে আট নম্বর। যার মধ্যে দুই দল হলো বাছাই খেলে আসা। তার মানে, বাংলাদেশের পারফরমেন্স ও দলগত অর্জন-প্রাপ্তি মোটেই সন্তোষজনক নয়।

বরং দলের ক্রিকেটারদের গড় বয়স, আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার সংখ্যা-অভিজ্ঞতা ও সাম্প্রতিক সময়ের পারফরমেন্সকে মানদন্ড ধরলে অবশ্যই আরও ভাল খেলা উচিৎ ছিল। কাজেই তাদের মত সাফল্যের চেয়ে ব্যর্থতার পাল্লাই ভারি।

এআরবি/আইএইচএস/পিআর