আইন-আদালত

ডিআইজি মিজানের জামিন আবেদনে লুকোচুরি

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা মামলায় হাইকোর্টে আগাম জামিন চেয়েছেন সাময়িক বরখাস্ত হওয়া পুলিশের বিতর্কিত উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মিজানুর রহমান। জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে দুদকের মামলায় হাইকোর্টে আগাম জামিন চেয়ে আবেদন করেন মিজানুর রহমান।

Advertisement

এ তথ্য জাগো নিউজকে নিশ্চিত করে রোববার (৩০ জুন) দুদকের আইনজীবী খুরশিদ আলম খান বলেন, সম্ভবত সোমবার (১ জুলাই) ডিআইজি মিজানের আগাম জামিনের ওপর শুনানি হতে পারে।

রোববার প্রথমে হাইকোর্টের বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে জামিন আবেদনটি জমা দেয়া হয়। এরপর বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কেএম হাফিজুল আলমের সমন্বয়ে গঠিত অপর একটি বেঞ্চে জামিন আবেদন করেন তিনি।

আরও পড়ুন : ডিআইজি মিজান কি দুদকের চেয়েও শক্তিশালী : আপিল বিভাগ

Advertisement

দুই জামিন আবেদনের বিষয়ে দুদকের আইনজীবী বলেন, বিষয়টি প্রতারণা না বলে লুকোচুরির আশ্রয় নেয়া বলা যেতে পারে।

ডিআইজি মিজানের আইনজীবী আসাদুজ্জামান খান জানান, আগাম জামিন পেলে আবেদনকারী (মিজান) দেশ ত্যাগ করবেন না, আবেদনে এমন যুক্তি তুলে ধরা হয়েছে।

মিজানুর রহমান ঢাকা মহানগর পুলিশে (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। বিয়ে গোপন করতে নিজের ক্ষমতার অপব্যবহার করে স্ত্রীকে গ্রেফতার করানোর অভিযোগ উঠেছিল তার বিরুদ্ধে। এ ছাড়া এক সংবাদ পাঠিকাকে প্রাণনাশের হুমকি ও উত্ত্যক্ত করার অভিযোগে মিজানুরের বিরুদ্ধে বিমানবন্দর থানায় সাধারণ ডায়েরিও (জিডি) হয়। নারী নির্যাতনের অভিযোগে গত বছরের জানুয়ারির শুরুর দিকে তাকে প্রত্যাহার করে পুলিশ সদর দফতরে সংযুক্ত করা হয়। দুদক কর্মকর্তার সঙ্গে ঘুষ লেনদেনের বিষয়টি সামনে আসার পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মিজানকে সাময়িক বরখাস্তের একটি প্রস্তাব রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়। পরে ২৫ জুন মিজানুর রহমানকে সাময়িক বরখাস্ত করার প্রস্তাবে অনুমোদন দেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ।

অন্যদিকে মিজানের ঘুষ লেনদেনের বিষয়টি খতিয়ে দেখতে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করেছে পুলিশ প্রশাসন। কমিটির প্রতিবেদন পাওয়ার পর তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে প্রশাসন। যদিও নারী নির্যাতন, ঘুষ প্রদান, অবৈধ সম্পদ অর্জনসহ নানা অপকর্মের অভিযোগে দুই বছর ধরে মিজানুরের নাম আলোচনায় এলেও তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।

Advertisement

আরও পড়ুন: আইনের ফাঁক দিয়ে পালাতে পারবেন না ডিআইজি মিজান : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

২৪ জুন ৩ কোটি ৭ লাখ টাকার সম্পদের তথ্য গোপন ও ৩ কোটি ২৮ লাখ টাকা অবৈধভাবে অর্জনের অভিযোগে মিজানুরের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। মামলায় মিজানুর রহমান, তার স্ত্রী সোহেলিয়া আনার রত্না, ছোট ভাই মাহবুবুর রহমান ও ভাগনে পুলিশের কোতোয়ালি থানার এসআই মো. মাহমুদুল হাসানকে আসামি করা হয়।

আইন বহির্ভূতভাবে হাইকোর্টে মিজানের পৃথক দুই আবেদনের বিষয়ে ২৭নং বেঞ্চের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একে এম আমিন উদ্দিন মানিক জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমি আজ অ্যাটর্নি জেনারেল অফিস থেকে একটি নোটিশ পেয়েছি। সেখানে আমার কোর্টে (বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কেএম হাফিজুল আলমের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ) আবেদনটির শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে।

তবে পরে জানতে পেরেছি, আমাদের কোর্ট ছাড়াও ডিআইজি মিজান (১৯ নং) হাইকোর্টের বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি এসএম কুদ্দুস জামানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে একই আবেদন করেছেন। পৃথক দুই কোর্টের জামিন আবেদনের নম্বর (১২৯০ এবং ১২৯৮) বলেও জানান আইনজীবী মানিক।

