গণমাধ্যম

দুদক গেটে সাংবাদিকদের অবস্থান, বৃহত্তর আন্দোলনের হুমকি

বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ক্র্যাব) দুই সাংবাদিককে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আপত্তিকর চিঠির প্রতিবাদে দুদক কার্যালয়ের প্রধান গেটের সামনে প্রতিবাদ ও মানববন্ধন করেছেন সাংবাদিকরা। অবিলম্বে ওই চিঠি প্রত্যাহার না করলে সব সাংবাদিক সংগঠন এক হয়ে বৃহত্তর আন্দোলনে যাওয়ার ঘোষণা দেয়া হয়েছে।

Advertisement

বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদক কার্যালয়ের প্রধান গেটের সামনে প্রতিবাদ ও মানববন্ধন করেন ক্র্যাবের সদস্য ও অন্যান্য সংঠনের সাংবাদিকরা। ক্র্যাব আয়োজিত এ মানববন্ধনটি চলে প্রায় ১ ঘণ্টা।

এ সময় ক্র্যাবের সভাপতি আবুল খায়ের বলেন, যারা বেশি অনিয়ম করে তাদের মাথা ঠিক থাকে না। দুদক কর্মকর্তাদের সেই অবস্থা হয়েছে। তারা চিঠি দেয়ার ভদ্রতা জানে না। এইভাবে চিঠি দেয়ার উদ্দেশ্য কী, দুদক চেয়ারম্যানকে তার জবাব দিতে হবে। চেয়ারম্যানকে বলতে হবে এই তদন্তকারী কর্মকর্তা কী উদ্দেশ্যে এ ধরনের চিঠি ইস্যু করেছে। আমাদের দাবি, এই কর্মকর্তাকে দুদক থেকে সরিয়ে দিতে হবে এবং অবিলম্বে এই চিঠি প্রত্যাহার করতে হবে। অন্যথায় সাংবাদিক সংগঠনগুলোর সঙ্গে বসে আমরা বৃহত্তর কর্মসূচির প্রস্তুতি নেব।

আরও পড়ুন>> দুদককে ক্ষমা চাইতে হবে, সাংবাদিকদের বিক্ষোভ

Advertisement

ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সভাপতি ইলিয়াস হোসেন বলেন, আজকে দুদকের যে সুনাম তা একমাত্র গণমাধ্যমের কারণে। এক সময় যখন দুর্নীতি দমন ব্যুরো ছিল, তখন এই প্রতিষ্ঠানটি পাপাচারে পূর্ণ ছিল। পাপ মোচন করতে তাদের নাম পরিবর্তন করা হয়েছে। এরপর একমাত্র আমাদের পজিটিভ সাংবাদিকতার কারণেই দুদকের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে। কিন্তু এই চিঠি আজকে আবারো প্রমাণ করলো যে, কয়লা ধুলে ময়লা যায় না। এই চিঠি অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে।

ডিআরইউ'র সাবেক সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, দুদক তাদের বিরুদ্ধে কাজ করে যারা দুর্নীতি করে, নাকি যারা দুর্নীতির সংবাদ প্রকাশ করে? সাংবাদিকদের জন্য অত্যন্ত অসম্মানজনক ও আপত্তিকর এই চিঠি অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে। পাশাপাশি দুদক চেয়ারম্যানকে আমি বলতে চাই, আপনারা আগে নিজের ঘর সামলান। যদি এই চিঠি প্রত্যাহার না করেন শুধু একজন পরিচালক নয়, ভবিষ্যতে আরও পরিচালকের মুখোশ উন্মোচন হবে।

মানববন্ধনের এক পর্যায়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে আসেন দুদকের উপ-পরিচালক (জনসংযোগ) প্রণব কুমার ভট্টাচার্য্য। তিনি বলেন, এই চিঠিটি মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে গেছে। ফলে এই চিঠির কোনো কার্যকারিতা থাকবে না। এটা নিয়ে আপনাদের উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই।

আরও পড়ুন>> সম্পদে স্বামীকেও পেছনে ফেলেছেন সওজ কর্মকর্তার স্ত্রী!

Advertisement

তার বক্তব্যের প্রেক্ষিতে ক্র্যাব সভাপতি বলেন, আমাদের কথা পরিষ্কার। এই আপত্তিকর চিঠি প্রত্যাহার করতে হবে। এর কার্যকারিতা স্থগিত করতে হবে। দুদক কর্মকর্তারা বলেছেন যে, এই চিঠির মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে গেছে। এটি কোনোভাবেই সম্ভব নয়। সরকারি চিঠি কখনো মেয়াদোত্তীর্ণ হয় না। আপনারা আইন জানেন, আমরা ক্রাইম রিপোর্টাররাও আইন জানি। তাই অবিলম্বে এই চিঠি প্রত্যাহার করুন।

সম্প্রতি পুলিশের ডিআইজি মিজানুর রহমান ও দুদকের তদন্ত কর্মকর্তা বাছিরের ঘুষ কেলেঙ্কারি নিয়ে সংবাদ প্রচার ও প্রকাশের জেরে ক্র্যাবের সাধারণ সম্পাদক দীপু সারোয়ার এবং প্রশিক্ষণ ও তথ্য প্রযুক্তি সম্পাদক ইমরান হোসেন সুমনকে দুদকে হাজির হওয়ার নোটিশ দেয়া হয়। এছাড়া নোটিশে দীপু সারওয়ারকে কার্যালয়ে না গেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়। এর প্রতিবাদেই এই মানববন্ধন।

এর আগে মঙ্গলবার (২৫ জুন) দুদকের পরিচালক ও অনুসন্ধান দলের প্রধান শেখ মো. ফানাফিল্যা স্বাক্ষরিত পৃথক চিঠিতে তাদের বুধবার সকাল সাড়ে ১০টায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে হাজির হতে বলা হয়।

দুদকের দুটি চিঠিতেই অভিযোগের সংক্ষিপ্ত বিবরণী হিসেবে উল্লেখ করা হয়, দুদকের পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছিরের বিরুদ্ধে ডিআইজি মিজানুর রহমানের কাছ থেকে ৪০ লাখ টাকা ঘুষ নেয়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে আপনার সাক্ষ্যগ্রহণ ও শ্রবণ একান্ত প্রয়োজন।

এদিকে দুদকের দুর্নীতি নিয়ে প্রতিবেদন করার কারণেই দুই সাংবাদিককে নোটিশ দিয়ে পক্ষান্তরে রাষ্ট্রীয় সংস্থাটি ‘হুমকি’ দিচ্ছে বলে অভিযোগ করছেন গণমাধ্যকর্মীরা। নোটিশের বিষয়টি প্রকাশ পাওয়ার পরপরই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া শুরু হয়।

এআর/এমএসএইচ/আরআইপি