ভরা আষাঢ়েও বৃষ্টি নেই। এ নিয়ে হা-হুতাশের শেষ ছিল না নগরবাসীর। তবে কি ষড়ঋতুর বাংলাদেশ থেকে হারিয়ে যাচ্ছে চেনা বর্ষা? না... সে আশঙ্কা মিথ্যা প্রমাণ করে দিয়ে কিছুটা দেরিতে হলেও নাগরিক জীবনে ফিরে এসেছে সেই বর্ষা। এখন প্রকৃতিতে কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে ‘রিমঝিম’ শব্দ।
Advertisement
চট্টগ্রামে শুক্রবার সকাল থেকে থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। কখনো গুড়ি গুড়ি, কখনো মুষলধারে। বৃষ্টির পানিতে ডুবেছে বন্দরনগরীর নিম্নাঞ্চল। সড়ক পানি-কাদায় একাকার। বিঘ্ন ঘটছে যান চলাচলে। ভোগান্তিতে পড়েছেন স্কুল-কলেজ-অফিসগামীরা।
পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিস জানায়, সক্রিয় মৌসুমী বায়ুর দাপটে দেশজুড়ে বৃষ্টি হচ্ছে। চট্টগ্রামে সে দাপট আরও বেশি। একই কারণে দেশের সমুদ্রবন্দরগুলোকে ৩ নম্বর সতর্কতা সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। পরবর্তী ২০ ঘণ্টায় চট্টগ্রাম বিভাগের কোথাও কোথাও ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে। অতি ভারী বৃষ্টির কারণে বিভাগের পাহাড়ি এলাকায় কোথাও কোথাও ভূমিধসের সম্ভাবনা রয়েছে।
রোববার (৭ জুলাই) দুপুর থেকেই নগরীর হালিশহর, বড়পুল, ছোটপুল, সিডিএ আবাসিক এলাকা, কাপাসগোলা, ওয়াসার মোড় থেকে ষোলশহর ২ নম্বর গেট পর্যন্ত অধিকাংশ এলাকা, মুরাদপুর, বহদ্দারহাট, ডিসি রোড, মিয়াখান নগর, পোড়াভিটাসহ বিভিন্ন এলাকায় পানি জমে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হয়। বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় গত দুই দিনেও এ অবস্থার উল্লেখযোগ্য কোনো উন্নতি হয়নি।
Advertisement
এত কিছুর পরও নগরবাসীর বৃষ্টিবিলাসে একটুও ছেদ পড়েনি। অনেককেই দেখা গেছে বৃষ্টি উপভোগে ছাতা নিয়ে রাস্তায় বেরোতে। তারা বলছেন, দেরিতে হলেও বর্ষা এসেছে এটাই প্রাপ্তির। আষাঢ়-শ্রাবণে বৃষ্টি হবে এটা মেনে নিয়েই আমরা বাঙালি। রিমঝিম এই বৃষ্টি বাঙালি সত্তার অবিচ্ছেদ্য অংশ।
চান্দগাঁও আবাসিকের বাসিন্দা সারওয়ার আলম জাগো নিউজকে বলেন, ‘আষাঢ়-শ্রাবণে অবিরাম বৃষ্টি আমাদের কাছে বলতে গেলে স্মৃতি হয়ে উঠেছিল। গত দুই দিনের বৃষ্টি সেই স্মৃতিকেই জাগিয়ে তুলছে। এ বৃষ্টিতে কিছুটা সমস্যা সবারই হচ্ছে। কিন্তু বৃষ্টি না হওয়াটা আরও বেশি সমস্যার।’
ব্যাংক কর্মকর্তা আবুল হাসেম বলেন, ‘বর্ষা নিয়ে মধুর স্মৃতি নেই এমন বাঙালি খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। তখন আমি অনেক ছোট, ঈদের ছুটি শেষে স্কুল খুলেছে। বাবা নতুন বই-খাতা এনে দিলেন। স্কুল থেকে ফেরার পথে নামল ঝুমবৃষ্টি। বৃষ্টিতে ভিজে বাড়ি ফিরছি। কিন্তু বই-খাতাগুলো এমনভাবে বুকে জড়িয়ে ধরে রেখেছি যেন বৃষ্টির পানিতে না ভেজে। আষাঢ়-শ্রাবণের মুষলধারার বৃষ্টি এখন আর নেই।’
সায়লা আক্তার নামে এক গৃহিণী বলেন, ‘আগে বর্ষায় পানির ঢেউ এসে বাড়ির উঠানে মিশে যেত। আমরা কলাগাছের ভেলা বানিয়ে পানিতে নৌকার মতো করে ভেসে বেড়াতাম এবং সাঁতার কাটতাম। এখন মাঠে দেয়ার পানিও পাওয়া যায় না। গত দুই দিনের বৃষ্টি বড় বেশি নস্টালজিক করে তুলছে। মনে পড়ছে, বৈশাখের বিকেলজুড়ে ঝড়-তুফান। সে বৃষ্টি চলত থেমে থেমে শরৎ শেষ হওয়া পর্যন্ত। এই তিন-চার মাস প্রচুর বৃষ্টিপাত হতো। মাঠে তখন প্রচুর পানি থাকত। ফসলের মাঠ থেকে মানুষ হরেক রকমের মাছ ধরত। তখন বাংলাকে মনে হতো চিরসবুজের দেশ।’
Advertisement
পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ মাজহারুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘প্রকৃতি তার আচরণ বদলেছে। কখনো বর্ষাকাল শুরুর আগে বৃষ্টি হচ্ছে। আবার কখনো বর্ষার পর বৃষ্টি হচ্ছে। আষাঢ়-শ্রাবণের সেই মুষলধারার বৃষ্টি এখন আর নেই। কমে গেছে বৃষ্টির পরিমাণও। যা অনেক ক্ষেত্রে স্বাভাবিকের চেয়ে গড়ে প্রায় ২০-২৫ ভাগ কম।’
‘আশার কথা হলো এবার মৌসুমী বায়ু বাংলাদেশের ওপর দেরিতে হলেও সক্রিয় হয়েছে। তাই আগামী ২৪ ঘণ্টা দেশজুড়ে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা একই থাকবে। এর মধ্যে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হতে পারে। আগামীকাল বুধবার থেকে সারাদেশের কোনো কোনো এলাকায় বৃষ্টিপাত পরিস্থিতির সামান্য পরিবর্তন হতে পারে। এ পর্যন্ত দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৩৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতও রেকর্ড করা হয়েছে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে। শুক্রবার থেকে গত পাঁচদিনে চট্টগ্রামে বৃষ্টির পরিমাণ ২৮৫ মিলিমিটার।
এদিকে ভারী বর্ষণে ভূমিধসের কারণে ক্ষয়ক্ষতি ঠেকাতে জেলা প্রশাসন ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ের পাদদেশ থেকে বাসিন্দাদের সরিয়ে নিচ্ছে। গত দুইদিনে আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে ২৫০ পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড় থেকে পরিবারগুলোকে নিজ উদ্যোগে সরে যেতে করা হচ্ছে মাইকিং। রেড ক্রিসেন্ট নিয়ন্ত্রণকক্ষ চালু করেছে। মেডিকেল টিম গঠন করেছে জেলা সিভিল সার্জন অফিস।
আবু আজাদ/বিএ/এমকেএইচ