তিনি আরও বলেন, আজ অ্যাটর্নি অফিসের মাধ্যমে আমাদের কোর্টকে (২৭ নম্বর বেঞ্চ) একটি নোটিশ দেয়া হয়। ওই নোটিশে ডিআইজি মিজানের জামিন আবেদনে দাখিলের বিষয়টি উল্লেখ রয়েছে। অবৈধ সম্পদ অর্জনের তথ্য গোপনের মামলায় তিনি ওই জামিন আবেদন করেন। ডিআইজি মিজান একজন আলোচিত ব্যক্তি, তার বিরুদ্ধে ঘুষ দেয়ার বিষয়ে স্বীকারোক্তিও রয়েছে।

আরও পড়ুন : অবশেষে বরখাস্ত ডিআইজি মিজান

একই সঙ্গে দুই ভিন্ন কোর্টে জামিন আবেদন করার বিধান রয়েছে কিনা জানতে চাইলে আমিন উদ্দিন মানিক জানান, হাইকোর্টের রুলস অনুসারে একই সময়ে দুই কোর্টে একই আবেদন করার কোনো সুযোগ নেই। যে কোনো ব্যক্তিকে আদালতের কাছে সরল মনে আসতে হয়। তবে একই সঙ্গে দুই কোর্টে একই আবেদন করাটা প্রতারণা বলে ধরা যায়।

এ বিষয়ে দুদকের আইনজীবী মো. খুরশিদ আলম খান বলেন, ডিআইজি মিজানের জামিন আবেদন অনেকটা স্পর্শকাতর। রোববার সকালে ১৯ নম্বর কোর্টে যখন তার জামিন আবেদন দাখিল করা হয়, তখন আমরা সেখানে ছিলাম। পরে আদালত কাল বা পরশু শুনানি করতে পারেন বলে জানানো হয়। তবে তার জামিনের আগে দুদকের বক্তব্য শুনতে চান বলেও আদালত আমাকে জানিয়েছিল। অর্থাৎ আদালত বলেছেন, ‘ডিআইজি মিজানের জামিন আবেদনের বিষয়ে দুদকের আইনজীবীর বক্তব্য না শুনে কোনো আদেশ দেব না।’

অন্যদিকে একই দিনে জামিন আবেদনের শুধু ওপরের পৃষ্ঠা পরিবর্তন করার আরেকটি কোর্টে আবেদন দাখিলের প্রমাণ পান দুদক আইনজীবী।

এ বিষয়ে তিনি জাগো নিউজকে বলেন, রোববার প্রথমে হাইকোর্টের ১৯ নম্বর কোর্টে একই এন্ট্রি নম্বর দিয়ে নোটিশ পরিবর্তন করে ডিআইজি মিজান ২৭ নম্বর কোর্টে আবার আবেদন করেন। এরপর বিষয়টি আমরা অবহিত হলে দুটি ভিন্ন কোর্টে আবেদন করার সত্যতা পাই।

আবেদনের শুনানির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, নিয়ম হলো একটি কোর্টে শুনানির জন্য দাখিল করা। এ বিষয়ে আমরা আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করবো যে, তারা এমনটা করতে পারে না, এসব আদালতের প্রচলিত নিয়মের বাইরে।

আরও পড়ুন : ডিআইজি মিজানের ‘স্বর্ণকমল’ বাড়ি

হাইকোর্টে জামিন আবেদনের প্রচলিত নিয়ম কী বা দুই বেঞ্চে একই আবেদন করা যায় কি-না এ বিষয়ে দুদক আইনজীবী জানান, কেউ এভাবে দুই কোর্টে একই আবেদন করতে পারেন না। একই বিষয়ে একটা কোর্টে আবেদন করতে হয়। হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত ভবন (এনেক্স) ১৯নং ও ২৭নং এ মোশন (আবেদন) ফাইল করেছেন। তার আইনজীবী যে কোর্টেই যাক না কেন আমরা তার আবেদনের অনিয়ম হয়েছে আদালতে তা উপস্থাপন করবো। এ ছাড়া ডিআইজি মিজানের জামিন ঠেকাতে দুদক সর্বদা প্রস্তুত।

আমিন উদ্দিন মানিক বলেন, অন্য এক মামলায় তথ্য গোপন করে জামিন চাওয়ার ঘটনায় আদালত মামলার তদবিরকারককে (অ্যাফিডেভিটকারী) জরিমানা করেছেন তিন লাখ টাকা। ডিআইজি মিজানও একই আবেদন দুই আদালতে দাখিলের বিষয়টিও আমরা আদালতের নজরে আনবো।

এফএইচ/এএইচ/এমকেএইচ